মার্গে অনন্য সম্মান প্রণতি গায়েন (সেরার সেরা)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

পাক্ষিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ২০
বিষয় – আলোর উৎসব দীপাবলি

‘এসো আলো ,এসো হে ‘!

মা এবার ওবাজি আনবে না?কাল তো পূজো !
মেয়ের কথায় চকিত ফিরে পেয়ে অজন্তা একটা কেশ হিস্ট্রি দেখতে দেখতে ঘড়ির দিকে তাকায়–এ কী!নটা বেজে গেছে?তাড়াতাড়ি ফাইল রেখে উঠে মেয়েকে একটু আদর করে বলে –এবার নিশ্চয় ফেরার পথে আনব মনা!তুমি টেনশন নিও না।তোমার মামণি তোমার কথা ভাবে তো !
—কিন্তু !তুমি তো…..?
–না, এবার সব হবে কেমন !এখন আমি তো বের হবো।তারপর ফিরে সব হবে সোনা !
–আচ্ছা মামমাম এবার পূজোতে দাদাই,দিদা আসবে না?
–আসবে মনা ।আগামীকাল ওরা আসবে।যাকগে শোন আমার আজ ফিরতে একটু লেট হবে,তুমি কিন্তু লক্ষীমেয়ের মতো চুপটি করে থাকবে।ঠাম্মাকে বিরক্ত করবে না একদম।সময় মতো খাওয়া দাওয়া ও হোম ওয়ার্ক গুলো করে নিও।
কথাগুলো একটানা বলতে বলতে অজন্তা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে ডানহাতে রিষ্টওয়াচটা পরতে পরতে মেয়ের গালে দুটো হাম্পি খেয়ে -মা আসছি বলতেই…
ছন্দাদেবী এসে বলেন–আরে ব্রেকফাস্ট তো করে যা !
–না মা,বডড দেরি হয়ে গেছে ।আজ আর ….
–চুপ করে বসো টেবিলে।যা বলছি শোন-
এই ছন্দাদেবীর কথায় এমন স্নেহমিশ্রিত আদেশ থাকে যা কেটে অজন্তা বের হতে পারেনা।এই ভদ্রমহিলার সোহাগভরা ভালোবাসার কলসের অবিরত বারিধারায় অজন্তাকে প্রতিনিয়ত সিক্ত করে এক অদ্ভুত ভালোলাগার শক্তি জোগায়।তাই হাসিমুখে উনার সব আদেশ অজন্তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে।
ছন্দাদেবী বাচ্চার মতো অজন্তার মুখে পরোটাটা ঢুকিয়ে দেয়।তারপর শাশুড়ীমার হাতে খাবার খেতে খেতে মেয়েকে আদর,শাশুড়িমাকে ছুটতে ছুটতে-‘আসছি’ বলা যেন ওর নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়।তারপর ছন্দাদেবী ‘দুগ্গা দুগ্গা’ করতে করতে মাথা ওপরদিকে ঠেকিয়ে নাতনিকে খাওয়াতে লাগা ,যেন এবাড়ির সেই চিরাচরিত রুটিন হয়ে দা়ঁড়ায়।
অজন্তা গিয়ে শোনে একটা ক্রিটিক্যাল পেসেন্ট ভর্তি হয়েছে, ইমিডিয়েট অপারেশন করতে হবে।ডক্টর মিত্র ও নার্সের কাছে সমস্ত ক্রাইটেরিয়া, সমস্ত রিপোর্ট পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখে ঘড়ি দেখে বলে–এখন তো বাজে দশটা।আমি দুপুর বারোটার সময় ওটি করব,পেসেন্ট এর বাড়ির লোকজনকে থাকতে বলুন।কন্ডিশন খুব একটা ভালো দেখছি না, তাছাড়া যেন ব্লাডও রেডি থাকে।কথাগুলো ডক্টর মিত্রকে বলেই অজন্তা ভর্তি পেসেন্টদের ভিজিটে চলে যান।একঘন্টা ভিজিটে গিয়ে ফিরে এসে নিজের চেম্বারে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে ও টির পেসেন্টের কেশ,রিপোর্ট দেখতে দেখতে হঠাৎ লকার খুলে একটা পেপার বের করতেই বহু পুরাতন ওর আর সৌরভের একটা ছবি ও একটা চিঠি নিচে পড়ে যায়।ছবিটা চিঠিটা তুলে চেয়ারে বসে একমনে দেখতে দেখতে চলে যায় সেই চৌদ্দ বছর আগের স্মৃতির পটে…
সেদিন ফোর্থ ইয়ারের ক্লাসের শেষে শনিবার বাড়ি দুর্গাপুর ফিরছিল ।শীতকাল বিভূতি মানে অনেক রাত-তাই ভয় একটু লাগছিল, সাথে প্রচণ্ড ভিড় !একটা সিট ও পায়নি, অথচ শরীর যেন ক্লান্তিতে শয্যা নিতে পারলে বাঁচে।ঝুলন্ত অবস্হায় ওই ভিড়ে চোখ ঢুলে আসছে দেখে একজন মোটামুটি হ্যান্ডসাম ছেলে জানালার সামনে বসেছিল।অনেকক্ষণ এই অবস্থায় অজন্তাকে দেখে সিটটা তাকে দেয়।অজন্তা দেখল শুধু সিট দেওয়া নয়,তাকে ভিড় থেকে রক্ষা ও করছে।ছেলেটি জানালো সে কলকাতার একটা ব্যাঙ্কে সার্ভিস করে-নাম ঋতম মজুমদার।বাড়ি দুর্গাপুর হওয়ার সুবাদে ও অজন্তাকে দু একবার ট্রেনে যাতায়াত করতে দেখেছে।ভালোই হলো অজন্তা একটু সাহস পেল,বাড়িতে বাবাকে বললো চিন্তা না করতে।তারপর দুর্গাপুরে নেমে অজন্তা বাবার সাথে পরিচয় করে দিলে ওর বাবার ও খুব ভালো লেগে যায় ছেলেটিকে।এইভাবেই পরিচয়, ফোন নাম্বার দেওয়া নেওয়া থেকে প্রেম।দুজনে মাঝেমধ্যে জীবন যুদ্ধ থেকে অক্সিজেন নিতে গঙ্গার বুকে প্রেমালাপ -একটা স্বপ্ন মাখা স্বর্গীয় সুখের বাসার সন্ধান একটু একটু করে পরস্পর নিকট সান্নিধ্যে আসার পর এই আকাঙ্খার ভুবনটির সন্ধান পেয়েছিল।অজন্তা মেডিক্যালের স্টুডেন্ট হলেও সাহিত্যে ছিল তার অগাধ ভালোবাসা।তাই ধীরে ধীরে ঋতমের সাহিত্য প্রতিভাকে অজন্তাই আবিস্কার করেছিল।তার অনুরোধে প্রথম ঋতম লেখনী ধারণ করে বুঝেছিল এখানে সে একমাত্র সহজ,স্বচ্ছন্দ ও অনায়াস; ফলত ঋতমের মধ্যে যশ:প্রার্থী নব্যলেখক উৎসাহ পেত,অজন্তা পেত উন্মাদনা।এইভাবে কৃতজ্ঞতা, ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার গভীরতায় একে অপরে ডুবে বাড়তি অক্সিজেনে দুজনের ভবিষ্যৎ জীবন উজ্জ্বল হতে থাকে।অজন্তা দারুণ রেজাল্ট করে বেড়িয়ে এসে আপাতত একটা বেসরকারিতে জয়েন করে। এদিকে ঋতম একদিকে সাহিত্য জগতের সাথে সাথে একসময় ব্যাঙ্কের ম্যানেজার হয়ে যায়।একটা সময় ক্যারিয়ারের পর উভয় বাড়ির ইচ্ছায় বিয়ে হয় খুব জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে।
শুরু হয় জীবনের আরেকপর্ব-এতদিন কর্তব্যহীন,দায়িত্বহীন শুধুই আবেগে ভেসে যাওয়া।এবার দায়িত্ব কর্তব্য রেখে প্রেম, সাথে দুজনের কর্মে অস্বাভাবিক চাপ।প্রথম একবছর যেন স্বর্গীয় স্বপ্নময় জগত ছিল, ব্যস তারপর অজন্তা প্রেগনেন্ট হলে দুজনের দায়িত্ব যেন আরো বেড়ে গেল।ক্রমে অজন্তা একটা ফুটফুটে মেয়ের জন্ম দিলে সবাই খুব খুশি।ঋতমের মায়ের তো ওকেই নিয়েই জগত।বেশ সুখেই কাটছিল জীবন।ইতিমধ্যে অজন্তা জয়েন করেছে,শাশুড়ি মার কাছেই মেয়ে বড় হচ্ছে।ডিউটি শেষে অজন্তা ছুটে আসে মেয়ের জন্য আকূল হয়ে।কিন্তু একটু একটু করে ঋতম যেন কেমন বদলে যাচ্ছে।মাঝেমধ্যে সংসার থেকে উদাসীন হয়ে ছাদে একা একা কী যেন ভাবে !আজকাল অজন্তা সব লক্ষ্য করছে,কিন্তু সেও আর পেরে ওঠেনা।সারাদিন অপারেশন, রোগী,সংসার, মেয়ে-তার যেন নাজেহাল অবস্থা !তবুও ভালোবাসায়,শ্রদ্ধায়,ঋতমকে একইভাবে জড়িয়ে রাখতে চেয়েছিল।কিন্তু ক্রমশ ঋতম যেন দুরে চলে যাচ্ছে, অজন্তা দুদিন জিজ্ঞেস করেও উদাসীন উত্তর ছাড়া এমন কোনো তথ্য পায়নি।কয়েকদিন ভালো রইলো সেবার সবাই মিলে দুর্গাপূজাতে,তখন মনা দেড়বছরের।সেবার কালীপূজার সময় দীপাবলির আলোর বাতিতে সারা বাড়ি যেন স্বর্গীয় কুবেরের উদ্যান।অজন্তার মা বাবা ও এসছিল, একমাত্র মেয়ের কথা অগ্রাহ্য করতে পারেনা।ছোট্ট মনা তুবড়ির আলো দেখছিল আর খিলখিল করে হাসছিল, সকলে আনন্দে বাজি ফোটাতে ব্যস্ত।ঋতম কিছুক্ষণ দেখে তারপর হাওয়া …….!সেদিন আর ঋতমকে পাওয়া যায়নি শুধু বেডরুমে টেবিলে একটা চিঠি রেখে গিয়েছিল।
সুপ্রিয়া,
অজন্তা আমি চলে যাচ্ছি এ বাড়ি ছেড়ে, তোমাদের ছেড়ে !আমার খোঁজ করোনা-কারণ আমি স্বেচ্ছায় এ নির্বাসন বেছে নিলাম।এই দুবছর আমার জীবন সম্পর্কে বড় বিতৃষ্ণা আসছে,হয়তো বলবে আমি জীবন পলায়ন, দায়িত্বজ্ঞানহীন,নিষ্ঠুর এক কাপুরুষ !হয়তো তাইই…!!কিন্তু বিশ্বাস করো,আমি এই কদিন চেষ্টা করলাম, তবুও পারছি না এই কূপমন্ডুক জীবন আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে !আমি প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে পারছি না, আমি স্বাধীন ভাবে বাঁচতে পারছি না।আমি প্রেম ও প্রয়োজনের ব্যালেন্স করতে পারছি না।তাছাড়া তোমার ক্রমাগত চাকরী,মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ততা যেন আমার মাঝে একটা সুক্ষ্ম সুঁতোর দেওয়াল তুলে দিচ্ছে-সেইভাবে তোমাকে আর যেন পাইনা,যে ছেলমানুষীভরা সুন্দর প্রেমের সান্নিধ্যে ,ঘনিষ্ঠ উত্তাপে একদিন আমায় আকুল করতে,এখন যেন সেই স্রোতস্বিনী নদীতে পলি পড়ে গেছে !আমার শূন্যতার গহীন অন্ধকার তোমাকে এখন স্পর্শ করেনা,মেয়েকে নিয়ে ও তুমি ব্যতিব্যস্ত !জানি কর্তব্য, কর্মে তুমি অনন্যা !কিন্তু কোথায় যেন অতৃপ্তি, পরাধীনতা আমার সুক্ষ্ম মনে চিড় ধরেছে।তাই কাউকে কিছু না জানিয়ে বিদায় নিলাম।মাকে,মেয়েকে দেখ-ওকে তুমি তোমার মতো করেই মানুষ করো!যদি কোনোদিন ইচ্ছে হয়,মনের পরিবর্তন সাধিত হয়;তাহলে আবার নিজেই ফিরে আসব।মেয়েকে পরে বলো যেন, তার এই অপদার্থ বাবাকে ক্ষমা করে দেয়,মাকে ও একই কথায় বলো।জানি ভীষণ কষ্ট পাবে,তবুও বলি খোঁজ করোনা।ব্যাঙ্কে নিয়মিত টাকা পাঠাবো,জানি প্রয়োজন হবেনা!হয়তো ঘৃণায় তাতে হাত ও দেবেনা, কিন্তু প্লিজ এইটুকু করতে দিও–
ইতি–
তোমার অপদার্থ স্বামী
ঋতম
চিঠিটা পড়তে পড়তে অজন্তার চোখ বেয়ে আবার জল নেমে আসে।রাগ ও ভীষণ হয় ঋতমের ওপর-একটা কাপুরুষ !হঠাৎ নার্স এসে ডাকলে স্তম্ভিত ফিরে পেয়ে বলে–হ্যাঁ, পেসেন্ট কে নিয়ে চলো ওটিতে।বাড়ির সাথে দেখা করাও,ঢোকাও আসছি ।
এরপর অজন্তা চোখে মুখে জল নিয়ে ফ্রেস হয়ে ওটির ড্রেস পরে সোজা ঢুকে যায়।টানা দুঘন্টা অপারেশন করে ,ব্লাড ও লাগে-এরপর বেড়িয়ে এসে অপেক্ষায় থাকা বাড়ির লোকজনকে জানায়-অপারেশন সাকসেসফুল !তবুও বাহাত্তর ঘন্টা অবজার্ভেসনে রাখতে হবে।
সন্ধ্যায় মেয়ের জন্য অনেক বাজি,তুবড়ি কিনে বাড়ি ফেরে।ছন্দাদেবী হঠাৎ এ পরিবর্তন দেখে আনন্দ পেয়ে বলে–এটাই আমি চেয়েছিলাম, তুমি এই ট্রমা থেকে বেড়িয়ে এসো!সে তো দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো চলে গেছে বলে তুমি বা মনা কেন আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবে?কেন বাজি ফোটাবে না,কেন আলো জ্বালাবে না?আজ তুমি না আনলেও আমি প্রচুর বাজি এনেছি আজ তোমাদের মুক্তি দেওয়ার জন্য…!
–মা ?
–হ্যাঁ, অজন্তা !এতদিন ছোট্ট মেয়েটা পর্যন্ত বঞ্চিত ছিল, যে বাবা অপদার্থ, তার জন্য কেন মেয়েটা বা তুমি জীবনে এত দুঃখকে বরণ করবে?এবার থেকে এবাড়ি আবার আলোর রোশনায় ভরে উঠবে,আবার মনা নাচবে,গায়বে,আনন্দ করবে !
–মা? কী বলছ এসব?
–ঠিক বলছি।এতদিন ছিলাম ছেলের মা।আজ থেকে শুধুই তোর মা-আমার মেয়ের মা!
মনা আনন্দে নেচে ওঠে হাততালি দিয়ে –কী মজা!কী মজা!আজ বাজি ফাটাবো…..!
–আরেকটা কথা অজন্তা !এতদিন যে কষ্টটা বুকে নিয়ে ছিলাম, আজ তা সর্বসম্মুখে তোর মা বাবার কাছেই বলছি..যদি এতবছরে তোর কোনো ভালো ভালোবাসার বন্ধু থাকে তাও বলিস-আমি নিজে থেকে তোদের বিয়ে দিয়ে মায়ের কর্তব্য পালন করব।
–কী বলছ তুমি জান মা ?আমি একজন মাও..?
–হ্যাঁ, জেনেই বলছি।একটা অপদার্থ পুরুষের জন্য তোর এত কম বয়স থেকে জীবন থেমে যাবে?আর মেয়ের কথা-ওর জন্য আমি আছি তো!
–মা,তুমি ভালো করেই জান আমি ঋতমকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম এবং আজ ও ভালোবাসি !তাই একথা বলে কেন আমায়….?আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে মা..!কেন কেন?
–দেখ মা ‘স্মৃতির মধুর আবেশ নিয়ে পথ চলতে হয়,স্মৃতির মধ্যে ডুবে থাকলে স্হবিরতা ঘোচে না,জগতে চলমানতার সঙ্গে মানিয়ে চলা যায় না।’তাই স্মৃতি আগলে তো জীবন চলে না?জীবন একটাই! যাক অনেক ভারি ভারি কথা বলে ফেললাম এতক্ষণ চলো সবাই আনন্দ করি !!
সকলেই চোখ মুছে বাজি ফাটাতে লাগলে অজন্তা দেখে শাশুড়ি মার লুকিয়ে চোখ মোছা !
অজন্তা কিছুক্ষণ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মনটা ঠিক করে এসে দেখে ততক্ষণে নবীন সারাবাড়ি টুনি বাল্বে,মোমবাতিতে একেবারে স্বর্গপুরি বানিয়ে দিয়েছে।অজন্তার মনে পড়ে ঋতমের চলে যাওয়ার পর ওই বাড়ি ভাড়া দিয়ে এই কলকাতা পি জি হাসপাতালে জয়েন করে নিজে এই বাড়িটা কিনেছে।শাশুড়ি মার খুব পছন্দ !সব কিছুই অজন্তার ডেকোরেশনের ফল।আজ সারা
বাড়িতে আলো ঝলমল করছে!ও কী দারুণ লাগছে !আজ যেন সমস্ত প্রাপ্তির মধ্যে ও একটা অপ্রাপ্তি কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে !কী অপরাধ ছিল তার?কেন জীবনটা এত বেরঙীন হয়ে গেল?
এমন সময় অজন্তার মায়ের হাত পিঠে–চল মা সবাই অপেক্ষা করছে ।
–হ্যাঁ, চলো মা।
সবাই বাজি ফোটাতে ব্যস্ততার মাঝে অজন্তাকে অনুরোধ করে একটা গান শোনানোর জন্য।অজন্তা স্মৃতির আবেশে সেই —
“এসো আলো,এসো হে,তোমায় সুস্বাগতম !”গানটি গায়তে শুর করলে সকলে বিভোর হয়ে শুনছে….!!এমন সময় রাস্তায় পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটা গাড়ি এই বাড়িটির আলোক-সুসজ্জিত রূপটি দেখতে দেখতে হঠাৎ এই চির পরিচিত গানটি শুনে আশ্চর্য হয়ে –গানটি কে গায়ছে দেখার জন্য এই অপরিচিত বাড়িতে কলিং বেল টিপে নবীনের সাহায্যে এইস্হানে এসে দেখে-অজন্তা!ও অবাক হয়ে কিছু বলার আগেই অজন্তা ‘ঋতম’বলে চিৎকার করে ওঠে।
ছন্দাদেবী কাছে এসে ‘খোকন’বলতে গিয়ে দমে গিয়ে বলে–তোমাকে একমাত্র যদি অজন্তা ক্ষমা করে দেয়,তবেই আমি স্বীকার করবো ছেলে বলে!নয়তো..?
–নয়তো কী মা!আমি ভুল করেছি জানি তো !কিন্তু এই গত দুবছর আমি ক্রমাগত তোমাদের খুঁজে চলেছি।ওই পুরাতন বাড়িতে গিয়ে ঘুরে এসছি।ওরা বললো কলকাতায় আছে কিন্তু কোথায় জানি না।আমি হন্যে হয়ে…
–—-তাতে লাভ !কর্তব্য ,দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে কাপুরুষের মতো ..!
-মা।আর পুরাতন কথা না বলে আমায় একটু ভালোবেসে বুকে টেনে নাও না ?আমি ভীষণ ভীষণ ক্লান্ত, অনুতপ্ত…!ঋতমের হাতজোড় করে মায়ের কাছে প্রার্থনা দেখে অজন্তা থাকতে না পেরে-মেয়েকে বলে-ওই তোমার বাবা মনা !যাও কাছে যাও।
মনা কাছে এলে ঋতম জড়িয়ে ধরে পিতৃসুখের কী সুখ !তা এই প্রথম অনুভব করে…..আনন্দে আত্মহারা !সবার চোখের আনন্দ্রাশু দেখে অজন্তা আনন্দে ডাকে নবীনকে–আজ সারা বাড়ি আলোতে আলোতে ভরিয়ে দাও নবীন।দেখ কোথাও যেন এতটুকু অন্ধকার না থাকে ।আজ আলোর খুশিতে ঘুচে যাক সব অন্ধকার ……..!
এবার ঋতম মনার হাত ধরে, অজন্তার কাছে এসে তার হাত ধরে শুরু করে–“এসো আলো,এসো হে,তোমায় সুস্বাগতম ……….!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।