অণুগল্পে পাপড়ি ভট্টাচার্য

ঘুণপোকা

সন্দীপ রায়। এইমাত্র যার ডেডবডি পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে গেছে। সন্দীপ কেন অতগুলো ঘুমের ওষুধ খেল? সাকসেসফুল লাইফ সন্দীপের। স্ত্রী ইন্দ্রানী,দুই ছেলে বাবা-মা নিয়ে সচ্ছল পরিবার।
অফিসে কোন গোলমাল নয়তো? অফিস কলিগ বন্ধু বান্ধব কেউই কিছু বলতে পারলোনা। ইন্দ্রানী হাতড়ে বেড়াচ্ছে। এটুকু জানল মৃত্যু নিয়ে ও সবসময় অফিসে খুব মজা করত।ও নাকি প্রায় গাইত”একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে”। তিরিশের টগবগে যুবক,জীবন থেকে স্বেচা অবসর নিয়ে সত্যি উড়ে গেল দূর আকাশে।
সকাল থেকে জিগ্যাসাবাদ চলছে। শোকের চেয়েও অনুসন্ধান জরুরী। বাবা-মা, কাজের লোক,পাড়া প্রতিবেশী কেউ বাদ রইলোনা।সকলে হতভম্বতা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি।
হঠাৎ পুলিশের চোখ পড়ল মূল ঘর থেকে বিচ্ছিন্ন একটি ঘরে। পায়ে পায়ে এগিয়ে যাওয়া মাত্র বুড়ি পিসিমা কোঁচকানো চোখে বললেন–পারবেনা পারবেনা ধরতে,সে ফুড়ুৎ।
কে ফুরুৎ পিসিমা?–কে আবার ঘুনপোকা।মরণ কামড় দিয়েছে গো।কেউ রেহাই পাবে না। আমি, আমি বেঁচে আছি। শত্রু শত্রু ওরা শত্রু থু:। ধরতে পারছিসনা ওদের?ঐতো সামনে বসে আছে।যা যা…. পিসিমা বার বার আঙুল তুলে দেখায় সন্দীপের বাবা-মাকে।ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন শোকগ্রস্ত সদ্য সন্তান হারা বাবা মা। পিসিমা হাসছেন, কাঁদছেন বকছেন সবাইকে।
পরদিন খবরের কাগজে সবাই জানল। সন্দীপের মৃত্যুর জন্য দায়ী ওদের বংশের ইতিহাস। প্রতিবছর ওদের বংশে কেউ না কেউ আত্মহত্যা করেছে। গতবছর পিসিমার একমাত্র ছেলে ধনঞ্জয় সুইসাইড করার পর থেকে পিসিমা পাগল। পরিবারে সবসময় আলোচনা হতো, কিছু হবেনা। পিসিমা তো অন্য বংশের। তবু ও ঘটলো এমন অঘটন। ধনঞ্জয় সন্দীপের থেকে বয়সে বড় হলেও খুব বন্ধু ছিল ওরা।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড:অমিত সরকারের অভিমত শৈশব থেকেই এক মৃত্যু চেতনার মানসিক রোগ জীবাণু বহন করত পিসিমার পারিবারিক চিকিৎসক ড:অমিত সরকার একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন সকলের দিকে তাকিয়ে।

Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!