T3 || আমি ও রবীন্দ্রনাথ || বিশেষ সংখ্যায় প্রান্তিক বিশ্বাস
by
·
Published
· Updated
আমি ও রবীন্দ্রনাথ
“তোর নাম কী রে?”
“স্যর, রনা দাস।” ছেলেটা মাথা না তুলেই উত্তর দিল।
অসীম একবার বাইরেটা দেখলেন। তিনটে হলের সব ছাত্রই বেরিয়ে গেছে। বাকি যারা গার্ড দিচ্ছিলেন, তাঁরা স্কুলের মাঠে বড় আমগাছটার তলায় দাঁড়িয়ে চা-সিঙ্গারা খাচ্ছেন। কিন্তু এই মক্কেল এখনও লিখে চলেছে বলে উনি বাকিদের সাথে যোগ দিতে পারেননি।
“শেষ করেছিস?”
“একটু বাকি আছে…”
“কত ছাইপাঁশ লিখবি?”
“পাঁচমিনিট স্যর।”
বেয়াদব ছেলে; ঠিক পাঁচমিনিটই বাকি আছে! মনে মনেই কয়েকটা গাল পাড়লেন।
কিছুক্ষণ ফোনে খুটখাট করেও শান্তি পেলেন না। এখানে এসেছেন আন্তর্জেলা রচনা প্রতিযোগিতা পরিচালনা করতে। ভাবতেই পারেননি, ক্লাস এইট থেকে টেনের এতজন ছাত্রছাত্রী আসবে। বিষয় ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’। পুরস্কারটা বেশ লোভনীয়। একসেট রবীন্দ্র-রচনাবলী। অসীম নিজেও রবীন্দ্র-গবেষণায় রত বিগত এক বছর ধরে। সেই ভালবাসার টানেই এখানে আসা।
ঘড়িটা দেখলেন। ফেরার ট্রেনটা মিস। পরের ট্রেন ধরলে রবীন্দ্রসদনে পৌঁছতে সন্ধ্যে। দশ বছরে এই প্রথম পঁচিশে বৈশাখে যাওয়া হল না। রনা ওঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে খাতা জমা দিয়ে বেরিয়ে গেল। ছেলেটার পোশাক দেখে সচ্ছল বলে মনে হল না।
“তোর বাড়ি কোথায়?”
“এই গ্রামেই স্যর।”
“বাবা কি করেন?”
“বাবা-মা ছোটবেলায় অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছেন স্যর। মামার কাছে থাকি, সকালে স্কুল, সন্ধ্যেবেলা মামার-দোকানে বসি।”
ও চলে গেল। ফ্যানের হাওয়ায় নামধাম লেখা প্রথম পাতাটা উল্টে গেছে। অসীমের চোখ আটকে গেল – মুক্তোর মতন হাতের লেখা। একটু পড়লেন। ছেলেটা লিখেছে ওর ছোটবেলার কথা, আনন্দের কথা, কষ্টের কথা। প্রায় প্রতিটা লাইনেই তুলে ধরেছে রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গান, এমনকি গল্প, উপন্যাসের বিখ্যাত কিছু অংশ। আরো পড়লেন। এবার ওর ভবিষ্যতের স্বপ্নের কথা। ওর স্বপ্ন গুরুদেবকে নিয়ে গবেষণা করার। রচনার শেষটা কিন্তু হতাশায় মোড়া। লিখেছে ওর দারিদ্র্য, ওর পরিস্থিতি কোনোভাবেই সেই স্বপ্নপূরণ করতে দেবে না। শান্তি শুধু এক জায়গাতেই – গুরুদেবের সাথে ওর মিল কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।
কিসের মিল? কিছুক্ষণ ভাবলেন অসীম। পুরোটা আবার পড়লেন। পেলেন না। খাতাটা বন্ধ করে অন্য খাতাগুলোর মধ্যে গুছিয়ে রাখতে গিয়ে নামটা চোখে পড়ল – রবীন্দ্রনাথ দাস।