গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব – ১৬)

নীল সবুজের লুকোচুরি

– সেটা না জানানো যদি মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অপরাধ হয়ে থাকে তবে আমি আমার মেয়ের কাছে অপরাধী, এতদিন ওর বাবার নাম ওর কাছে গোপন করেছি বলে।”

–মিঠি চোখে জল নিয়ে বলে ওঠে,” এসব তুমি কি বলছো মা? তুমি যা করেছ সেসব যে আমার জীবনের সুরক্ষার জন্যই করেছ সেটা আমি জানি। হয়তো ছোটবেলায় বুঝতাম না বলে মনে মনে অভিমান করেছি। কিন্তু বড় হয়ে দেখেছি তো ধর্মের নামে কিভাবে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করা হয়! কায়েমি স্বার্থের জন্য ধর্মের নামে জেহাদ করে, নরসংহারের মতো জঘন্য কাজ করতে মানুষ পিছপা হয়না। সেখানে আমার বাবার নাম যদি আমি জানতাম তবে তো কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতাম। তখন আমার বাবা মায়ের ধর্ম নিয়ে নানারকম কথা হতো। লোকে আমার জন্মের ওপর জিজ্ঞেসা চিহ্ন লাগিয়ে দিত। সেই পরিস্থিতিতে হয়তো আমার বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে যেত। আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে যা করা দরকার তুমি তাই করেছ। এতে কোন ভুল নেই। তুমি কখনো কোনো ভুল করতে পারোনা।”
সুমিতা মিঠিকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে।
—আয়ান মিঠির মাথায় হাত রাখে। চিবুক স্পর্শ করে আদর করে। কাতর হয়ে অনুরোধের স্বরে বলে,” একবার বাবা বলে ডাকবিনা!”
মিঠি ডাঃ আনসারির পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে।

—ডঃ আয়ান আনসারি তার অতিপরিচিত প্রিয় কার্ডিও সার্জেন ডঃ আয়ুস্মিতা মৈত্র ওরফে মিঠির মাথায় হাত রাখে। এতদিন ধরে যে অদৃশ্য বাৎসল্যের জোয়ারে ভেসে যেত তার মন মিঠিকে দেখলে আজ সেই সূত্রটা খুঁজে পাওয়ার পর একটু ছুঁয়ে দেখার অদম্য ইচ্ছা পেয়ে বসল ষাটের ঘর পেরিয়ে যাওয়া এক ডাক্তারকে। ফুলের ওপর হাত রেখে যেভাবে স্পর্শসুখ অনুভব করা হয় ঠিক সেভাবেই মিঠির চিবুক স্পর্শ করে আদর করলেন তিনি।
———
আসছি পরের পর্বে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।