সম্পাদকীয়… নাকি!!!

আমার দাদু, দিদা, ঠাকুমাদের জেনারেশন আজন্মকাল নিজেদের মধ্যে বাঙাল ভাষাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন!তাঁদের মুখে ছাড়া ও ভাষা বাইরে বিশেষ শুনি নি কখনো…মামাবাড়িতে দাদুর কাছে এতো ক্যাসেট ছিল… সেখানেই ছোটবেলায় দুপুরে খাওয়ার সময় শুনতাম বুদ্ধু ভূতুম বা লালকমল, নীলকমল আরোও পরে সেই ক্যাসেটেই প্রথম শুনি কর্ণকুন্তীসংবাদ বা কিনু গোয়ালার গলি…
এইসব গাদা ক্যাসেটের মধ্যে একদিন হঠাৎ পেলাম কয়েকটা ক্যাসেট… প্রথম শুনেই দেখি, ঐ লোকটাও দাদুর মতো বাঙাল ভাষা কয়… তারপর শুনতে গিয়ে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ি!
আর এভাবেই প্রথম পরিচয় ঘটে তাঁর সাথে… ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়!!!

তারপর সাড়ে চুয়াত্তর, যমালয়ে জীবন্ত মানুষ, ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট, আসিতে আসিও না বা অমৃত কুম্ভের সন্ধানে… শুধুই মুগ্ধ হয়েছি, মানুষটির অভিনয় প্রতিভা দেখে!!!
তারপর যত জেনেছি তত বিস্মিত হয়েছি…এবং বুঝেছি বাঙাল, উদ্বাস্তু আইডেনটিটিকে গর্বের সাথে ব্যবহার ও জনপ্রিয় করার এমন নিদর্শন বিরল।
পরে জানতে পারি, বিপ্লবী অনন্ত সিংহকে খুব ভক্তি করতেন। তার একটা অন্যতম কারণ বিক্রমপুরে কিশোরবেলা। এক দিকে যেমন বিজ্ঞানী সত্যেন বসু, কবি জসীমউদ্দিনের প্রিয়পাত্র, অন্য দিকে তেমন স্বদেশিও করতেন। বুকের মধ্যে নিষিদ্ধ বই, রিভলভার নিয়ে পাচার করেছেন। দীনেশ গুপ্তকে ‘গুরু’ মানতেন। এক সময় বাধ্য হয়েই বন্ধুর গাড়িতে ব্যাকসিটের পাদানিতে শুয়ে এ পার বাংলায় পালিয়ে আসেন।
ঢাকা থেকে কলকাতায় চলে এসে বদলেই গেল দেশ অন্ত প্রাণ এক ‘সাম্যময়’ ছেলের জীবন। পরবর্তীতে ‘বাঙাল’ ভাষাকে নিজের শিল্প-জীবন দিয়ে খ্যাতির অসীম উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। হাস্যকৌতুক শিল্পে নতুন এক ঘরানার জন্মও হয়েছিল তাঁর হাত ধরে। মঞ্চ-চলচ্চিত্র-শ্রুতিনাট্য— স্বরক্ষেপণই জানিয়ে দিত তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। আজ ২৬ অগস্ট আজীবন ইষ্টবেঙ্গলের একনিষ্ঠ সমর্থক এই মানুষটির জন্মদিন।

বাংলা চলচিত্র জগতের শ্রেষ্ঠ সংলাপের তালিকা করলে তাতে থাকবেই ” মাসিমা মালপো খামু”
অথবা,
ভানু: আমি ত বাঙাল। আপনে কি?
চরিত্র: আমি আবার কি? বাঙালি।
ভানু: তাইলে কি খাড়াইল?
চরিত্র: কি আবার খাড়াইল?
ভানু: কথাডারে ব্যাকরণে ফেলান। আমি হইলাম বাঙাল আর আপনে হইলেন বাঙালি। তার মানে আমি হইলাম পুং লিঙ্গ আর আপনে হইলেন স্ত্রী লিঙ্গ।
কিংবা,
ভানুঃ অকালমৃত্যুই যদি হবে, তবে জন্মালো কেন?
জহরঃ আজ্ঞে, ঠিকই তো, আমার সব কিরকম গুলিয়ে যাচ্ছে!
নমুনা দুইঃ
জহরঃ আজ্ঞে, সে আপনি ঠিক বলেছেন, দেবতারা যত না খাচ্ছেন, তার থেকে বেশি ছড়াচ্ছেন।
ভানুঃ ছড়াচ্ছেন! ছড়ানো বের করছি, একবার ফিরে যাই, কন্ট্রোলের লাইনে চালের জন্য যারা গুঁতোগুতি করছে, তাদের কাছে ব্যাপারটা ফাঁস করে দিচ্ছি; এরপর তারা যখন স্বর্গরাজ্যে এসে হামলা চালাবেন, তখন কত্তারা বুঝবেন ফুড ক্রাইসিস কাকে বলে!
জহরঃ হেঁ হেঁ হেঁ…তা তো বটেই!

আজ তাঁর একশোতম জন্মদিবসে লেখা সম্পাদকীয়র অর্ধেকটাই তাঁর সংলাপ দিয়ে সাজালাম, আসলে কিছু মানুষ নিজেই একটা রচনার মতো, সেখানে গঙ্গাজলেই গঙ্গাপুজো সারলাম না হয়…

প্রাপ্তি সেনগুপ্ত

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।