সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে পিয়াংকী (পর্ব – ১৫)

স্টেশন থেকে সরাসরি

ইংরেজি ২রা অগাস্ট ২০২১
বাংলা ১৬ই শ্রাবণ ১৪২৮
সোমবার

কতদিন হয়ে গেল ট্রেন নিয়ে নাড়াঘাঁটা করা হয়নি। লাইনের পাশের পাথরগুলোকে ডেকে বলা হয়নি, ” এই তোর বাড়ি কোথায়?” এটাও জিজ্ঞাসা করা হয়নি, ” এই যে চব্বিশ ঘণ্টা চিৎ হয়ে শুয়ে থাকিস তোর বুকে পাথর জমেনি আজও? “। দিন শেষ হয়ে এলে মশারীতে বসে গোনাগুনতি করার পর মনে হয় ভুল হয়ে যাওয়াটাই একসময় আসলে ঠিক হবার মাপকাঠি
ভুল।জীবনের একমাত্র প্রতিষ্ঠিত সত্য। এগোতে এগোতে আমরা মাড়িয়ে যাই অসংখ্য শ্রাবণ কদমকুঁড়ি। বাঁদিক ঘেঁষে যে পথ চলে গেছে ওই কুঁড়েঘরের দিকে সেই রাস্তার পাশে শুকনো পাতার মত পড়ে আছে অজস্র ভুল।এরা অনেকেই তুমুল সুন্দরী, অনেকে নাচগান ইত্যাদি জানে কিন্তু কোনো সাম্মানিক জীবনে এরা পায়নি শুধুমাত্র ওই ভুল করার জন্য, ভুল বলার জন্য অথবা ভুলে যাবার জন্য। ভুলতে ভুলতে তাদের গায়ে গজিয়েছে শিকড়, এক ভুল পেঁচিয়ে নিয়েছে আরেক ভুলকে।সেই থেকে অন্য আরেক ভুল।এভাবে ক্রমশ ঘন সবুজ অরণ্য হয়ে উঠেছে ভুলের অস্তিত্ব।
চোরাবালি বলি যাকে, যাকে বালিশের নীচে মাদুলি বানিয়ে নিয়ে শুইয়ে রাখি… এ সংসারে যিনি বিলাসী নুন,তিনিই পরিণত ভুল।চোরাবালিতে পা সেঁটে যাচ্ছে জেনেও যেভাবে এগিয়ে তার গলায় ওঠে জুঁইয়ের মালা তাতে আর কিছু প্রমাণ হোক না হোক এটা প্রমাণিত হয় যে চলার পথে ভুলকে একা ছেড়ে এগিয়ে যাওয়া একটি শব্দে অসম্ভব।
এই তো কয়েকদিন আগের ঘটনা। তখনও মা বেঁচে ছিলেন।থাইরয়েড ছিল। খুব ভুলে যেতেন।আমরা রাগ হতাম।তিনি রাগে ফুলে টসটসে।আমরা লটকন-এর মত ঝুলতাম তার গায়ের ওপর ।আমার দিদা।অ্যালঝাইমার পেশেন্ট ছিলেন।ভুলে যেতেন খুব।পরে দোষারোপ করতে ছাড়তেন না একফোঁটা। তখনও অ্যান্ড্রয়েড আসেনি।বিশ্বায়ন হয়নি আজকের মত করে।এখন মনে হয় পঁচিশ বছর আগের দিনকাল হলে তার কথা রেকর্ড করে রেখে তাকেই শোনাতাম।কিন্তু সময় বড় বালাই।ঝরে যায়। গাছের নীচে বিছিয়ে থাকে হলুদ পাতার মত।দিদার সাথে কত্ত ঝগড়া করেছি।বুড়ি বলে ডেকেছি দিনের মধ্যে অন্তত পঞ্চাশবার। এখন ফোস্কার মত গাঁয়ে বিঁধে থাকে সেইসব আদুরে দিনগুলো
গাছের পাতা ফুল ফল কত কত অংশ। অথচ কেন জানিনা আমার ফুলফলের চেয়ে অনেক বেশি ভালবাসা পাতার ওপর। লাল নীল হলুদের চেয়ে বরাবর সবুজ আমায় টানে বেশি। নিজের সাথে নিজেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি।মাথা বলে, “তুমি ফুল কেন ভালবাসোনা? পাতা তোমার প্রেমিক কিভাবে হতে পারে?”। তাকে হাসতে হাসতে বলি,” রান্না আমার প্রথম প্রেম।পাতা গাছের রান্নাঘর। “।
ভুলবোঝাবুঝি সেরে এগিয়ে আসি নিউজ চ্যানেলের পাশে। ভুয়ো অফিসার শুনলেই নারকেলের কথা মনে পড়ে। আমার বাবা (শ্বশুরমশাই) নারকেলের ছোবড়া ছাড়ানোর সময় প্রথম কোপেই মাটির সাথে তার আঘাতের শব্দ শুনে বলে দিতেন,” ঋতু এইডা ভুয়া হইব,ঘর থিক্যা আরেকখান নিয়া আইস”
দোষ দিই না। বরং দরজা খুলে রাখি। আয়নায় নিজেকে দেখি বা রাস্তায় হাজার ভুলভাল চরিত্র। মনে হয় বাবার হাতে কাঠারীটা তুলে দিয়ে বলি, “এই নাও বাবা,ভুয়া বের করার দায়িত্ব আজ থেকে সরকার তোমার হাতে তুলে দিয়েছেন”…
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।