• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ১৬)

আমার কথা 

৬১
আপনার নিজের যৌন জীবন আপনি সুরক্ষিত রাখবেন না তো কে রাখবে?
মনে পড়ে রণিতা (নাম পরিবর্তিত) বসুর কথা। রণিতা খোদ কলকাতার মেয়ে, মহানগরীতেই বড়ো হওয়া মেয়ে। বিয়ের আগে তিনি সৌম্য কর কে অগাধ ভালবেসে ফেলেন। না গড় পড়তা প্রেম নয়, একেবারেই এরেঞ্জড ম্যারেজ রণিতা ও সৌম্যের। এম টেক পাশ রনিতা পাত্র ঠিক কোথায় কি চাকরি করেন যাচাই করতে চান নি। কলকাতা করপোরেশনের এক চুক্তি ভিত্তিক স্বল্প বেতনের অস্থায়ী কর্মী নিজেকে বড় মাপের বিজ্ঞানী বলে ইন্ট্রো দিলে তাই বিশ্বাস করেছেন রণিতা। আর হবু বরের রক্ত পরীক্ষার কথাও মাথায় আসে নি এম টেক পাশ মেয়ের।
রণিতার বিয়ে টেঁকে নি। ফ্যামিলি কোর্টে বিবাহিত জীবন থেকে রেহাই পেলেও, শ্বশুর বাড়ির লোকে তার বিরুদ্ধে ডাকাতির কেস দিয়েছে।
রণিতার এত সরলতার কোনো দাম আছে বাস্তব জগতে?
৬২
আপনার নিজের যৌন জীবন আপনি সুরক্ষিত রাখবেন না তো কে রাখবে?
মনে পড়ে মৌমিতা (নাম পরিবর্তিত) সান্যালের এর কথা। পরিচিত এক ভদ্রলোকের কাছে মৌমিতা ফটোগ্রাফি শিখতেন। মৌমিতা জানতেন তাঁর শিক্ষক বিবাহিত ও বছর দশেকের একটি পুত্র সন্তানের জনক। শিক্ষকের স্ত্রী তাঁর থেকে স্বেচ্ছায় আলাদা বাস করেন, আর তাঁদের মধ্যে আইনি বিচ্ছেদ হয় নি। এই পরিস্থিতিতে ফটোগ্রাফি শিক্ষককে নিজের নিরাবরণ ছবি তুলতে দেন মৌমিতা, এবং নিজের খোলামেলা শরীর স্পর্শ করতে দেন, এই বিশ্বাসে যে শিক্ষকটি শীঘ্র ডিভোর্স দেবেন, আর তার পরেই মৌমিতার সাথে বিয়ে।
শিক্ষিত মেয়ে হয়ে মৌমিতা বেবাক বোকা বনে গেলেন, যখন শিক্ষক নতুন শিকার খুঁজে নিলেন, আর মৌমিতাকে ভয় দেখালেন যে তার খোলামেলা শরীরের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে দেবেন।
আপনিই বলুন মৌমিতার কি এত সহজ বিশ্বাস শিক্ষিত মানুষের উপযোগী ছিল?
৬৩
ঘটনাস্থল যাদবপুর। সেখানেই একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস, তারপর প্রতারণা, আর তারপর জোর করে গর্ভপাত এর। পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযুক্ত লোকটির নাম সোমরাজ দত্ত।
এই তো কিছু দিন আগেই এক গ্রামীণ হাসপাতালের তরুণ ডাক্তারবাবুর সাথে কথা হচ্ছিল। তিনি জানালেন গ্রামে গঞ্জে অবিবাহিতা মেয়েদের, এমন কি নাবালিকার গর্ভপাত এর ঘটনা অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছে। প্রশ্ন হল, নাবালিকার সাথে পর্যন্ত যৌন সংযোগ হচ্ছে, এবং অভিভাবক নিজেদের মেয়ের মনের হাল হদিশ এর খবর রাখছেন না। এই যে বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ক, এটা ততদূর বিপজ্জনক নয়, যদি উভয়ে একই সাথে প্রাপ্তমনস্ক হন। প্রাপ্তবয়স্কতা ছাড়া প্রাপ্তমনস্কতা আসে না, এটা আমি ধরে নিচ্ছি। প্রাপ্তমনস্ক মানুষ তো জানবেন, কি করলে গর্ভসঞ্চার এড়ানো যায়। এর জন্য কনডম, পিল ইত্যাদির ব্যবহার আমাদের সমাজে চালু আছে। জানা দরকার, ছেলেদের যেমন কনডম হয়, মেয়েদেরও কনডম হয়। যে যৌন সম্পর্কে সন্তান চাইছি না, সেখানে কনডম ব্যবহার একটি নিরাপদ পদ্ধতি। বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ক নিয়ে আমার নৈতিক আপত্তি নেই, যদি মেয়েটি পরবর্তী ব্যাপারগুলি নিয়ে যথেষ্ট সচেতন আর অভিজ্ঞ থাকেন। একজন প্রাপ্তমনস্ক ব্যক্তি কিভাবে নিজের যৌনতার উদযাপন করবেন, তা সম্পূর্ণ তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু যদি বলা হয় আমায় জোর করে গর্ভপাত করানো হয়েছে, তাহলে প্রশ্ন আসবে তিনি কি গর্ভসঞ্চার ব্যাপারে যথেষ্ট সাবধানতা নিয়েছিলেন?
এই খবরটিতে ক্ষতিগ্রস্ত মেয়েটি একজন ব্যাঙ্ককর্মী, অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক তথা প্রাপ্তমনস্ক। এবং অভিযুক্ত পুরুষ ওই একই ব্যাঙ্কের অন্য শাখার উচ্চপদস্থ অফিসার। প্রশ্ন উঠুক যে একটি শিক্ষিত প্রাপ্তমনস্ক মেয়ে কি করে অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক করলেন? তিনি এখন জানতে পেরেছেন যে, যে সোমরাজ দত্তের সাথে তিনি বিবাহপূর্ব যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন, সেই ব্যক্তি বিবাহিত ও একটি কন্যা সন্তানের জনক। কিন্তু মেয়েটি এই খোঁজখবর গুলি আগেভাগে পর্যাপ্ত যত্ন নিয়ে খোঁজ করে দেখতে পারলেন না? সোমরাজের বিরুদ্ধে তাঁর বৈধ স্ত্রীও প্রতারণা এবং ব্যভিচারের মামলা আনতে পারবেন। ডিভোর্সও চাইতে পারবেন। কিন্তু তাতেও কি ব্যাঙ্ককর্মী মেয়েটির মনের জ্বালা মিটবে?
আমার অভিজ্ঞতা বলে, বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ক এর সুযোগ নিতে চান যে ব্যক্তি, তাঁকে বিস্তর বাজিয়ে নেবার প্রয়োজন। এটা মেয়েদের বাঁচা মরার ইস্যু। কেননা গর্ভসঞ্চারের যেটুকু শারীরিক ঝঞ্ঝাট তা পোহাতে হয় মেয়েদের। সুতরাং সচেতন তাঁদের হতেই হবে।
৬৪
হঠাৎ মস্তিষ্কের ভিতর রক্তক্ষরণ হয়ে গিয়েছিল বাবার। তার আগেই অতিরিক্ত রক্তচাপ আর হাইপারটেনশনে ভুগতেন অনেক দিন। তিন তিন বার প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে তাঁকে ছিনিয়ে এনেছিলেন যে ডাক্তার, তিনি যখন ডিপ কোমা থেকে বাবাকে আর উদ্ধার করে আনতে পারলেন না, ১২ জানুয়ারি ২০১২ বাবার জীবন প্রদীপ নিবে গিয়েছিল ব্রাহ্মমুহূর্তে। আমরা দু ভাই এক সাথে সারা রাত বাবার কাছে জেগেছিলাম। ভোরবেলা ছোটভাইকে পাঠিয়ে দিলাম মাকে ডেকে আনতে। আর আমি নিজেকে সংহত করছিলাম বড় একটা কাজের জন্য। সমস্ত শোক আর আবেগ বিহ্বলতা ছেড়ে বাবার চোখ আর মরদেহ বিজ্ঞানের কাজে উৎসর্গ করা প্রয়োজন। চিরকাল ধর্মনিরপেক্ষ ও পার্থিব মানবতাবাদী হয়ে উঠতে চেয়েছি। কতটুকু কি হয়েছি, আজ তার প্রমাণ হবে। মাকে বললাম। মা এক কথায় রাজি হলেন, সমস্ত সংস্কার ছেড়ে বিজ্ঞানের গবেষণার কাজে তাঁর প্রিয়তম সাথির দেহ এক কথায় তুলে দিতে।।
এখন ভাবি কোথাও মায়ের মনের কোনো কোণে, কোনো কুসংস্কার জুজুবুড়ি হয়ে বাসা বেঁধে থাকলে মা কি এত সহজে সাবলীল ভাবে এ কথা বলতে পারতেন?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।