।। ত্রিতাপহারিণী ২০২০।। T3 শারদ সংখ্যায় RJ নীলাঞ্জন

অমিতাভ কে স্ক্রীনে দেখলে সব ভুলে যাই, ছেলেবেলা থেকে…জুম্মা চুম্মা দে দে, ভিলেনকে মার…মদের দোকানের সমস্যা, চার দিকে হাতে রড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গুন্ডা, মেরে পাট পাট করে দিচ্ছে…আমি জানি, দুখী মায়ের সমস্যা মেটাতে, মৃত বাবাকে একা দাহ করতে নিয়ে যেতে, একটাই নাম…বিজয় দীনানাথ চৌহান…পর্দাজুড়ে শাহেনশা…বিজয়…
আমাদের বিজয়, মোটা, ফর্সা ভিতু…ছেলেবেলায় বাঁদরের থাপ্পড় খেয়ে আমার সামনে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলো,”নিলু যাস না, যাস না”…কি দরকার ছিলো বিজয়ের? বেশ তো আমি যেতাম,আমিও থাপ্পড় খেতাম…কিন্তু ঐ, বোকা একটা ভোলাভালা ফুল…
বিজয় হাত ঘুরিয়ে বোলিং ভালো পারে না, বিজয় ফিজিক্সে কাঁচা, বিজয়ের কথায় গ্রামের টান…কিন্তু বিজয় আমাকে ভালোবাসে…বিজয় ক্লাসে কথা বললে আমার নাম বলে দেয় না, আমি প্রাইজ পেলে কবিতা বললে বিজয় হাততালি দেয়…ওই যে বললুম, বিজয় ইমোশানাল ফুল…
দেখা হলে, বিজয় জড়িয়ে ধরে, ওর গায়ে সারাদিন কাজের গন্ধ…কাঁধের কাছটা ধরে বুকের কাছে টেনে সবার সাথে আলাপ করায়, আরে বোকা আমি ভালো রেজাল্ট করেছি তোর কি, ও বোকার মত সবাইকে দেখায়…এই দ্যাখো আমার বন্ধু অমুক, আমার বন্ধু তমুক…
সিনেমার বিজয়ের সাথে সামনের বিজয়ের তফাত অনেক…ওটা উইনার, এটা লুজার…ফুল…
তারপর অনেক সংবাদ আসে, কিছু সময় ভেসে যায়…চেনা শহরের রং বদলায়, এক আকাশ ঢাকা পুরোনো মফস্বলে কত নতুন মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যায় বিজয়…হারাবেই তো…ও কি অমিতাভ নাকি, আরে আমিতাভ লম্বা, ছ ফিট দুই, বিজয় বেঁটে, ম্যাচিং না করা গেঞ্জির সাথে সানগ্লাস পরে বোকা…ওরা ফিরে আসে নাকি…আসে না…সবাই সুপারম্যান হয় না…
তার পর কোনো এক মোড়ে দ্যাখা হয়…আমার মাথায় হাজারো সমস্যা…প্রমোশান, এ এম আই, টাকা ইনকাম…বিজয়ের প্রোফাইলে শাহরুখের ছবি, সাথে একমুখ হাসি,”তুই কত্তো বড় হয়ে গেছিস”… আ মোলো যা, নিজেকে দ্যাখ…আমার কত্ত সমস্যা জানিস, বাবার বয়েস, পেট্রোলের দাম, মেয়ের স্কুলে ভর্তি…
বিজয় মিটিমিটি হাসে…
তার পর বিজয় যেনো বাতাস হয়ে, কানে কানে বলে যায়, লাং ক্যান্সার…ফার্স্ট স্টেজ…উতরে গেছি…আসলে মেয়েটার বয়েস দুই…ওর কথা ভেবেই…
ওর সাইকেল নিয়ে চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে দেখি দিকশূন্যপুর…
আমরা ই এম আই এর জন্যে লড়েছি
টাকার জন্যে লড়েছি, প্রমোশানের জন্য জনপ্রিয়তার জন্য, একটু জমি, বালিশ এমনকি পরকীয়ার জন্যেও লড়েছি…আর বিজয় আমাদের সবার সেরা…ও জিতেছে…সবসময়
বিজয় লড়েছে…জীবনের জন্য, দুটো মুহুর্তের জন্য…আমাদের ধাক্কা মেরে, সেই ছেলেবেলার বাঁদরের হাত থেকে বাঁচানোর মতো করে সরিয়ে বলেছে, বেঁচে নাও বন্ধু, এই মুহুর্তটাই জীবন…আর আমরা ভেবে চলেছি, সে নিজে ফুল হয়ে আমাদের জিতিয়ে চলেছে নিরন্তর…,
বিজয়রা সবসময় জিতে যায়…সিনেমাতেও…বাস্তবেও…কেউ হাততালি জেতে, কেউ জেতে জীবন…
ভুল হয়েছিল আমাদের, আমরা এংরি ইয়ং ম্যান কে খুঁজছিলাম…দেখিইনি কখন বিজয় দু হাত ছড়িয়ে বিজয়Srk হয়ে বলছে, জিও খুশ রাহো মুস্কুরাও, ক্যায়া পতা কাল হো না হো…
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।