কর্ণফুলির গল্প বলায় রবীন জাকারিয়া

আমার মা

আমি মোঃ হাসানুজ্জান৷ সকলে আমাকে হাসান নামেই চেনে৷ আমি একটি এমপিওভূক্ত কলেজের গণিতের একজন প্রভাষক৷ একজন সাধারন চাকুরীজীবি মানুষ৷ বর্তমানে এ বেতনে সংসার চালানো দায়৷ আমার স্ত্রী জয়া৷ ইংরেজিতে মাস্টার্স৷ ওকে উৎসাহ দিয়েছিলাম চাকরি করতে৷ কিন্ত সংসার ও সন্তানদের কথা বিবেচনা করে অস্বীকৃতি জানায়৷ ওর কন্ট্রিবিউশনকে স্যালুট৷ আমাদের দু’টি কন্যা সন্তান৷ বড়টি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত৷ আইন বিষয়ে ১ম সেমিস্টারে আছে৷ ঢাকায় থাকে৷ হোস্টেলে সীট নেই৷ ওরা ক’জন সহপাঠি একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে৷ খরচ বেশি৷ কিন্ত উপায় নেই৷
ছোট মেয়ে একটি ইংলিশ মিভিয়াম স্কুলে পড়ে৷
ও-লেভেল পরীক্ষার্থী৷
নিজের বাসা ভাড়া, সংসার খরচ প্রচুর৷ তারচেয়ে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ অ-নে-ক বেশী৷ শুধু বেতনের টাকায় চলেনা৷ তাই বিকেল থেকে রাত অবধি টিউশনি করি৷ সপ্তাহে তিন দিন৷ এভাবে অল্টারনেটিভ ভাবে অন্যান্য ব্যাচ পড়াই৷
হালাল রুজিটাকেই ধ্যান-জ্ঞান মনে করি৷ তাই প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর আল্লাহ্’র দরবারে শুকরিয়া করে বলি আলহামদুলিল্লাহ্৷ একজন ছা’পোষা মানুষের মতো চলাফেরা করি৷ নিজের সীমাবদ্ধতা লুকানোর জন্য যথা সম্ভব আড্ডা-আলোচনা এড়িয়ে চলি৷ তাছাড়া আড্ডা দেয়ার সময় কোথায়৷ অথচ এমন হওয়ার কথা ছিল না৷
অনার্স পরীক্ষার আগে বাবা মারা গেলেন৷ তিনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারী চাকরীজীবি ছিলেন৷ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ছিলেন৷ বাম রাজনীতি আর সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড নিয়েই ছিল তাঁর যত ব্যস্ততা৷ বুর্জুয়া-পেটি বুর্জুয়া তথা শোষক শ্রেনির নাগ পাশ থেকে মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য নিরলস প্রচেষ্টা ছিল৷ স্বপ্ন দেখতেন শোষণহীণ, বৈষম্যহীণ এক সাম্যবাদ সমাজের৷
বাবা যখন কারমাইকেল কলেজে পড়তেন৷ তখন হুট করে একটি কিশোরীকে বাড়িতে আনলেন৷ দাদা-দাদি মেয়েটি কে জিজ্ঞেস করলে বলেন তোমাদের বৌমা৷ বাড়ির সকলে তাজ্জব৷ বলে কী? তখন বাবা বলেছিল এই মেয়েটির লেখা-পড়া করার প্রবল ইচ্ছে৷ কিন্ত দারিদ্রের কারনে পড়াশুনার পরিবর্তে তার বাবা-মা তাকে ঢাকায় এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়র কাছে কাজের জন্য পাঠাচ্ছে৷ আমার খুব খারাপ লেগেছে৷ তাই ওকে আজকে বিয়ে করেছি৷ আজ থেকে লেখাপড়া করবে৷ তোমাদের মেয়েদের মত৷ ব্যাস এটাই শেষ কথা৷
এরপর বাবা আমার মা-কে লেখাপড়া করান৷ মা মেট্রিক পরীক্ষা দেন৷ কিন্ত ফেল করেন৷ বাবা উৎসাহ দেন৷ চতুর্থবারে মা পাশ করেন৷ এরমধ্যে বাবা সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করেন৷ মাকে কলেজে ভর্তি করেন৷ রাতে তিনি নিজের বাড়িতেই নিজের স্ত্রীর জন্য লজিং মাস্টারের দায়িত্ব পালন করেন৷ এভাবেই সময় পেড়িয়ে যায়৷ মা মাস্টার্স কমপ্লিট করলেন৷ সেসময় শিক্ষিত নারীদের চাকরির সুযোগ ছিল অবারিত৷ বাবা তদবির করে মাকে পোস্ট অফিসের কেরানী (LDC) হিসেবে ঢুকিয়ে দেন৷ পরবর্তিতে মা নিজের যোগ্যতাবলে পোস্টাল ইন্সপেক্টর পদে আসীন হন৷ এছাড়াও পোস্টাল কর্মচারী সমিতি”র জাতিয় পর্যায়ের নেতা নির্বাচিত হন৷ স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি নারী উন্নয়নের জন্য কাজ করতে থাকেন৷
বাবার কিডনি ড্যামেজড৷ ভীষণ অসুস্থ্য হন৷ তাঁর চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন৷ সবচেয়ে বড় প্রয়োজন কিডনী৷ ডাক্তারদের পরামর্শ হলো নিজেদের মধ্যে থেকে যদি কেউ ডোনেট করে৷ যেভাবেই হোক বাবাকে বাঁচাতে হবে তাই আমি টেস্ট করালাম৷ কিন্ত ম্যাচ করলো না৷ আমার দুই ভাই ও দুই বোন ভয়েই টেস্ট করালো না৷ আমি জোর করে মা’র টেস্ট করালে ম্যাচ করলো৷ ডাক্তার খুশি৷ আমরাও খুশি৷ বাবা যেন বাঁচার নতুন স্বপ্ন দেখতে লাগলো৷ কিন্ত মা রাজি হলো না৷ তাঁর নাকি ভয় করে৷ হায়রে প্রতিদান৷ বস্তি থেকে তুলে আনা মেয়েটার জন্য যার এত অবদান৷ আজ তিনিই কী স্বার্থপরের মতো শুধু নিজের জীবন নিয়ে ভাবছে৷ আমি মিলাতে পারি না৷ বাবা এত বছরের সংসার জীবনে নিজের স্বার্থপর স্ত্রীকে কেন চিনতে পারলো না৷ নাকি সেটাও ছিল সেক্রিফাইস৷
আমুদে, প্রাণখোলা আর পরোপকারী মানুষ ছিলেন বাবা৷ ভাই-বোন, শ্যালক-শ্যালিকা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সকলের জন্য কিছু না কিছু করেছেন৷ এমনকি তখনো তিনি অনেকের কাছে পাওনা টাকা পেতেন৷ কিন্ত উনি যখন অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন, তখন কেউ পাশে ছিলনা৷ কেউ সাহায্য করলো না৷ এমনকি পাওনা টাকাটুকুৃও আজ অবদি দিলনা৷ সারাদিন হাসপাতালে থাকি৷ বাবাকে বাঁচাতেই হবে৷ দরকার হলে যা কিছু সম্পদ আছে বিক্রি করবো৷ দেশের বাইরে চিকিৎসা করাবো৷
একটা বিষয় খটকা লাগলো৷ বিদেশে নেয়ার ব্যাপারে আমার মা ও ভাই-বোনের আগ্রহ কম৷ বরং তারা আমাকে বলে এই শারীরিক অবস্থায় তাকে বেশি টানাটানি করা ঠিক হবে না৷ সত্যি বলতে কি বাবার চিকিৎসায় আমার মা, দুই ভাই ও দুই বোনের খুব বেশী আগ্রহ নেই৷ হয়তো ভাবছে বাঁচার আশাই যখন নেই৷ তখন টাকা নষ্ট করে লাভ কী! আমি সর্বকনিষ্ঠ সন্তান৷ ছাত্র জীবন৷ কোন রোজগার নেই৷ বরং বাড়ির টাকাতেই আমাকে চলতে হয়৷ সেজন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমার কোন মূল্য নেই৷
বাবা আমাকে ডেকে বলতেন “তুই আমার জন্য এত মন খারাপ করিসনাতো৷ কিস্যু হবে না দেখিস৷ তাছাড়া আল্লাহ্ যা লিখেছেন তা কেউ খন্ডাতে পারবেনা৷ সোনা ছেলে তুই নিজের শরীরের দিকে যত্ন দে৷ নাহলে তুইতো অসুখে পড়বি ব্যাটা৷ চোখ মুছে ফ্যাল৷ আমার বুকটা একটু জড়িয়ে ধরতো ব্যাটা৷” বলে হু হু করে কেঁদে বললো, “আমি বাঁচতে চাইরে ব্যাটা, আমি বাঁচতে চাই৷”
এরপর আস্তে আস্তে বাবার অবস্থা অবনতির দিকে যেতে লাগলো৷ ডাক্তার আশা ছেড়ে দিল৷ সময় বেঁধে দিল৷ বাবার সারা শরীরে যন্ত্রপাতি৷ কথা বলতে পারেন না৷ ইশারায় কথা বলেন৷ একদিন আমি কলেজ গিয়েছি৷ শুধু মাকে বললাম ফিরতে একটু দেরী হবে৷ বাবা যেন বুঝতে না পারে৷ কেননা সামনে অনার্স পরীক্ষা৷ ফিরে এসে দেখলাম আমার দুই ভাই, দুই বোন ও মা একদিকে বসে আছে৷ নিজেদের মধ্যে আস্তে আস্তে কথা বলছে৷ বুকটা ধক করে উঠলো৷ বাবার কাছে গেলাম৷ উনি আমার চোখে চোখ রাখলেন৷ ইশারায় কিছু বলতে চাইলেন৷ হাতের আঙ্গুল দেখালেন৷ বদ্ধাঙ্গুলে বেগুনি রং৷ কিছু বুঝলাম না৷ তিনি আমাকে তার বুকে মাথা রাখতে বললেন৷ মাথা রাখলাম৷ শীর্ণকায় হাতদুটো দিয়ে মাথায় আদর করলেন৷ আর কাঁদতে থাকলেন৷ আমিও নিজেকে আটকাতে পারলাম না৷ পরেরদিন বাবা মারা গেলেন৷ সকলে কাঁদলো৷ কিন্ত আমি কাঁদতেও পারলাম না৷ বুকের ভেতর কষ্ট৷ প্রকাশ করতে পারলাম না অশ্রুজলে৷ বরং মা, ভাই-বোনের মেকি কান্না রক্তে আগুন জ্বালায়৷ মনে হতে থাকে এটা মৃত্যু নয়, হত্যা৷ আমি কিছুই করতে পারলাম না৷
শহরে বাবা চার ইউনিটের পাঁচতলা বাড়ি বানিয়েছেন৷ নিজের পরিশ্রমের টাকায়৷ দোতলার একটিতে থাকি মা, আমার মেজ ভাই-ভাবী ও আমি৷
আর বিপরীত দিকের ফ্ল্যাটে আমার বড় ভাই পরিবারসহ থাকে৷ আলাদা খায়৷ একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানীর ম্যানেজার৷ আর্থিক অবস্থা ভাল৷ তবে বাবা-মা কিংবা আমাদের খোঁজ নেয় না৷ মেজ ভাই ঠিকাদারী ব্যবসা করেন৷ যখন প্রচুর ইনকাম করেন৷ তখন তার ভাবসাব আলাদা৷ পয়সা ওড়ান৷ স্ফূর্তি করেন৷ নেশাও করেন৷ প্রতিদিন ড্রিংক করে গভীর রাতে বাড়িতে ফেরেন৷ অসভ্য আচরণ করেন৷ এমনো দিন গেছে তিনি উলঙ্গ হয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ফুটপাত দিয়ে চলমান পথিককে গালি দিচ্ছেন৷ মা কিংবা আমরা কিছু বলিনা৷ কারণ তাহলে সে মাত্রা বাড়িয়ে দেয়৷ লজ্জায় মাথা কাটা যায়৷ প্রতিবেশীরা বলতে গেলে বিরক্ত৷ আমরা এজন্য অনেকটা একঘরে৷ শুধুমাত্র বাবা গ্রহনযোগ্যতা ও সুনামের কারনে এখনো টিকে আছি৷ বিল্ডিংয়ের বাকি ইউনিটগুলো ভাড়া দেয়া হয়েছে৷ বড় বোন ও তার স্বামী দুজনই আইনজীবি৷ তারা কোর্টের পাশে একটি ফ্ল্যাট কিনে সেখানেই থাকে৷ ছোট বোন বিবাহিত৷ স্বামী-স্ত্রী দু’জনে চাকুরি করে৷ ঢাকায় থাকে৷
কুড়িগ্রামের চিলমারি উপজেলায় বাবার গ্রামের বাড়ি৷ সেখানে অনেক জমি-জমা৷ আধিয়ার যা দেয়৷ তাই সই৷ আমরা গ্রামে তেমন একটা যাইনা৷ সময় হয়না৷
আমার বিয়ের কিছুদিন পর মা আমাকে বললেন তোর সাথে কিছু কথা আছে৷ রাতে বলবো৷ রাতে খাওয়া শেষে ডাইনিং টেবিলে মাকে বললাম কী কথা বলো? তিনি আমার স্ত্রীকে কিচেনের কাজগুলো সেরে আসতে বললেন৷ আমি একা হলে তিনি বললেন মনটাকে একটু শক্ত করে আমার কথাগুলো মন দিয়ে শোন৷ আমি একটু ভয় পেলাম৷ নতুন কোন বিপদ আসলো নাতো? মা শুরু করলেন, হাসান তোমার বাবা মারা যাবার আগে একটা উইল করে গেছেন৷ বলতে পার চূড়ান্ত উইল৷ তিনি তাঁর সমস্ত সম্পত্তি বড় ছেলে কামাল, মেজ ছেলে জামাল, বড় কন্যা রেবা, মেজ কন্যা নিলিমা ও তাঁর স্ত্রী অর্থাৎ আমাকে দিয়ে গেছেন৷ তোমার বাউন্ডুলি স্বভাব আর অবাধ্যতার কারণে সমস্ত প্রোপার্টি থেকে তোমাকে বাদ দেয়া হয়েছে৷ শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো৷ মাথা কাজ করছেনা৷ তিনি আবার বলতে শুরু করলেন৷ তুমি যেহেতু চাকরী কর এবং বিয়ে করেছ৷ তাই আমি চাই কোন গোলযোগ ছাড়াই তুমি অন্যত্র তোমার পরিবার শিফট করো৷ এখন যাও৷ বৌমা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে৷ ভাল থেকো৷ মা চলে গেলেন৷ চেয়ারে বসে থাকলাম আমি৷ আচ্ছা চেয়ারটা কি দুলছে? নাকি ভূমিকম্প হচ্ছে? বুঝতে পারছি না৷
ঘরে আসলাম৷ হাসি হাসি মুখে জয়া বলে উঠলো কী ব্যাপার! মা-ছেলের কী আলোচনা হলো? আনন্দের কোন সংবাদ আছে নাকি? আমি বললাম কিছুনা৷ এমনি৷ সংসারের এটা-ওটা নিয়ে কথা বললো৷ থাক৷ চলো ঘুমোতে যাই৷ কাল ক্ল্যাশ আছে৷ তাড়াতাড়ি উঠতে হবে৷ বিছানায় শুয়ে পড়লাম৷ দু’জন দুদিকে মুখ করে৷ জয়া এদিকে ঘুরলো৷ শরীরের উপর হাত রাখলো৷ অবাধ্য হাতটা আমার শরীরের যত্রতত্র ঘোরাতে থাকলো৷ আলতো আঘাত করতে থাকলো৷ আমি কী করবো বুঝতে পারছি না৷ একদিকে মাথার উপর অদৃশ্য হাতুরের নিঠুর আঘাত অন্যদিকে শরীরে দৃশ্যমান আবেগী আঘাত৷ এক ঝটকায় ঘুরে নিলাম নিজেকে৷ শক্ত হাতে জয়াকে জড়িয়ে ধরলাম৷ সমস্ত ক্রোধ, সমস্ত রাগকে পরিনত করলাম নতুন সৃষ্টির উল্লাসে৷ যেখানে পুরুষরাই শুধু কর্তৃকারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়৷ আহ্ আনন্দ! এক অদ্ভূত ভাল লাগা৷ সমস্ত পঙ্কিলতা ধুয়ে যেন তৈরি করলো এক মহা পবিত্রতার আমেজ৷ ভূলে গেলাম সম্পত্তি সম্পর্ক বোঝে না৷ পৃথিবীতে আসলে কেউই স্বার্থহীন নয়৷ মন ও শরীরের ধকল বরং চমৎকার ঘুম উপহার দিল৷
সকালে কলেজে গেলাম না৷ ছুটি নিলাম৷ ভাবতে লাগলাম৷ এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিলে এ উইল ধোপে টিকবেনা৷ কিন্ত অভিমান আর পারিবারিক মর্যাদার কথা চিন্তা করে মামলা না করার সিদ্ধান্ত নিলাম৷ কী বিশ্রী! সবাই যখন জানবে আমি আমার মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছি৷ ছি: ছি:
হঠাৎ মনে পড়লো৷ বাবা সেদিন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কী বোঝাতে চেয়েছিল৷ ওরা প্ল্যান করে বাবার কাছ থেকে এ অন্যায় উইলে টিপ সই নিয়েছে৷ হে আল্লাহ্৷ এ কথাতো আমি কাউকে বলতে পারবো না৷ লজ্জা! ভীষণ লজ্জা৷
কদিন পরে মা ও ভাই-বোনকে বললাম৷ আমি চলে গেলে অনেকে অনেক কথা বলবে৷ আমাদের পারিবারিক মর্যাদা নষ্ট হবে৷ জানাজানি হবে৷ আমি কথা দিচ্ছি এ সম্পত্তিতে আমি বা আমার পরবর্তি প্রজন্ম কখনো কোন দাবী করবে না৷ গতমাসে যে ফ্ল্যাটটা খালি হয়েছে আমি সেখানেই থাকবো৷ অন্য ভাড়াটের মতো ভাড়া দিব৷ একথা আর কারো জানার দরকার নেই৷ এতে করে আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের কাছে বিব্রতকর অবস্থায় পরতে হবে না৷ অবশেষে সকলে এই চুক্তিতে রাজী হলাম৷
শুরু হলো আমার নিজের পৈত্রিক বাড়িতে ভাড়াটে জীবন৷ কেউ কিছু জানলো না৷ এমনকি জয়াও নয়৷ এভাবেই কাটছিল৷ হঠাৎ একদিন জয়া আমাকে প্রশ্ন করলো৷ তুমি কি তোমার মাকে বাড়ি ভাড়ার টাকা দাও? কেন বলতো? না প্রতি মাসে দেখি তুমি ভাড়াটের মত মাকে টাকা দিয়ে আস৷ আমি বললাম, ভাড়ার টাকা নয়৷ সন্তান হিসেবে মায়ের জন্য কিছু করা উচিৎ৷ তাই না? তাছাড়া এটা দিয়েই ওদের সংসার চালাতে হয়৷ বুকে প্রচন্ড কষ্ট হলেও আমি তাকে সত্যটা বলতে পারিনা৷ কেননা এতকিছুর পরেও সে-তো আমার মা৷
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।