ফার্স্ট স্টপ

ফার্স্ট স্টপ : লিঙ্গে পা

সাম্প্রতিক মানে গতকালই একটা ঘটনা ঘটেছে। সেটি নিয়ে যদি আজকের শুরুর পাতায় কিছুই না বলি তবে নিজের কাছে নিজে শান্ত হতে পারবো না। ঘটনাটি একটি ছবি নিয়ে। সেখানে একজন মানুষ মডেলিং করছে। অভিনয়ের বিষয় কালী। সে কী করেছে? কালী সাজতে গিয়ে ল্যাংটো হয়ে কালি মেখে কালী হয়েছে। তার শিল্পবোধ, তার রুচি তার কাছে। এই অবধি ঠিক ছিলো। কিন্তু তালগোল পেকে গেল শিবকে নিয়ে। ব্যাচারা সাথে পাঁচে থাকে না তাকে নিয়েই এবার ঝক্কি। মডেলটি কালী হয়ে শিবের বুকে পা তুলতে গিয়ে একটা গোটা শিবলিঙ্গের মাথায় পা তুলে দিয়েছে। তাই নিয়ে ফেসবুক তোলপাড়। এরই মধ্যে মডেল যিনি তিনি লাইভে এসে কিছু বললেন। সেগুলোর তাৎক্ষণিক যে উত্তর আমি দিয়েছিলাম সেটিই আজকের ফার্স্টপেজের বিষয়।

প্রথমে আসি লাইভে এসে মডেলটি কী বললেন। তিনি বললেন, শিবলিঙ্গ গোমুত্র সহ দুধ ও অন্যান্য বিষয় দিয়ে মন্ত্রপাঠ করে অভিষেক করে তবেই প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়। তিনি আরও বললেন কুমোরপাড়ার কথা। সেখানে মাটি পা দিয়ে ডলা হয়। বুঝুন কাণ্ড! তারপর বললেন তিনি রামকৃষ্ণ মঠের দীক্ষিত, ঠাকুর আর মা সারদা ছাড়া কালী শিব ওসব মানেন না। বেশ করেন। গুরুভক্তির উপর কী বা আছে। তাই বলে উনি গুরুর ইষ্টদেবীকে নিয়ে ছেলেখেলা খেলবেন! আর শিল্পের দোহাই দিয়ে ধর্মকে ছোট করবেন! প্রশ্ন উঠতে পারে ধর্মকে ছোট করা যায়? আমিও বলবো যায় না, তবে বিধর্মীদের কাছে নিজের ধর্মের রূপটা বিকৃত হয়। গতকাল প্রথম আমার পুত্র ব্রহ্মানন্দ নিজে ওই বিষয়ে সরব হয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আমায় জানায়। তারপর জানায় বিরজা। আর তারপর একে একে অনেকেই জানতে চান আমার মতামত। তারা জানেন গতকালই আমি ওই মডেলের পোস্টে গিয়ে কিছু উপদেশ যেচেই দিয়ে এসেছি। গতকালের আমার তাকে দেওয়া উত্তর দিয়েই আজকের বিষয়ে ইতি টানবো। আমি কেবল আমার অনুভব বলতে পারি। অনুভব জাগিয়ে দিতে তো পারি না।

যাই হোক তাকে দেওয়া আমার উত্তরটা এরকম ছিলো—

” শিব অভিষেকপ্রিয়। তাই বলে অভিষেকাদি করে মন্ত্রপাঠ করলে তবেই যে শিবের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয় এমনটা নয়। লিঙ্গ মাত্রই পুজোর যোগ্য। এবং যে কোনও স্থানে নির্বাণরূপ লিঙ্গ দর্শন মাত্রই স্তব, স্তুতি, বা প্রণামের বিধান আছে।

কুমোরটুলিতে পা দিয়ে মাটি মেখে ঠাকুর বানানো হয় ঠিক। তবে সেই ঠাকুর যখন মণ্ডপে চলে যায় তখন সেই মণ্ডপে গিয়ে সেই কুমোরও হাত জোড় করে প্রণাম করে। এটাই আচার।

শিল্পের বিষয়ে আপনার সঙ্গে আমিও একমত। শিল্পী আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে নিজের শিল্পে প্রাণ দান করেন। আমি সেই শিল্পরূপ কালীকে যেই প্রণাম করতে গেছি দেখি তার অমন জায়গায় পা। যে জায়গা যা তা তো নয়, শিল্পীরই তৈরি করা শিল্পসত্তায় প্রতিষ্ঠিত এক শিবলিঙ্গ সে।

কালীর নীচে যিনি থাকেন তিনি শবরূপ শিব। আর শিবলিঙ্গ হলো নির্বাণরূপ। দুজনের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। কালী নিজেও কখনও এমন কাজ করতেন না।

সবশেষে এই দিয়েই শেষ করবো যে সত্যিই তো এসব যাদের পছন্দ নয় তারা এভয়েড করলেই মিটে যায়। সত্যিই যায় কি? আমাদের মতো ধর্মভীরু মানুষদের যে ও দেখাও পাপ! এতোগুলো মানুষের দর্শনজনিত যে অপরাধ ঘটলো তার দায় কে নেবে? ওই যে ঠাকুর বলতেন, “দায়ের সমান বোঝা নেই! “

জগদীশ্বরী সারদামণি সবার মঙ্গল করুন।”

শাল্যদানী

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।