ক্যাফে গল্পে ঋতব্রত গুহ (দ্বিতীয় পর্ব)

বড়া ইমামবাড়ার কাহিনী

কাজ হবে ? তার মধ্যে কোম্পানির তো নানান দাবিদাওয়া লেগেই আছে । “
“ কি বলছ হাসান । অওয়ধ এর নবাবের আর যাই হোক রাজকোষের চিন্তা নেই । আব্বাজান বলতেন প্রজাদের জন্য শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত কাজ করতে হবে । “
নবাবের স্বভাব হাসান জানে । হাসান অনুধাবন করল নবাবের মনে এক বিরাট কিছুর পরিকল্পনা চলছে ।
“ তুমি এখন যাও হাসান । কাল দরবারে সবাইকে উপস্থিত থাকতে বোলো । “
আজ রাতে আর ঘুম আসবে না আসফ উদ দউল্লার । ভোর হতে আর কিছুক্ষণ বাকি । আসফ উদ দউল্লা একটা পরিকল্পনা নিয়েছেন । এমন পরিকল্পনা কোন নবাব তো দূরের কথা এমনকি আজ পর্যন্ত কোন মোগল সম্রাট ও নিতে পারেনি । আসফ উদ দউল্লার মনের মধ্যে অজস্র ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া চলছে । তিনি নিজেও জানেন না এত বড় পরিকল্পনা আদৌ বাস্তবায়িত হওয়া সম্ভব কি না !
নবাবের কথা শুনে তো সবার চক্ষু চড়কগাছ । গোমতীর পশ্চিম পাড়ে এমন জলাজমিতে ইমারত তৈরি হবে ! হতেই পারে । অওয়ধ এর নবাবদের সখ বিচিত্র । বিশেষকরে ইমারত তৈরিতে তো এদের খ্যাতি রয়েইছে ।
“ নবাব আরেকবার ভেবে দেখলে ভালো হত না ! ” হাসানের কথায় মৃদু হাসল নবাব ।
“ লখনউ হবে ইমারতের শহর । অওয়ধ এর নবাবের নাম হবে বিশ্বজোড়া । একই সাথে আমার প্রজারা পারিশ্রমিক পাবে এর জন্য । এই সময়ে কারোর হাতে কোন কাজ নেই হাসান । অন্তত এই কাজটি হলে কত পরিবার বেঁচে যাবে সেটা একবার ভেবে দেখ হাসান ! “
“ কিন্তু নবাব এত বড় ইমারতের নকশা কি করে তৈরি হবে ! “
“ প্রতিযোগিতা হবে । বড় প্রতিযোগিতা হবে । যারা এই কাজে দক্ষ তাদের সবাইকে ডেকে পাঠাও হাসান । তারা সবাই যে যার মত নকশা করবেন । যার নকশা আমার সবচেয়ে ভালো লাগবে তার নকশাতেই বাদশাহি মসজিদ তৈরি হবে । “
খবর চাউর হল রাজ্যজুড়ে । অনেক নকশা জমা হল নবাবের দরবারে । রাজ্যের মানুষের মনে আশার সঞ্চার হল নূতন করে । পারিষদ দের কাছে ফরমান গেল নকশাগুলো কে বেছে নেওয়ার । শ্রেষ্ঠ দশটা নকশা পাঠানো হল নবাবের কাছে । নবাব কিছুতেই ঠিক পছন্দ করে উঠতে পারলেন না । সব নকশাই ভালো । কিন্তু কিছু একটা যেন নেই নকশাগুলোতে । বেশিরভাগ নকশাই মোগল ইমারতগুলোর মত । আর সাহেবদের সাথে ইউরোপিয়ান ইমারতের প্রভাবও চলে এসেছে এখানে । অনেক নকশাতে সেই প্রভাবও রয়েছে । কিন্তু নবাবের চাই একটা নূতন কিছু । সারাদিন ভালো করে বিচার করেও কোন নকশা বেছে উঠতে পারলেন না তিনি । হাসান জানে আসফ উদ দউল্লা র মেজাজ ভালো নেই এখন ।
“ নবাব তবে এখন কি হবে ! “
“ সেটাই তো ভাবছি হাসান । একটা নূতন কিছু বানাতে চেয়েছিলাম । সেই কিসমত আমার নেই । তার থেকে এদের মধ্যে থেকেই একটা নকশা বেছে নাও তোমরা । ইমারত তৈরি হলে লোকগুলো তো খেতে পাবে । এটাই যথেষ্ট । “
হঠাৎ বাইরে সিপাহিদের গলার আওয়াজ শুনতে পেলেন নবাব । হাসান বাইরে ছুটে গেল । হাসান ফিরে এল অল্প কিছু মুহূর্তের মধ্যে ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।