ক্যাফে গল্পে ঋতব্রত গুহ (অন্তিম পর্ব)

বড়া ইমামবড়ার কাহিনী

“ ঠিক আছে নবাব ! কিন্তু ও তো আগে কখনো কোন কাজ করেনি । এত বড় দায়িত্ব কি সামলাতে পারবে ! “
হেসে উঠলেন আসফ উদ দউল্লা ।
“ অওয়ধ এর নবাবদের শিল্পী চিনতে ভুল হয় না । এই ইমারত অমর হয়ে থাকবে । ঈদের শুভদিন থেকেই কাজ শুরু হবে । সবাইকে খবর দাও । ধনী গরীব যার অর্থের প্রয়োজন সবাই কাজ করবে এখানে । কাজের বিনিময়ে মোটা পারিশ্রমিক পাবে । আসফ উদ দউল্লা র একজন প্রজাও না খেতে পেয়ে মরবে না ।
মহাসমারোহে শুরু হল কাজ । কুড়ি হাজারের বেশি প্রজা কাজে যোগ দিল । কিন্তু নবাবের চিন্তা ঘুচল না । যারা সমাজের উঁচুস্তরে এতদিন অধিষ্ঠিত ছিলেন তারা জেদ ধরলেন তারা এ কাজ করতে পারবেন না । না খেতে পেয়ে মরবে কিন্তু মজদুরি করবেন না । নবাব ও তার পারিষদ রা দুশ্চিন্তায় পড়লেন । তাদের সংখ্যাও কিছু কম নই । আর দুর্ভিক্ষ তো ধনী গরীবের ভাগ করে না । ধনীদের হাতের অর্থ নেই । ওদের জন্য কিছু ব্যবস্থা না করলে তো ওরা মরে যাবে ।
নিজের মহলে জরুরি সভা ডাকলেন নবাব । উপস্থিত হয়েছেন সবাই । শিক্ষিত সমাজের প্রতিনধিরাও উপস্থিত। এদের মধ্যে কেউ শিক্ষক , কেউ কারিগর , কেউ চিকিৎসক ।
“ আপনারা মজদুরির কাজ করবেন না বলছেন বটে । কিন্তু এই মুহূর্তে তো অন্য কোন উপায়ে কর্মসংস্থান সম্ভব নয় ! “ গম্ভীর স্বরে বললেন নবাব ।
“ অপরাধ নেবেন না নবাব । মৃত্যুই আমাদের নিয়তি । কিন্তু আমাদের কেউ এই কাজ করতে চাইছে না । মজদুরদের সাথে কাজ করলে আমাদের সম্মান থাকবে না নবাব ! “ উত্তর দিলেন এক প্রতিনিধি ।
“ আল্লা না চাইলে মৃত্যু আসবে না । আসফ উদ দউল্লা থাকতে একজন প্রজাকেও মরতে হবে না । সকাল বেলা যে ইমারত তৈরি হবে আপনারা রাতে গিয়ে সেটা ভেঙে ফেলুন । সকালে মজদুররা আবার সেটা বানাবে । রাত্রে আপনারা আবার সেটা ভাঙবেন । এই কাজের জন্য আমি আপনাদের অর্থ নেব । “
সভা একদম স্তব্ধ হয়ে গেল । নবাবের কি শেষকালে মাথা খারাপ হয়ে গেল ! ইমারত গড়ার জন্য পারিশ্রমিক দেওয়া হয় । ভেঙে ফেলার জন্য আবার পারিশ্রমিক ! এটা কেমন কথা ।
“ তবে ইমারত তৈরি হবে কেমন করে হুজুর !” অবাক চোখে প্রশ্ন করল কিফায়াতুল্লা !
“ চিন্তা কর না । আমার মজদুর দের কাজ করবার ক্ষমতা সামনে যারা বসে আছেন তাদের থেকে অনেকটাই বেশি । ওরা দিনের বেলা যতটা গড়তে পারবেন শিক্ষিত প্রজারা রাতে ততটা ভাঙতে পারবেন না । এভাবে একদিন ইমারত তৈরি হয়ে যাবে । হ্যাঁ অনেক বেশি সময় লাগবে বটে । কিন্তু একদিকে ভালোই হল । এই সময় জুড়ে প্রত্যেককে আমি পারিশ্রমিক দিতে পারব । হয়ত দুর্ভিক্ষটাও কেটে যাবে এই ইমারত সম্পূর্ণ হতে হতে । “
কিফায়াতুল্লার চোখে জল । চোখে জল হাসানেরও । আসফ উদ দউল্লা র প্রস্তাবে সম্মতি জানাল ধনী সম্প্রদায়ও । এই প্রস্তাবে তাদের সম্মানও বজায় থাকবে এবং অর্থলাভও হবে ।
নবাবের উৎসাহে আবার শুরু হল কাজ । দুর্ভিক্ষের দুর্যোগ সরিয়ে জেগে উঠল লখনউ শহর । গোটা প্রদেশে ছড়িয়ে গেল আসফ উদ দউল্লা র কাহিনী । রব উঠল “ জিসকো না দে মলা উসকো দে আসফ উদ দউল্লা । ” কালচক্রে সম্পূর্ণ হল বড়া ইমামবড়া । ক্রমশ এ ইমারত হয়ে উঠল লখনউ এর পরিচয় । সেখানে আজও পাশাপাশি শুয়ে রয়েছেন আসফ উদ দউল্লা এবং কিফায়াতুল্লা ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।