গল্পবাজে পৃথা চট্টোপাধ্যায়

হেমন্ত

তুমি এলে আমার নীরব শাখায় লাগে দোলা। সামনেই পাতা ঝরানোর দিন। সময়ের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে গলা উঁচু করে দূরের আকাশ দেখি।মাথা ঠেকে যায় কড়িকাঠে, এত নিচু হয়ে আসছে মানুষের মন। বন্ধুতার কথাগুলো বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে, আবার ভয়ও করে । সাথি হারানোর দুঃখ নিয়ে যে পাখি ঘরে ফেরে তার পালকে লেগে থাকে বন্ধুত্বের গন্ধ। সারারাত তার নীড়ে সেই গন্ধ আলো হয়ে খেলা করে। শান্ত নদীতে জলের আপন ছন্দে বেশ তো দুলে দুলে চলছিল নৌকাখানা। বৈঠা রেখে মাঝি গিয়েছিল ছই এর ভিতরে। হেমন্তের নদীজল খুব স্নিগ্ধ শীতল। কুয়াশার চাদরে ঘেরা ভোরের গাছপালা, নদীর ঘাট অনেকটা ঘোমটার আড়ালে ঘটি হাতে টুপ টুপ ডুব দেওয়া ঐ বউটির মতো। নদীর একদিকে সোনাধানের খেতে ফসল উপচে পড়ছে তবু ভরন্ত চাষি বৌএর মনে সুখ নেই এবার। ঐ ডাগর শিষে শুধুই বাইরের রূপ, ভিতরে বীজ নেই শুধুই শূন্যতা। জল ছুঁয়ে উড়ে যাচ্ছে জলপিপি। সারারাত জাল ফেলেও জেলে মাঝির নৌকা আজ শূন্য, মাছ নেই কোনো । অপার শূন্য চোখে চেয়ে থাকে হেমন্তের আকাশ। শহরের মনে কোনো গান থাকে না, থাকে না টান।যার গায়ে লেগে থাকে মাটির সোঁদাল গন্ধ সেই তো হেমন্তকে ভালো বাসতে পারে। নদীজলে ছায়া ফেলে তার প্রেম। জীবনের দহন দিনে চোখের তারায় প্রতিবিম্বিত হয় তার ভালোবাসা। শিউলির বৃন্তে এখনও লেগে আছে কিছু গৈরিক, টোপর পানায় সবুজের হাতছানি। পাঁচিলের গা ঘেঁষে অজস্র রঙ্গন। শূন্যতার বুদবুদে জেগে থাক তোমার নাম। সময়ের অলিন্দে দেখি তোমার জন্মান্তরের মুখচ্ছবি।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।