সাদা কালো চৌকো পাশাপাশি। যাকে বলে চক মিলানো। ইংরেজি এল এর মতো নকশায় তৈরি। সিঁড়ি দিয়ে উঠে একটা সরলরেখা, তার পাশে পাশে ঘর। আবার তার ডান দিকে একেবারে জ্যামিতিক সমকোণে আরেকটা সরলরেখা। তার পাশে দাদু দিদার লম্বা ঘর।
বারান্দার মাঝখানের জায়গাটা ফাঁকা। তাই এদিক থেকে দেখলে অন্যদিকে রান্নাঘর দেখা যায়।
দাদু দিদার ঘরের পরে দুই ধাপ সিঁড়ি দিয়ে নেমে স্নান ঘর, বাথরুম। সামনে ছোট্ট খাবার জায়গায় টেবিল পাতা। পাশে ছোট শোবার ঘর। পাঁচিলের পাশেই বাঙুর হাসপাতাল। বারান্দার এ প্রান্তে এলে হাসপাতালের ভেতরটাই দেখা যায়।
মোদ্দা কথা বারান্দার ভারি বাহার।
নতুন নাতবউ দাদুর পিছনে লাগে।
কি রকম বাড়ি করেছ দাদু। ঘর কম। ঘরে জায়গা কম, তার থেকে বারান্দায় জায়গা বেশি। ধুত, এইটা কোন প্ল্যান হোল?
দাদু হো হো করে হেসে নেন খানিক।
আরে, বোঝো ব্যাপারটা। এতো গুলো বাচ্চা আমার, এদের বৌ ছেলেপুলে কুটুম, সব আসবে, বসবে, এক সাথে হইহই করবে, তবে ত, তোমার দিদার আনন্দ। নইলে চলত?
নতুন বউ বোঝে, এই দম্পতির লম্বা দাম্পত্যজীবনে খুব জোরালো আকর্ষণ আর ভালবাসার একটা গঁদের আঠা এই সংসারটিকে এখনো একসাথে ধরে রেখেছে। সেটা বাইরে থেকে দেখা যায় না হয়ত।
কিন্তু এই বারান্দার সাদা কালো নকশায় সেইটাই ফুটে আছে।
সত্যিই ত, বাড়িতে বিয়ে। বৌয়ের সিংহাসন, বারান্দায়। পাশে সারি সারি বসার জায়গায়, অন্তত পঁচিশ তিরিশ জন আমন্ত্রিত ত বারান্দাতেই বসে।
আগে মাটিতে পাত পেতে খাওয়া। বাংলা মতে। বাড়ির আত্মীয়রা। পরে ডেকোরেটর টেবিল পেতে দিয়ে, পর পর ব্যাচে।
এই ভাবেই অন্নপ্রাশন, পৈতে, জন্মদিন, সাধ, কত অনুষ্ঠান।
আর এমনি দিনে?
সকাল থেকে বৌদের গজল্লা, বাজারের হিসেব।
একটু পরে দাদুর দাড়ি কাটা, পেপার নিয়ে বসা। বেলা বাড়লে দিদা এসে চেয়ারে।
চায়ের কাপ হাতে বাড়ির ছেলে মেয়েরা।
দুপুরে খাবার পর, বিশেষ করে ছুটির দিনে দুই মূর্তি।
একজন স্কার্ট, টপ বেশির ভাগ সময়। এত্ত চুলের বোঝা একটা টপ নটে তোলা, যেটা থেকে থেকে এক দিকে টাল খেয়ে ফস করে নেবে যাচ্ছে, এবং চুলের মালিক ঠোঁট এবং নখ খেতে খেতে আবার তাকে ঠিকঠাক উপরে পেঁচিয়ে আটক করার চেষ্টায়।
আরেকজন ছয় ফুট, কিন্তু কুঁজো হয়ে পাঁচ ফুটিয়া হবার চেষ্টায়। খালি গা। ঢোলা পাজামা। গিঁটটা প্রায় বুকের কাছে। মাঝে মাঝেই টেনে পাজামাটা আরও ওপরে তোলার চেষ্টা চলছে।
একজন পুব থেকে পশ্চিমে হাঁটে ত অন্যজন পশ্চিম থেকে পুবে।
এই হন হন করে পায়চারি করতে করতে এঁরা পৃথিবীর কি কি গূঢ় তত্ত্বের চিন্তা করেন কেউ জানে না, কিন্তু পায়চারিটা লাগাতার চলে।
বাড়ির সামনের মানে রাস্তার দিকেও একটা বারান্দা আছে। দুই ঘরের পিছনের দিক সেটা।
দাদু দিদার ঘরের লাগোয়া ও একফালি বারান্দা আছে বটে।
এই গুলো ঘরের বাসিন্দাদের টুকটাক জিনিসপত্র রাখার কাজে লাগে। বা দাঁড়িয়ে রাস্তা দেখতে হলে।
বর্ষাকালে ভিজে ছাতা মেলা হয় সামনের বারান্দায়।
নতুন বউ নিচের দোকানে যাবে।
পায়চারিতে ব্যস্ত পুচকে ননদকে সিঁড়ি থেকে ডেকে বলে, শোন শোন, ছাতিটা নিই নি দিবি একটু ? দেখ না, সামনের বারান্দায় মেলা…
গম্ভীরমুখে চিন্তার জগৎ থেকে নেমে এসে পায়চারিবিদ বলে,
হ্যাঁ, কি??
হাতি, বৌমণি ? হাতি?
কোথায়? কখন দেখলে ?
আররে!!! হাতি কোথায় পাচ্ছিস? আমি কি করব তোকে নিয়ে!
উপরে উঠে আসে বৌমা।
দু জনের হেসে হেসে গড়িয়ে পেটে ব্যথা।
সেই থেকে, একটা গভীর রহস্য রয়ে গেল পেটেন্ট নেওয়া।
মনে আছে ত? সেই যে?
হাতি?