পত্রসহিত্যে প্রভাত মণ্ডল – ২
পত্র নং – দুই
অন্তহীন অবসর
প্রিয় প্রভাতী,
ওই দেখ!আকাশে সেদিনের মত আজও রংধনু।দিগন্তজোড়া ধূ ধূ ফাঁকা মাঠ,শুধু আমি একা নদীকূলে বসে।বিস্তীর্ণ জলরাশি আমাকে দুহাত বাড়িয়ে ডাকছে।পানকৌড়িগুলো অবলীলাক্রমে ডুব দিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে,চকিতে নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছে আমার চোখের গোচর হতে।আবার হঠাৎ করেই ফিরে আসছে সে,কিন্তু তুমি!আজও এই জলে ডুব দিয়ে আমার সাথে বিরহের খেলায় মেতে আছ :
ফিরে এস সখা ডাকি বারেবার
ফিরে এস সখা আঁখি জলে ভাসি!
ফিরে এসে সখা হাতে রাখো হাত
ফিরে এসে দেখ আমি বানভাসি।
এসে দেখ! সেই দিনগুলোর মত আজও বেশ কিছুটা দূরে,মাঝি খেয়া পারাপারে ব্যস্ত।ঘাটের কাছেই পাকা রাস্তাটায় জনকয়েক দাঁড়িয়ে।সকলেরই মুখচ্ছবি অস্পষ্ট।বারে বারে খুঁজে চলেছি শুধুই তোমার মুখ, কিন্তু তুমি তো আজ অনেকটা দূরে,ওই মেঘেদের দেশে,তারাদের দেশে।
মনে পড়ে সেই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো!এখানেই আমরা দুজনে হাতে হাত রেখে হারিয়ে যেতাম এক অজানা নিরুদ্দেশে।নদীর কূলে বসে দুজনে পায়ের পাতা ডুবিয়ে দিতাম জলে।তুমি অপলক চোখে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে।মাঝে মাঝে হাত বাড়িয়ে জল তুলে ছুড়ে দিতে আমার গায়ে।এসব দেখে একদিন উপেন মাঝি মাঝগাঙ থেকে চিৎকার করে বলেছিল – “বিহা মারাইচো?বিহা?ঘরে দরজা দিয়া পিরিত করো গিয়া।গাঙ আমাগো মা,এহানে বইসা এইসব ললনা-ছলনা চলবেনানে।” লজ্জায় সেদিন উঠে এসেছিলাম ওখান থেকে।তবে অবসর পেলেই ওখানে চলে যেতাম দুজনে।
আজ অন্তহীন অবসর,অনেকটা দিন পেরিয়ে এসেছি।এখন একাই গিয়ে বসি,পা ডুবিয়ে দিই জলে।নদীও কলকল ধ্বনিতে বয়ে চলে।আমি সে কলতানে তোমার কণ্ঠস্বর শুনতে পাই।তুমি যেন চিৎকার করে ছুটে আসতে চাও আমার কাছে,দুহাতে হাত রাখতে চাও,জড়িয়ে ধরতে চাও আমাকে।কিন্তু কোথায় তুমি!