Cafe কলামে রাজদীপ ভট্টাচার্য – ২

প্যাস্টেল কালার – ২

চা দোকান

পাহাড়ি বালিকার দল ইস্কুল থেকে বাড়ি ফিরছে। চড়াই উৎরাই পেরিয়ে, বাঁকের দিকে মিশে যাচ্ছে ক্রমশ ওদের উল্লাস। লাল লাল ফুলো গাল দেখলেই হাতের আঙুলগুলো নিশপিশ করে। ওদের চলে যাওয়া পথের উপরে হাওয়ায় উড়তে থাকে লাল-নীল-হলুদ-সবুজ লুং টা। আবার নির্জন হয়ে আসে পথ পাশের এই চা দোকান।

নিউ মাল স্টেশন থেকে পাঁচ-সাত মিনিট হাঁটলেই পৌঁছে যাওয়া যায় এখানে। দোকানের ঠিক পিছন দিয়ে বয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি ঝোরা। বোধহয় গিয়ে মিশেছে নেওড়া নদীতে। ঝোরার সারা গায়ে জমে আছে ছোটো বড় গোল পাথর। সাদা, সবুজ, রুপোলী আরও কত রঙের। পাথরের নিচ দিয়ে, ফাঁক দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তিরতিরে জল। দোকানি আমায় বসিয়ে রেখে চিনি কিনতে গেছে স্টেশনের দিকে। নদীর ওপারে ঘন পাইন বন। হেমন্ত বেলার এই বিকেল চারটেতেই সেখানে নেমে এসেছে সন্ধে। আকাশে এখনো মেঘ। যদিও একটু আগেই একপশলা হয়ে গেছে। তবু।

রাস্তার ওপারে চায়ের বাগান। মাঝেমধ্যে ঝাঁকড়া গাছ দু’একটা। বৃষ্টিতে ভিজে ঝকঝক করছে নতুন বেরোনো চা পাতা। এক কাপ চায়ের জন্য আমি অপেক্ষা করছি অনন্তকাল। একটু চিনির জন্য অপেক্ষা করে আছে আমার চা। নদীর ওপারে পাইন বন থেকে কখন সন্ধে নেমে আসবে নদী পেরিয়ে- তার জন্য অপেক্ষা করে আছে বৃষ্টিভেজা রাস্তা, সবুজ চা বাগান।

এভাবে অপেক্ষা করতে করতেই পাথর গোল হয়ে ছোট হতে হতে বালুকণা হয়। সকাল গড়িয়ে যায় সন্ধের দিকে। একটু চিনির জন্য, এক পেয়ালা গরম চায়ের জন্য অপেক্ষা করতে করতে একটা জীবন ক্রমশ ফুরিয়ে আসে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।