কবিতার স্বর্ণযুগে রবীন বসু (গুচ্ছ)

১
প্রকীর্ণ প্রেমের দিন
গ্রীষ্মপালক থেকে এইমাত্র উড়ে গেল পূর্বমেঘ
আষাঢ়ের বাতাস তাকে সান্ত্বনা দিল;
রামগিরি পর্বত নয়
মুথাঘাস দোপাটি শোভিত এই মাটি-বাংলার
রুক্ষ জেলায় বর্ষণসিক্ত কৃষানির অলকাপুরীতে
ক্ষুধাদীর্ণ শ্লোক রচিত হচ্ছে প্রতিদিন।
প্রতিদিন কালীদাস চেয়ে থাকেন নির্নিমেষ
কালি শূন্য দোয়াত
প্রক্ষিপ্ত ভাষার ভারে মুহ্যমান মেঘদূত…
হে আষাঢ়, প্রকীর্ণ প্রেমের দিন তুমি ধরে রাখো !
২
আষাঢ় কথা
তোমাকে বলিনি আগে, পুরোটা আষাঢ় মাস
গ্রামদেশে কার সাথে সারাবেলা ভিজেছি জলে?
কার সাথে রাজারানি খেলা?
কচুপাতা হাতে নিয়ে জল-মানিক ধরার আগ্রহ !
তোমাকে বলেছি কি আগে?
আষাঢ়ের দীর্ঘবেলা ছড়ি হাতে ঘাসফড়িং
মেরেছি কত?
হলুদ ঠ্যাং শালিকের খাদ্য হয়ে
তারা সব শুয়ে ছিলে মাঠে।
আমাদের যাত্রাপথ, আমাদের সবুজ শৈশব
কাদামাটি জলে ভাসে আষাঢ়ের নিমগ্ন সন্ধ্যা।
সারারাত বৃষ্টি ঝরে, সারারাত মেঘের গর্জন
রূপকথার ঘোড়াগুলো এইমাত্র মেঝেতে শুয়েছে;
সেই ফাঁকে স্বপ্ন আসে, জিয়নকাঠি মরণকাঠি
ঢলনামা কালোচুলের রাজকন্যা, আর
পক্ষীরাজ ঘোড়া থেকে নেমে আসে রাজপুত্র…
এভাবেই মেঘ নামে, বৃষ্টিকথা সত্য হয়
দারুণ এই আষাঢ় মাসেই!
৩
নারী : প্রতিবাদের ভাষা
নারী হল রথের চাকা, ঘুরছে ক্রমাগত
দিনে আছে রাতে আছে কাজে অবিরত।
সারাদিনে ঘূর্ণি ঘোরে আপিসে আর বাড়ি
সব কাজেই যত্ন আছে, ভালোবাসে শাড়ি।
নারী বেশি নরম বটে, রাগে অতি দ্রুত
পুরুষ তাই ভয়ে থাকে ভাবটা উপদ্রুত।
কিন্তু নারী সদা হাস্য মনে প্রেমের ফুল
তাহার কানে ঝোলে দেখি ঝুমকোলতা দুল।
নারী আপন বুকে ধরে দুঃখ কত শত
বাইরে থেকে বুঝিনা তা আমরা অত শত।
বুঝেছিলেন শরৎচন্দ্র আর রবীন্দ্র ঠাকুর
তাইতো জানি নারী দুঃখী বস্তুতই আতুর!
তবু তারা আলো জ্বালে অন্ধকারে আশা
সাহস নিয়ে এগিয়ে চলে প্রতিবাদের ভাষা!