সম্পাদিকা উবাচ

কিছুকাল আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, “আসলে পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটাই একটা জার্নি। সেটা কেউ বোঝে, কেউ বোঝে না। একজন সৃষ্টিশীল মানুষের বিশেষত্ব হলো- এই জার্নিটা তুলে ধরা।” গতকাল সেই জার্নিটাই সমাপ্ত করে তিনি অর্থাৎ পরিচালক শ্রী বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত মহাপ্রস্থানের পথে চলে গেলেন৷
১৯৬৮ সালে ১০ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র ‘The Continent of Love’ দিয়ে নিজের চলচ্চিত্র কেরিয়ার শুরু করেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। তাঁর পরিচালিত ৫টি ছবি-বাঘ বাহাদুর, চরাচর, লাল দরজা, মন্দ মেয়ের উপাখ্যান, কালপুরুষ জাতীয় পুরস্কার পায়। পরিচালক হিসেবেও তিনি নিজেও দু’বার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। দেশের বাইরে বিদেশেও একাধিক সম্মান পেয়েছেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব, বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রশংসা পেয়েছে তাঁর ছবি। পরিচালকের পাশাপাশি একাধারে কবিও ছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। কফিন কিংবা সুটকেস, হিমযোগ, রোবটের গান, শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি বহু কবিতা লিখেছেন তিনি।
তিনি যে কত বড় মাপের কবি ছিলেন তা তাঁর নির্মিত ছবিগুলোই প্রমাণ দেয়৷
সিনেমা থেকে কবিতা, নাকি কবিতার মধ্যেই সিনেমা? কিছু ক্ষেত্রে দুই, বা তিন বহু শিল্পের সংমিশ্রণে ঘনীভূত হয়ে ওঠে নতুন এক শিল্প। তাকে কি কবিতা বলা যায়? নাকি সিনেমা? নাকি দু’টোই বা কোনওটাই নয়! এমনই নতুন এক মাধ্যমের সঙ্গে যিনি আমাদের পরিচয় করিয়েছিলেন তিনি বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। কবি না চলচ্চিত্র নির্মাতা? নাকি দুই সত্ত্বাই একই মানুষের? নিজে অবশ্য মনে করেন তাঁর কাছে এই দুই শিল্পই বড় আপন, চলচ্চিত্র বা কবিতা তাঁর কাছে আলাদা কিছু না।
লাল দরজা উত্তরা, চরাচর, তাহাদের কথা থেকে শুরু করে মন্দ মেয়ের উপাখ্যান, আনোয়ার কা আজব কিসসা ছবিগুলো দেখলেই স্পষ্টত বোঝা যায় পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত তাঁর কবি সত্ত্বাকে অনেক বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন৷
রোবটের গান, গভীর আড়ালে, ছাতা কাহিনী বা কফিন কিম্বা স্যুটকেসের মতো একের পর এক কবিতার বই উপহার দিয়েছেন পাঠককে। আসলে একই জীবনে সমান্তরালে চলা দুই যাপন যেন৷ তাই কবিতা আর সিনেমাকে এইভাবে একে অপরের পরিপূরক করে তিনি যে ছবিগুলি নির্মাণ করেছেন পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে তা দেখেছে আর তাঁর ঝুলিতে জমতে থেকেছে একের পর এক জাতীয় পুরস্কার৷ পুরস্কার মিলেছে দেশের বাইরে থেকেও৷
১৯৬৮ সালে ১০ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র ‘The Continent of Love’ দিয়ে নিজের চলচ্চিত্র কেরিয়ার শুরু করেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। তাঁর পরিচালিত ৫টি ছবি-বাঘ বাহাদুর, চরাচর, লাল দরজা, মন্দ মেয়ের উপাখ্যান, কালপুরুষ জাতীয় পুরস্কার পায়। পরিচালক হিসেবেও তিনি নিজেও দু’বার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। দেশের বাইরে বিদেশেও একাধিক সম্মান পেয়েছেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব, বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রশংসা পেয়েছে তাঁর ছবি।
এই শারিরীক অসুস্থতার মধ্যেও মার্চ মাসে তিনি নতুন চিত্রনাট্য লিখছিলেন। এক মহিলা গোয়েন্দার গল্প লিখতে লিখতেই তাঁর কলম থেমে গেল । অবসরে কোনওদিনই বিশ্বাসী ছিলেন না তাঁর, আর তাই হয়তো নিঃশব্দেই ঘুমের মধ্যে চিরদিনের মতো অবসর নিয়ে নিলেন চলচ্চিত্র জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত।
আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণাম রইল এই ব্যতিক্রমী পরিচালক এবং শক্তিশালী কবির প্রতি৷ বাংলার চলচ্চিত্রপ্রেমী এবং সাহিত্যপ্রেমী আপনাকে চিরদিন মনে রাখবে৷
সুস্থ থাকুন৷ ভালো থাকুন৷ লিখতে থাকুন৷ পড়তে থাকুন ৷

রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।