গল্পবাজে পাভেল ঘোষ

ভূতের কবলে ভটামদা

কদিন ধরেই শীতে কাঁপছি। ‘দার্জিলিং’ মনের ভিতর থেকে বেরিয়ে একদম চোখের সামনে নৃত্য করছে। একে বেদম শীত,তার উপর আবার খাড়ার ঘা করোনার মাসতুতো ভাই ওমিক্রনের আবির্ভাব।
ষড়যন্ত্র একটা চলছে…,খুব বুঝতে পারছি সবাই। কিন্তু কিছু করতে পারছি না। হাত,পা,মুখ সব কিছুই একটা অদৃশ্য বন্ধনে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা। কোথাও না কোথাও,কেউ না কেউ নিবিড়ভাবে সমস্ত সিস্টেমটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা জনগণ বুঝছে বিলক্ষণ,কিন্তু সব কথা প্রাণ খুলে বলতে নেই। উঁহু…..! তাহলেই সুবিধা হারানোর ভয়,নয়তো উত্তম মধ্যম পেঁদানি খাওয়ার ভয়।
রোদে গা পুরো সেঁকছি,আর ভাবছি মুক্তি কবে পাবো এই দম বন্ধ করা পরিস্থিতি থেকে।
“কি মাস্টার, স্কুল বন্ধ। ভালোই তো আছো…!”
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি ভটামদা।
ভালো যে আমরা কেউ নেই,সেটা আমাদের থেকে আর কেউ ভালো জানে না। সবাই অর্থ দিয়ে মাপছে সবকিছু, বুঝতে পারছি। শিক্ষকতার মত একটা ঐতিহ্যবাহী পেশাকে অদম্য আকর্ষণ থেকেই বেছে নিয়েছিলাম আমি। পরিস্থিতি এখন এমন, প্রতিদিনই অসম্মান জুটছে কপালে।হজম করলাম কষ্ট করে।বেদনাটা বুকে চেপে বললাম,
“বুঝতে পারছি সবই ভটামদা। অনলাইন এডুকেশনকে মান্যতা দিতে গিয়ে করোনার কাঁধে বন্দুক রেখে ফায়ার করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আর স্কুলে শিক্ষক খুঁজে পাবেন না,সব পাবেন মোবাইল,ট্যাবের পর্দায় ভার্চুয়াল। আর আপনি এইসব না ভেবে জ্বলছেন,আর লুচির মত ফুলছেন…!”

“বুঝেছি গো..! তাহলে তো আগামীদিনে শিক্ষককে কৃষক হতে হবে মাস্টার। তবে ওদের মত মেরুদন্ড তোমাদের নেই। তোমরা সব ল্যালাকার্তিকের দল..! মাঝখান থেকে ছেলেমেয়েগুলোর ভবিষ্যত রসাতলে গেল..”
এক নিঃশ্বাসে বলেই ভটামদা রাস্তার মধ্যে শব্দ করে থুতু ফেললেন বার তিনেক। এমন অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতির মাঝে মধ্যেই পড়ি।রাস্তায় থুতু দেখে বুঝতে হয় এই পোড়া দেশে,কোন ঋতু চলছে।শীতকাল আসছে বুঝি,রাস্তা জুড়ে থুতুর প্রকৃতি দেখে..! ওহ..! অসহ্য।
ভটামদা একদম চোখের সামনে কাণ্ডটি করলো দেখে গলা উঁচিয়ে বললাম,”ভটামদা,কি করলেন এটা..? আপনার কাছে এটা আশা করিনি।”
“একদম পরিষ্কার থুতু মাস্টার,কোনো গুটকা নেই,সর্দিও নেই..! তোমার চিন্তা নেই গো।”
শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলাম।এই প্রথম শুনলাম,’পরিষ্কার থুতু…! ছাত্র হলে, কানের গোঁড়ায় দিতাম একটা..।
কোনোরকমে নিজেকে সামলে নিলাম।
“আগমনের হেতু ভটামদা..?”
গম্ভীরকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলাম।
“একটা চ্যালেঞ্জ করেছি। তোমাকে জাজ হতে হবে…”
“চ্যালেঞ্জ..! কার সাথে..?”
এবার মুচকি হাসলেন ভটামদা। বুক ফুলিয়ে বললেন, “করোনার সাথে..”
“করোনার সাথে..! আপনার মাথাটা খারাপ হয়েছে নাকি..?”
“করোনা হলো করুনাময়ী।আমার আদরের করোনা…! তোমাদের পুলিশবৌদি।”
“এবার বুঝলাম।তো চ্যালেঞ্জটা কিসের শুনি..?” এবার আমি আর গম্ভীর থাকতে পারলাম না। হেসেই ফেললাম। ওহ..! পারেন বটে ভটামদা।
“শোনো মাস্টার,রায়দিঘী চেনো..?নারকেলগাছ দিয়ে ঘেরা..”
“বিলক্ষণ চিনি। কিন্তু এর সঙ্গে চ্যালেঞ্জের কি সম্পর্ক,সেটাই তো মাথায় ঢুকছে না।”
এবার ভটামদা পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলেন। নিবিড়ভাবে দু একবার ডান হাতের তর্জনী স্ক্রিনে স্পর্শ করতেই কানে এলো মুঠোফোনে বৌদির পুলিশি কণ্ঠ।
‘তুমি যদি রায়দিঘীর পশ্চিম পাড়ে বেল গাছের তলায় খুঁটি পুঁতে আসতে পারো,তাহলে দশ হাজার নগদ আমায় দেবে। আর যদি না পারো তুমি মদটা ছাড়বে..। চ্যালেঞ্জ…??’
‘চ্যালেঞ্জ আ্যকসেপটেড..!! কবে পুঁততে হবে বলো করোনা…?’ ভটামদার প্রত্যুত্তর কানে এল।
‘আগামীকাল…’
বৌদি বলতেই ভটামদা ফোন থেকে অডিও বিচ্ছিন্ন করে দিলেন।
“শুনলে ভায়া..! বাড়িতে শালা ,শালীদের সামনে একদম রেকর্ড করে রেখেছি ; যাতে অস্বীকার না করতে পারে। এই আগামীকালটা হলো আজ।”
“কিন্তু ভটামদা শুনেছি,রায়দিঘীতে গিয়ে গতবছর নন্দীপাড়ার বাপি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল..! কেন এই বয়সে ঝুঁকি নিতে যাচ্ছেন..?”
“শোনো মাস্টার,আজ পর্যন্ত প্রত্যেকটা লড়াইয়ে আমি শেষ মুহূর্তে হেরেছি। তবে ইচ্ছে করে,বুঝলে…। ওর আনন্দেই তো আমার সুখ।”
“এবারও কি ইচ্ছে করে হারবেন..?”
“এবারটা আমি জিততে চাই। নাহলে ওর কাছে জয় পাওয়াটা একঘেয়ে হয়ে যাবে মাস্টার..”
কথা শুনে বুঝলাম,ভটামদা ভাঙবে তবু মচকাবে না। এমন মানুষই এখন সংখ্যায় বেশী।

দুপুরে খেয়ে দেয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি,হঠাৎ মুঠোফোনটা বিকট শব্দে বেজে উঠলো। একটু বিরক্তির সাথে ধরলাম ফোনটা।
“হ্যালো..!”
“মাস্টারদা বলছেন..?” পুলিশবৌদির গলা।
“বলুন…” একটা হাই উঠলো আমার।
“চ্যালেঞ্জের কথাটা শুনেছেন..?”
“শুনেছি সকালে..”
“বাড়িতে অনেক আত্মীয় পরশু থেকে। সবার সামনেই চ্যালেঞ্জটা হলো বুঝলেন।”
“এবার আপনি হারবেন বৌদি..! ভটামদার মধ্যে যা কনফিডেন্স দেখলাম..!”
“দেখা যাক.…। আপনি তো বিচারক। ঘুষ খাবেন না কিন্তু আমাদের মত..!”
বৌদির কথা শুনে হেসে ফেললাম। বললাম,
“না,না,তা কেন..। কিন্তু আমি থাকবো কোথায়..? আর জানবোই বা কি করে.?”
“আপনাকে একটু কষ্ট করতে হবে মাস্টারদা…!”
“কষ্ট..! পুলিশে বললে তো করতেই হবে।” আমি দেতো হাসি হাসলাম।
“না মাস্টারদা, আপনার জন্য বেল গাছের পাশে বট গাছের উপর মাচার ব্যবস্থা করেছি। একটু কষ্ট করে রাতে খেয়ে দেয়ে চলে যাবেন..”
শুনে আমার ভিতরে ভয়ের একটা অদৃশ্য তরঙ্গ মাথা থেকে পা পর্যন্ত চলে গেল। গায়ে কাঁটা দিচ্ছে, বুঝতে পারছি। এদের চ্যালেঞ্জের ঠেলায় আমার প্রাণ তো দেখছি ওষ্ঠাগত..!
বিরক্তিটা বুঝতে না দিয়ে ‘রাখছি’ বলে ফোনটা রেখে দিলাম।

রাতে খেয়েদেয়ে গিন্নির কাছে গুটিকয়েক ‘গালমন্দ’ হজম করে একটা বড় টর্চ নিয়ে বেরিয়ে পড়লুম রায়দিঘীর উদ্দেশ্যে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ।
গুছিয়ে ঠান্ডা পড়েছে। দুটো সোয়েটার পরেছি,তাও মনে হচ্ছে কেউ ঠান্ডা জল ঢেলে দিয়েছে গায়ে। আমার সঙ্গে পুলিশ বৌদি জুড়ে দিয়েছে ওঁর ভাই অমিতকে। জনপদের শেষ প্রান্তে কুমোরপাড়ার পাশ দিয়ে মোরাম দিয়ে বাঁধানো রাস্তাটা রায়দিঘী পর্যন্ত চলে গেছে।
চাঁদের আলো বন্যার জলের মত চারিদিকে উপচে পড়ছে। গাছগুলো তাদের আকার অনুযায়ী স্থির হয়ে একটা অদ্ভুত অবয়ব ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে। তবে আজ মনে হচ্ছে,হাওয়ার ‘ছুটি’। গাছের একটা পাতাকেও নড়তে দেখছি না। মোবাইলের সুইচটা অন করে দেখলাম রাত এগারোটা পাঁচ।
‘জলি এল এল বি’ সিনেমাটা মনে পড়ছে। বিচারক কেমন একটা গদি গদি চেয়ারে বসে রায় দিচ্ছিলেন।আর আমি রায় দেব কিনা মাচায় বসে…!
“স্যার, অসুবিধা হলে বলবেন। দিদি বারবার বলে দিয়েছেন….”
ভটামদার শালা আমতা আমতা করে বলতেই মাথাটা গেল গরম হয়ে।
“ভূত আসলে রক্ষা কোরো, তাহলেই হবে.….”
এই ঠান্ডায় সবটাই অসুবিধা। আর বলে কিনা অসুবিধা হলে বলবেন…!
আল পথ ধরে গুটি গুটি পায়ে নৌকার মত হেলতে দুলতে পৌঁছে গেলাম রায়দিঘীর পাড়ে।
ছোট বেলায় সেই কবে গাছে চড়েছি,খেয়াল নেই।
“মাচায় উঠতে গেলে একটু তো কষ্ট করতেই হবে স্যার..”
আবার জ্ঞান দিচ্ছে হারামজাদা। কিছু বলার জো নেই।পুলিশের ভাই বলে কথা।
“সেতো বটেই…” আমতা আমতা করে বললাম।

মাচায় উঠে চুপচাপ বসে আছি কতক্ষন ঠিক নেই। দু একটা মশার কামড় খাচ্ছি। রায়দিঘীর টলটলে জলে দু একটা বড় মাছ লাফাচ্ছে গুপ গাপ শব্দ করে। নৈঃশব্দ্য এখানে মহারাজ।
আচম্বিতে আমার কাঁধে একটা হাত রাখলো কেউ।
“ক্কে.. কে….!” চমকে উঠলাম ভয়ে।
“স্যার আমি অমিত..। কিছু ভাবছেন..?”
“ব্ব..বলো..”
“ওই দেখুন …! জামাইবাবু আসছেন।”
চশমা খুলে চোখটা কোচলে নিলাম। চাঁদের আবছা আলোয় দেখলাম, দূরে আলপথ ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে একটা ছায়ামূর্তি। পরনে প্যান্ট , মাথায় টুপি। হাতে কিছু একটা আছে,তবে অস্পষ্ট আলোয় বুঝতে পারলাম না।
“ভটামদা মানে তোমার জামাইবাবু নয় মনে হচ্ছে ভাই…” আমি ফিসফিস করে বললাম।
“ঠিক ধরেছেন স্যার, আমিও বুঝতে পারছি না এত রাতে কে আসবে এখানে..? ব্যাপারটা খুব রহস্য লাগছে জানেন…”
আমাদের নিবিড় কথোপকথনের মাঝে ছায়ামূর্তিটা বেলগাছের সামনে দিয়ে দ্রুত অদৃশ্য হয়ে গেল দীঘির পশ্চিম পাড়ের দিকে।
হঠাৎ ডানা ঝাপটানোর মত একটা শব্দ কানে এল। শব্দের উৎস খুঁজতে ঘাড় ঘোরাতেই চক্ষু স্থির হয়ে গেল আমার..!
দেখি,অনতিদূরে একটা নারকেল গাছ সশব্দে নড়ে যাচ্ছে অনবরত। দেখে গা শিউরে উঠলো আমার। চোখ বন্ধ করলাম ভয়ে।
“স্যার, শুনছেন…,”
চোখ খুলতেই দেখি অমিতবাবু মুখের সামনে জলের বোতল ধরেছেন।
“জল খান স্যার, ভয় পাবেন না। বকগুলো ডানা ঝাপটাচ্ছে,এটা তারই শব্দ।”
অমিতবাবু ভাগ্যিস এসেছিলেন,নাহলে হয়তো এখানেই ‘হার্টফেল’ করতাম আমি।
সময় কাটাতে বিস্কুটের প্যাকেটটা সবে খুলেছি,হঠাৎ পাশ থেকে অমিতবাবু খুব সন্তর্পনে বলে উঠলেন,”স্যার,আপনার ভটামদা এবার সত্যিই আসছেন…। ওই দেখুন।”
এত অস্পষ্ট আলোয় সত্যিই কাউকে চেনা যায় না। কিন্তু ভটামদাকে চিনলাম ওঁর গলা শুনে।
“আমার কাছে নাইকো বুবু ভাজা বাদাম….!”
তারস্বরে অসহ্য গানটা গাইতে গাইতে বেলগাছটার দিকে এগিয়ে আসছেন। ওহ..! সোশ্যাল মিডিয়া কিনা করতে পারে…। বাদাম বিক্রেতার একটা গানকে সবাই প্রায় জাতীয় সংগীত বানিয়ে ফেললো..!
চুপচাপ দেখছি সব। ভটামদার পরনে লুঙ্গি। বেল গাছের সামনে ওঁর গলায় জনপ্রিয় লাইনটার শুধু শেষ দুটো শব্দ শুনছি।
“কাঁচা বাদাম…”
বাপরে..! গলার কি জোর। বুঝতে পারছি,ভটামদা ভীষণ ভয় পেয়েছেন।
হঠাৎ দেখি, বেল গাছের তলায় ঝুপ করে বসে পড়লেন ভটামদা। মুখ কিন্তু বন্ধ হয় নি। এবার গান বন্ধ করে বলতে শুরু করলেন,
“করোনা,এবার আমি জিতবো রে..! কাল সকালে খুঁটিটা দেখবি,আর লুচির মত ফুলবি…”
অনেকক্ষন আছি বলেই হয়তো চাঁদের ঝাপসা আলো কিছুটা হলেও স্পষ্ট লাগছে।
এবার ভটামদা ব্যাগ থেকে কিছু একটা বের করলেন। বুঝলাম খুঁটি আর হাতুড়ি।
ভটামদা খুঁটিটা পুঁততে যাবেন,ঠিক সেই মুহূর্তে শুনতে পেলাম রায় দীঘির জলে ভারী কিছু পড়ার একটা শব্দ।
‘গুউউ…..প..!’
“স্যার…,নারকেল গাছটা আবার নড়তে আরম্ভ করেছে..!” অকুতোভয় অমিত এবার ভয়ে গলতে শুরু করেছে। বুঝলাম ওর গলা শুনে।
“চুপ..! ভটামদার দিকে তাকাও…” আমি ওকে অভয় দিয়ে বললাম।
খুঁটির উপর সজোরে ঘা মেরে চলেছেন ভটামদা ‘রাম,রাম’ বলে। সত্যিই ওঁর সাহস আছে বলতে হবে। বিচারক হিসেবে ক্রমশঃ ভটামদার দিকেই ঢলে পড়ছি,বুঝতে পারছি।
এবার দীঘির জলে নারকেল আরো বেশী করে পড়তে লাগলো।
কিন্তু এর পরের মুহূর্তেই ঘটে গেল এক অভাবনীয় কান্ড। দেখি,খুঁটি পুঁতে ভটামদা যেই উঠতে যাবেন, খুঁটিতে গেলো লুঙ্গিটা আটকে । পিছন থেকে কোনো অশরীরী টেনে ধরেছে ভেবে তারস্বরে চিৎকার করতে লাগলেন, “কে কোথায় আছো,বাঁচাও.…..”
ওঁর আর্ত চিৎকার কানে যেতেই মাচা থেকে ঝুপ করে লাফ দিলাম দুজনে। দুটো ভারী লোকের লাফ মারার শব্দে ভটামদা আরো নার্ভাস হয়ে পড়লেন।
দেখলাম,পড়িমরি চিৎকার করে দৌড়তে গিয়ে ওঁর লুঙ্গি গেল আটকে। পড়লেন একেবারে মুখ থুবড়ে। অবশেষে লুঙ্গির মায়া ত্যাগ করে অর্ধনগ্ন হয়ে ছুটতে লাগলেন ভটামদা..! এই অবস্থায় স্বয়ং বোল্টও ওঁর কাছে হার মানতো বিশ্বাস করুন।
“ভটামদা…দাঁড়ান…”
কিন্তু কে শোনে কার কথা….? ভটামদা তখন এক দৌড়ে পগার পার..!

পরের দিন সকালে চোখ খুলতেই দেখি,সামনে গিন্নি দাঁড়িয়ে।
“এই যে রাজা হবুচন্দ্র,দয়া করে শয্যা ত্যাগ করুন। গেটের বাইরে পুলিশবৌদি অপেক্ষা করছে….”
ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর ফল তো ভোগ করতেই হবে। তাই গিন্নির শ্লেষ হজম করলাম।
ঢুলু ঢুলু চোখে গেট খুলতেই দেখি,একমুখ হাসি নিয়ে পুলিশবৌদি দুয়ারে।
“এতো দেখছি,দুয়ারে পুলিশ…! ভটামদার কি খবর..?”
“আপনার ভটামদা এখন বাড়িতে বিছানায় চিৎপটাং হয়ে পড়ে আছে। খালি বলছে,রায়দীঘিতে যেও না। ওখানে ভূত আছে….!”
“খুব ভয় পেয়েছে বৌদি..! এমন চ্যালেঞ্জ না করাই ভালো।কাল ওঁর হার্ট ফেল হয়নি,আপনার বাবার ভাগ্য।”
“মাতালদের হার্ট খুব স্ট্রং মাস্টারদা। যাক,আমি বাবা সাকসেসফুল। প্রতিদিন সন্ধ্যায় রায়দিঘীতে বোতল নিয়ে যাওয়া এবার থেকে বন্ধ হলো। চ্যালেঞ্জের টোপটা ভালোই খেয়েছে বুঝলেন..”
“কিন্তু,বৌদি বেলতলায় খুঁটিটা কিন্তু ভটামদাই পুঁতেছে। আমি স্পষ্ট দেখেছি।”
“সেতো আমিও দেখেছি…!কিন্তু আমি তো মাটিতে পুঁততে বলেছিলাম,লুঙ্গির উপর তো নয়। এবার বিচারের ভার আপনার হাতে। এখন চলি.…”
“দাঁড়ান ,দাঁড়ান, আপনি দেখেছেন মানে..?”
“আরে বাবা..! নারকেল গাছের মাথায় পেত্নী সেজে তো আমিই ছিলাম কাল। নাহলে মদের ঠেকে আপনার ভটামদা কি ভয় পেত..?”
বৌদির কাছে শেষটুকু শোনার পর থেকে আমার মাথা দপ দপ করছে। এত দেখছি সিরিয়ালের ‘জবা সুন্দরী’। কি না পারে..?
হঠাৎ হাতের মুঠোফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রিনে দেখি ‘ভটামদা কলিং…’
“হ্যালো..,ভটামদা।কেমন আছেন.?”
“হ্যালো, মাস্টার…! একটা রিকোয়েস্ট ছিল।”
“বলুন…”
“বাজারে করোনার সঙ্গে দেখা হলে বলবে,ও যেন রাত্রে রায়দিঘীতে না যায়। আমি মাথার দিব্যি দিয়েছি,তাও শুনছে না।খালি বলছে, ‘রায়দিঘী গিয়ে পেত্নীটাকে শায়েস্তা করবে।আমার স্বামীকে ভয় দেখানো,দেখাচ্ছি মজা।’ কিছুতেই শুনছে না। একটু বোলো ভাই প্লিজ….”

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।