Cafe কলামে রাজদীপ ভট্টাচার্য – ৭

প্যাস্টেল কালার 

★ পৌড়িয়াল ম্যানসন

কালিম্পং-এ আমাদের হোম-স্টে থেকে সামান্য চড়াই ভাঙলেই পৌড়িয়াল ম্যানসন। গেটের উপর ছোট্ট পাথরের ফলক। তালায় মরচে ধরে গেছে। বহুদিন খোলা হয় না। নিচু পাঁচিল ডিঙিয়ে চোখ যায় ভিতর অবধি। অযত্নে বেড়ে ওঠা গাছপালা। জমাট সবুজের আড়ালে একটা একতলা বাড়ির চেহারা। গেট থেকে অন্দর পর্যন্ত পথে পড়ে আছে ভেঙে যাওয়া মোটা মোটা গাছের ডাল। ঝরা পাতার আস্তরন। পাতাবাহারের ঝোপে মাকড়সার জাল। চাপ চাপ অন্ধকার ঘনস্তূপ পল্লবের গায়ে। কতদিন হিমেল বাতাস ও ছায়াপ্রিয় কিছু পাখি ছাড়া আর কেউ আসেনি এখানে। এমনকি রোদ্দুরও না। কেয়ারটেকার বেপাত্তা। দীর্ঘকাল চওড়া বারান্দায় পাতা হয়নি গার্ডেন চেয়ার। শহুরে উল্লাস।

হয়তো পৌড়িয়াল সাহেব বিপত্নীক। ছেলে-মেয়ে কানাডা কিংবা অস্ট্রেলিয়ায় থিতু হয়েছে তাও অনেককাল হল। মহানগরীর কোনো সুরম্য ফ্ল্যাটে ডাক্তারে-ওষুধে, চাকর-খানসামায় কেটে যায় বৃদ্ধ মোহন পৌড়িয়ালের প্রতিটি দিন-রাত। তবু দুধসাদা বিছানায় শুয়ে অস্বচ্ছ চোখে আজও লেগে থাকে যুবক বয়সের কথা। পাহাড়ি দিনযাপনের পুরনো অ্যালবাম।

সাহেবের অভিযানের মেয়াদ শেষ হলে তারপর প্রবাসী সন্তান ফিরে আসবে একসময়। নবীন যুবক সামান্য মূল্যে বেচে দেবে তার শৈশবের ছুটির দিনগুলি। রঙিন ফুল আর পাখির ডাক শুনে অবাক হওয়ার কিছু সরল বয়স। নীরবে হাতবদল হবে কালিম্পং পাহাড়ের এই বাংলোর মালিকানা। গেটের সামনে নতুন ফলক বসবে। সাফ-সাফাই শুরু হবে বাড়ির সর্বাঙ্গে। মরসুমি ফুলের কেয়ারির মাঝে খেলা করবে প্রজাপতি শিশু। নতুন ট্যুরিস্ট এসে মুগ্ধচোখে তাকাবে বারবার। শুধু বাড়ির পিছনের বৃদ্ধ শতাব্দী প্রাচীন পাইন গাছটির তখন মনে পড়বে পুরনো মালিকের কথা। ঘোলাটে দৃষ্টিজুড়ে ছোপধরা অতীতের সাদাকালো ছবি।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।