গারো পাহাড়ের গদ্যে রানা হেনা

আধুনিকতা

বাঙালির ইতিহাস হাজার বছরের হলেও শুধুমাত্র উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর ইতিহাস যেন স্ব-মহিমায় উজ্জ্বল। বাঙালির শৌর্য-বীর্য যেন পরতে পরতে গাঁথা এই শতাব্দীর। যে কোনাে সুহৃদ বাঙালিই তা স্বীকার করবেন। বাঙালির স্বদেশী আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন আরও কত কী ।

এই ইতিহাস তো সবাই গড়তে পারে না। সবাই গড়তে জানেও না। ত্যাগের এমন সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত আর কোথায় পাবেন? এ যে আমার ইতিহাস, আমাদের ইতিহাস। যে বলবে এর কোন দাম নেই আর, সে তাে ডাহা নিমকহারাম। তার মস্তিষ্কের বিকৃতি চরমে।

একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমরা খেই হারিয়ে ফেলেছি নিজেদেরকে সাঙ্ঘাতিক রকমের আধুনিক সাজাতে গিয়ে। যার ফলস্বরূপ আমরা আমাদেরই মাতৃভাষায় কথা বলতে গিয়ে হোঁচট খাই এবং লজ্জা পাই। এ-হোঁচট খানিকটা সখের বশেও খাওয়া হয়। যেন বাংলায় কথা বলতে গিয়ে হোঁচট না খেলে আধুনিকতা টেকে না। অথবা ধরুন, পোশাক পরতে গিয়ে ‘স্যুট-প্যান্টের’ সাথে ঠিক কোন রঙের ‘টাই’ পরলে ভালাে হয় এমন দ্বন্দ্বে কাটে ঘণ্টা খানেক। কাটবে না কেন বলুন তাে? আমরা যে আধুনিক হয়েছি। আমাদের আধুনিকতার অগ্রগতি এত বেশি যে, চাকরি কিংবা পরীক্ষার ‘মৌখিক পরীক্ষার’ অংশটুকু শতভাগ ইংরেজি না হলে শিক্ষার মান থাকে না।

আমরা আধুনিকতার নামে প্রতিনিয়ত অপমান করে চলেছি আমাদের অতীতকে। আজ এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে কেন জানি না মনে হয় আধুনিকতা মানে শুধু অনুকরণ নয় তাে? অনেকে হয়তো বইয়ের ভাষায় আধুনিকতার সংজ্ঞা দিয়ে দু-দশ পাতা আলোচনা করে যেতে পারেন। কিন্তু সেই আধুনিকতার মানদণ্ড বৃটিশদের দেওয়া নয় তাে ?

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।