।। ত্রিতাপহারিণী ২০২০।। T3 শারদ সংখ্যায় প্রিয়াঞ্জলি দেবনাথ

করোনাসুর বধ

বীভৎস এক চেহারার ষণ্ডামার্কা লোক পিঠে আইসব্যাগ, মাথায় লাল ফেট্টি বেঁধে এদিক থেকে ওদিক ছুটোছুটি করছে। লোকটার চেহারার মধ্যে একটা অসুর অসুর ব্যাপার থাকলেও, চোখেমুখে কিন্তু তার লেশমাত্র নেই। তার ভিতু চাহনি, অস্থির দৃষ্টি।
পেখম সবে মাত্র মেকাপ কমপ্লিট করে রিহার্সাল রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। কপালে ত্রিনয়ন, পিঠে আটটা শোলার হাত। ঠিক এইসময়ই পেখমের চোখ পড়ল অসুরাকৃতির লোকটির ওপর। প্রথমটায় একটু হকচকিয়ে ভয় পেয়ে গেলেও মুহূর্তের মধ্যে সাহসি পেখম সামলে নেয় নিজেকে।
— “কে গো তুমি?”
পেখমের কথায় লোকটি আচমকাই চমকে ওঠে। তারপর একহাত জিভ বার করে পেছন ফিরে দাঁড়ায়।
–“কে গো তুমি? তুমি কি আমাদের মহিষাসুর মর্দিণীর অসুর?”
লোকটি এখনো নিশ্চুপ। এইবার প্রায় গর্জেই ওঠে পেখম,
–“তুমি কে? ঘোরো বলছি এদিকে।”
লোকটি এতক্ষণে কাচুমাচু মুখে ঘুরে দাঁড়ায়।
–“আমি করনাসুর। পথ হারিয়ে ফেলেছি। তুমি আমায় মেরো না দয়াকরে। আমি হিমালয়ে যাব।”
বলেই লোকটি বিমর্ষ চোখে তাকায়। বিস্মিত হয়ে পেখম বলে,
–“সে কি, তুমি করোনাসুর? মানে কোভিড নাইনটিন?”
–“হ্যাঁ, মানে ওই আরকি… কিন্তু বিশ্বাস করো আমার বাবা-মা ভাই-বোন সবাই চলে গেছে। আমায় ছেড়ে দাও দুগ্গামা। আমি হিমালয়ের বরফে চলে যাব।”
পেখম চোখ গোল গোল করে বলে,
–“কিন্তু তোমরা কেন এখানে এসেছ? কেন এত মানুষের ক্ষতি করলে? তোমাকে আমি কিছুতেই ছাড়ব না।”
বলেই ত্রিশুল তোলে পেখম। হঠাৎ সে কিছু বোঝার আগেই মাথার ফেট্টি খুলে সিঙ দোলাতে দোলাতে দাঁত-নখ বাড় করে করোনাসুর উল্টোদিকে ছুটতে শুরু করে। পেখমও তার ত্রিশুল নিয়ে দৌড়াতে থাকে তার পিছু পিছু। আকস্মিক তার হাতের ত্রিশুল স্যানিটাইজারটা ছড়িয়ে পড়ে রিহার্সাল রুমের চারিদিকে। তারপর ক্রমশ হাওয়ায় পাক খেতে খেতে মিলিয়ে যায় অসুরটি।
রাত পোহালেই মহালয়া। দেবীপক্ষের সূচনা। ভোরের প্রথম আলোয় ঘুমটা ভেঙে যায় পেখমের। দীর্ঘ সাতদিন ধরে জ্বর ও মাথাব্যথা থেকে হঠাৎ করেই যেন মুক্তি পেল ছোট্ট পেখম। কোভিডের তান্ডবে ঘ্রাণশক্তিও লোপ পেয়েছিল তার। আজ অনেকদিন পর আবার ভেজা ঘাসের ওপর লুটিয়ে থাকা শিউলির মিষ্টি ঘ্রাণ বুকভরে টেনে নিল সে। তারপর ঘুম ভাঙা চোখে খুশিতে নেচে ওঠে পেখম। তার সারা শরীর তখনও ঘামে ভেজা।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।