দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ২৪৪)

পর্ব – ২৪৪

বাবা, বেশ‍্যা কাকে বলে?
বাবা বললেন, যারা বেশবাস করতে খুব ভালবাসে, তারা।
খোকা বলল, উঁহু বাবা, ঠিক উত্তরটা হল না। আমি ডিকশনারি দেখেছি।
রাগ করে বাবা বললেন, দেখেছ তো আমাকে আবার জিজ্ঞাসা করছ কেন?
খোকা বলল, বাবা, আপনি কি আমার প্রশ্নের জন‍্য বিরক্ত হচ্ছেন?
খোকা, তোমার কি এই বিষয়গুলো এখনই জানার খুব দরকার?
বাবা, এই শব্দটা নিয়ে আপনার সমস্যা থাকলে আপনি না বলতেই পারেন।
বাবা বললেন, তুমি কি বলতে চাইছ?
খোকা বলল, না, ডিকশনারি দেখার পরেও শিক্ষকের কাছ থেকে জানবার মতো আরো অনেক কথা থাকে।
বাবা বললেন, ডিকশনারিতে এই শব্দের অর্থ কি বলা আছে?
খোকা বলল, রূপোপজীবিনী, রূপাজীবা, দেহোপজীবিনী, দেহপসারিনী, বারবধূ, বারাঙ্গনা, কুলটা, পণ‍্যাঙ্গনা, পণ‍্যানারী, এইরকম। আর ইংরেজি ভাষায় প্রসটিটিউট। বাবা জানেন, প্রসটিটিউট শব্দটা ল‍্যাটিন উৎস থেকে ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি ইংরেজি ভাষায় এসে ঢোকে। ল‍্যাটিন শব্দটা ছিল প্রসটিটুট। ওর মানে ছিল প্রকাশ‍্যে জনসমক্ষে রাখা, বিক্রি করার জন‍্য বলা।
বিরক্ত স্বরে বাবা বললেন, অনেক তো জানতে পেরেছ। আর জানার কি দরকার।
খোকা বলল, বাবা, বারাঙ্গনা কথাটা নজরুল ইসলামের কবিতায় পেয়েছি। নজরুল ইসলাম লিখেছেন,
“কে তোমায় বলে বারাঙ্গনা মা, কে দেয় থুতু ও গায়ে?
হয়ত তোমায় স্তন‍্য দিয়াছে সীতা সম সতী মায়ে।
….
স্বর্গবেশ‍্যা ঘৃতাচী পুত্র হল মহাবীর দ্রোণ,
কুমারীর ছেলে বিশ্বপূজ‍্য কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন,
কানীন পুত্র কর্ণ হ‌ইল দানবীর মহারথী
স্বর্গ হ‌ইতে পতিতা গঙ্গা শিবেরে পেলেন পতি,
শান্তনু রাজা নিবেদিল প্রেম পুনঃ সেই গঙ্গায় –
তাঁদেরি পুত্র অমর ভীষ্ম, কৃষ্ণ প্রণমে যায়।
মুনি হল শুনি সত‍্যকাম সে জারজ জবালা শিশু
বিস্ময়কর জন্ম যাঁহার মহাপ্রেমিক সে যিশু।…..
 বাবা এই সত‍্যকামকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও কবিতা লিখেছেন…..
শুধাইলা সত্যকাম,
“কহো গো জননী, মোর পিতার কী নাম,
কী বংশে জনম। গিয়াছিনু দীক্ষাতরে
গৌতমের কাছে, গুরু কহিলেন মোরে–
বৎস, শুধু ব্রাহ্মণের কাছে অধিকার
ব্রহ্মবিদ্যালাভে। মাতঃ, কী গোত্র আমার?’
শুনি কথা, মৃদুকণ্ঠে অবনতমুখে
কহিলা জননী, “যৌবনে দারিদ্র‍্যদুখে
বহুপরিচর্যা করি পেয়েছিনু তোরে,
জন্মেছিস ভর্তৃহীনা জবালার ক্রোড়ে,
গোত্র তব নাহি জানি তাত।’
বাবা বললেন, হ‍্যাঁ। সে তো বুঝলাম। কিন্তু আসল বিষয়টা কি?
খোকা বলল, গতকাল ক্লাসে একটা ছেলে আরেকটা ছেলেকে খানকির ছেলে বলেছে। তো যাকে বলেছে, সে বলল, আমায় গালি দিয়েছিস দিয়েছিস। আমার মাকে গালি দিলি ভাই? মা তো তোর কোনো ক্ষতি করে নি। তখন যে ছেলেটা কাঁদছিল, তাকে আমি বুঝিয়ে বললাম, এতে কাঁদবার কিছুই নেই। এটা খুব একটা খারাপ কথা নয়। তখন আমি কথা বলছি দেখে, মাস্টার মশাই আমাকে মারলেন। আর টিফিন সময়ে ওদের মধ‍্যে আবার ভাব হয়ে গেল। একসাথে খেলছিল। কুলের আচার কিনতে গেল একসাথে।
বাবা বললেন, ক্লাসে বসলে ক্লাসের নিয়ম মানতে হবে। ওরা নিজেদের মধ‍্যে কি বলাবলি করছে, তাতে কান দেওয়ার কোনো প্রয়োজন তোমার ছিল না। ওদের সমস্যা দেখার জন্য ক্লাস টিচার আছেন। সুতরাং তোমাকে মার খেতেই হবে।
খোকা বলল, বাবা, একজনের উপর আরেকজনের রাগ হলে খানকির ছেলে, হারামি, রেণ্ডি কা বাচ্চা, আবাগির পুত এইসব বলে। কোনো শব্দ‌ই খারাপ নয়, কিন্তু বলার ধরণটা বিশ্রী। বাবা, খানকি কথাটা আমি ডিক্শনারিতে পাই নি। কিন্তু শরৎসাহিত‍্যে পেয়েছি। পল্লীসমাজ উপন‍্যাসের চতুর্থ পরিচ্ছেদে, রমেশের বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের পর পরাণ হালদারের সাথে ক্ষেন্তি বামনির ঝগড়া। এই যে বাবা, এই দেখুন,
“ভৈরব আচার্য্য ব্যস্ত হইয়া ক্ষান্তর হাতটা প্রায় ধরিয়া ফেলিয়া সানুনয়ে কহিল, “এতেই হবে, মাসি, আর কাজ নেই। নে, সুকুমারী, ওঠ মা, চল্‌ বাছা, আমার সঙ্গে ওঘরে গিয়ে বস্‌বি চল্‌।” পরাণ হালদার চাদর কাঁধে লইয়া সোজা খাড়া হইয়া উঠিয়া বলিল, “এই বেশ্যে মাগীদের বাড়ী থেকে একেবারে তাড়িয়ে না দিলে এখানে আমি জলগ্রহণ কর্‌ব না, তা’ বলে দিচ্চি। গোবিন্দ! কালীচরণ! তোমাদের মামাকে চাও, ত উঠে এসো বল্‌চি। বেণী ঘোষাল যে তখন বলেছিল, “মামা, যেয়ো না ওখানে!’ এমন সব খান্‌কী-নটীর কাণ্ডকারখানা জান্‌লে কি জাত-জন্ম খোয়াতে এ বাড়ীর চৌকাঠ মাড়াই? কালী! উঠে এসো।” বেশ‍্যা, মাগী, খানকি আর নটী শব্দগুলো গ্রাম‍্য রুচিহীন মানুষের জীবনে জড়িয়ে আছে। কিন্তু বাবা, নটী বিনোদিনীর মাথায় হাত রেখে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস আশীর্বাদ করেছিলেন, তোমাদের চৈতন্য হোক। নটী মানে তাহলে অভিনেত্রী, থিয়েটার শিল্পী। আবার নটী শব্দটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর অভিসার নামে কবিতায় লিখেছেন। বন্ধনীর মধ‍্যে লিখেছেন, বোধিসত্ত্বাবদান- কল্পলতা। কবিতাটা এই রকম,
“সন্ন্যাসী উপগুপ্ত
মথুরাপুরীর প্রাচীরের তলে
একদা ছিলেন সুপ্ত;–
নগরীর দীপ নিবেছে পবনে,
দুয়ার রুদ্ধ পৌর ভবনে,
নিশীথের তারা শ্রাবণ-গগনে
ঘন মেঘে অবলুপ্ত।
কাহার নুপুরশিঞ্জিত পদ
সহসা বাজিল বক্ষে।
সন্ন্যাসীবর চমকি জাগিল,
স্বপ্নজড়িমা পলকে ভাগিল,
রূঢ় দীপের আলোক লাগিল
ক্ষমা-সুন্দর চক্ষে।
নগরীর নটী চলে অভিসারে
যৌবনমদে মত্তা।
অঙ্গে আঁচল সুনীল বরণ,
রুনুঝুনু রবে বাজে আভরণ;
সন্ন্যাসী গায়ে পড়িতে চরণ
থামিল বাসবদত্তা। …..”
বাবা, সপ্তম শতাব্দীতে সুবন্ধু বাসবদত্তা নামে একটা সংস্কৃত আখ‍্যায়িকা লিখেছেন। বিদ‍্যাসাগর মশায়ের বন্ধু মদনমোহন তর্কালঙ্কার সেটা অনুবাদ করেছিলেন। আরো আগে মহাকবি ভাস “স্বপ্ন বাসবদত্তা” নামে ছয় অঙ্কের নাটক লিখেছেন সংস্কৃত ভাষায়। তাতে উদয়ন ও বাসবদত্তার গল্প আছে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই  অভিসার কবিতার বাসবদত্তা একজন ট‍্যালেন্টেড নৃত্যশিল্পী।
এলিট ক্লাসের লোকেরা এঁর কাস্টমার ছিলেন। প্রাচীন গ্রীসেও এঁদের কদর ছিল। পণ্ডিত দার্শনিক ব‍্যক্তিরা এঁদের কক্ষে বসে আলাপ আলোচনা করতেন। দক্ষিণ ভারতের দেবমন্দিরে দেবদাসী প্রথা ছিল। এঁরা দেবতার মনোরঞ্জন করতেন।
বাবা বললেন, ক্লাসের পড়া ছেড়ে এইসব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি। লোকেও খারাপ বলবে। আমিও বলব। তোমার বয়সে এইসব কথা নিয়ে নাড়াচাড়া করা শুধু অশোভন নয়, আমি এইভাবে সময় নষ্ট করাকে অন‍্যায় বলছি।
খোকা বলল, কিন্তু আমার প্রশ্ন ছিল, একটা চমৎকার পেশা এভাবে গালাগালির নামান্তর হয়ে গেল কেন? আর গালাগালিই যদি হল, তাহলে দুর্গাপূজার সময়ে বেশ‍্যাদ্বারের মাটি আনানো কেন? এটা কি সাংঘাতিক দ্বিচারিতা নয়? ডাইকটমি বললে কি ভুল হবে?
বাবা খোকার দিকে কঠোরভাবে চেয়ে, তীব্র বিরক্তি প্রকাশ করে পাঞ্জাবিটা গলিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন।
বিকেলে জ‍্যাঠামশায় বসার ঘরে চোখ বন্ধ করে গ্রামোফোন শুনছেন। বেগম আখতার। বাবা তাঁর সুমুখে গিয়ে বসতে তিনি চোখ খুললেন।
জানিস নিশ্চয়ই, গ‌ওহর জানের গান শুনে বেগম আখতার ক্লাসিকাল শেখার কথা ভাবেন। বাষট্টির যুদ্ধে আহত সৈন্যদের চিকিৎসার জন‍্য টাকা তুলে দিয়েছিলেন গান গেয়ে। কতবড় হৃদয়টা!
বাবা বললেন, একটা দরকারি কথা বলতাম দাদা।
গ্রামোফোন বন্ধ করে জ‍্যাঠামশায় বললেন, বল্, কী বলবি।
দাদা, আমি লক্ষ্য করছি খোকা প্রায়ই সিলেবাসের পড়ার বাইরে অনেক বেশি সময় নষ্ট করছে। বয়স অনুপাতে অন‍্য ধরণের বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে। মা এসে বাবার পাশে বসলেন। দাদামণি, আমি পড়েছি মাঝখানে। ওঁর সব সময় রাগ ছেলে ভুল পথে চলে যাচ্ছে। আমার‌ও মাঝে মাঝে ভাবনা হচ্ছে।
বাবা বললেন, এটা কি তোমার অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে না?
জ‍্যাঠামশায় বললেন, দশজনে যা করে, যেভাবে করে, সেটাকে যদি স্বাভাবিক বলো, তাহলে খোকা নিশ্চয়ই একটু অস্বাভাবিক। কিন্তু খুঁটিয়ে দেখলে ওর ব‍্যাপারটা অভাবনীয় নয়।
বাবা বললেন, কেন?
জ‍্যাঠামশায় বললেন, অভিমন‍্যুর কথা ভেবে দ‍্যাখো। সুভদ্রা গর্ভবতী ছিলেন। অর্জুন তখন সুভদ্রার সঙ্গে থাকতেন। সঙ্গ দিতেন, গল্প করতেন। মহাবীর অর্জুন। গাণ্ডীবধন্বা। তিনি তো তীর ধনুকের গল্প‌ই করবেন। সুভদ্রাও গল্প শুনছেন। গর্ভের ভ্রূণ‌ও গল্প শুনছে। শুনতে শুনতে সেই ভ্রূণ অবস্থায় সে যুদ্ধের কৌশল শিখে ফেলল।
বাবা বললেন, এটা তো গল্প।
জ‍্যাঠামশায় বললেন, রাবণের বাবা ছিলেন বিশ্রবা মুনি। তিনি গর্ভস্থ ভ্রূণ অবস্থায়ই বেদ অধিগত করেছিলেন। আর জন্মানোর সময় বেদপাঠ করতে করতে ভূমিষ্ঠ হন। আর অষ্টাবক্র মুনির কথা জানি। ওঁর বাবা কহোড় মুনি বেদপাঠ করে বৌকে শোনাতেন। তা মুনির বৌ ছিলেন গর্ভবতী। একদিন গর্ভস্থ ভ্রূণ কহোড়কে বলল, বাবা আপনি বেদ ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারছেন না। গর্ভস্থ ভ্রূণের উপর কহোড় খুব রেগে গিয়ে তাকে বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মাবার অভিশাপ দেন।
বাবা বললেন, দাদা, এগুলো একেবারেই গালগল্প। গর্ভস্থ শিশু কানে শুনবেই বা কি করে, কথাই বা বলবে কি করে?
জ‍্যাঠামশায় বললেন, গালগল্প হলেও মানুষ এগুলো যুগ যুগ ধরে শুনেছে, মনে রেখেছে। যারা বলেছে, তারা গর্ভস্থ শিশুদের এই আচরণকে অস্বাভাবিক বলে মনে করে নি। জ‍্যাঠামশায় আরো বললেন, তাহলে সেই ছাত্রটির কথা বলি। এ গল্পটা জাবালি সত‍্যকামের নামে চলে। গুরু তাকে কিছু গাভীর দায়িত্ব দিয়ে বললেন, যতদিন না এই গাভী দশসহস্র পূৰ্ণ হচ্ছে, ততদিন তুমি ফিরবে না।
সুমেধ ছাত্র সেই গাভী নিয়ে বেরিয়ে পড়ল পথে। গাভী গুলিকে পেট পুরে খাইয়ে, সুরক্ষিত রেখে, হিংস্র শ্বাপদের হাত থেকে বাঁচিয়ে, রোগ ব্যাধিতে চিকিৎসা করে, সুপ্রজনন করতে করতে ছাত্র এগিয়ে চললো পৃথিবীর পথে। ওই গাভীর আহার এর জন্য তাকে মাথা ঘামাতে হয়, সুরক্ষার জন্য তাকে অস্ত্র ধরতে হয়। সুপ্রজননের জন্য খোঁজ রাখতে হয় বীর্যবান ষণ্ড কার কাছে আছে। পথে তাকে দশ দিক হতে দিকপালগণ শিক্ষা দিয়ে যান। বাতাসের শক্তি, জলের শক্তি, আলোর শক্তি এসে তাকে উপদেশ দান করে সমৃদ্ধ করে তোলেন। এইভাবে গো পালন করতে করতে সেই গুরুনির্দিষ্ট সংখ্যায় উপনীত হয়ে সে সমিধপাণি হয়ে গুরুর আশ্রমে প্রবেশ করলো। তখন তার চেহারা গিয়েছে বদলে। মুখে চোখে আশ্চর্য আভা। গুরু বলেছিলেন, নির্দিষ্ট সংখ্যায় উপনীত হয়ে ফিরতে পারলে ছাত্রকে ব্রহ্মজ্ঞান দান করবেন। কিন্তু, ব্রহ্মচারীকে দেখে গুরু অবাক। এ কি জ্যোতির্মণ্ডিত মুখমণ্ডল ! একে তো আর ব্রহ্মজ্ঞান দিতে হবে না। পরম চেষ্টায় ছাত্র নিজেই তা অর্জন করেছে।
বললেন, একলব‍্যের কথাও মনে রেখো। মনে মনে দ্রোণাচার্যকে গুরু হিসেবে বরণ করে তাঁর মাটির মূর্তি গড়ে, মূর্তির পদতলে বসে একলব‍্য স্বশিক্ষিত হয়ে উঠেছিলেন। এঁরা কেউ গড়পড়তা ছেলে ছিল না। নচিকেতার কথাটাও ভাবতে পারো। বাবার উপর অভিমান হয়েছিল নচিকেতার। যজ্ঞের সময় দানধ‍্যান করার কথা। নচিকেতা লক্ষ্য করল, বাবা বুড়ো বুড়ো গরুগুলো দান করছেন। অথচ নচিকেতা জানে,  শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতার সঙ্গে যা দেওয়া হয় তাই তো যথার্থ দান। বাবা যজ্ঞাসনে বসে এই বুড়ো বুড়ো গরুগুলো দান করে কি দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন?
নচিকেতা বাবাকে বলল, বাবা, আমাকে কার কাছে দান করলে? আরে বদমাইশ ছেলে? নিজের বেটাকে কেউ দান করে? তার উপর এমন সুন্দর ছেলে। দেখলে চোখ ফেরানো যায় না। তেমনই ঝকঝকে বুদ্ধি। জ্ঞান আর বৈরাগ্য ও মুখে খেলা করে। কেন এহেন সন্তানকে দান করব?
বার বার প্রশ্ন করে বালক নচিকেতা। ক্ষিপ্ত হয়ে যজ্ঞাসনে বসে মুনি বললেন, যা, তোকে যমকে দান করলাম।
সেই বালক ক্ষুধা তৃষ্ণা অগ্রাহ্য করে পদব্রজে পৌঁছেছে যমপুরীতে। যম ছিলেন না। যমের সহকারীবৃন্দ বালককে অন্নগ্রহণে অনুরোধ করেছিল। নচিকেতা বলেছিল আগে যম আসুন। তারপর আতিথ‍্য নেব কি না, ভাবব। তিন দিন পরে যম এলেন। তিন দিন অনাহারী বালক। জলটুকুও মুখে দেয় নি। তারপর ওই বিষম প্রশ্ন। বলো মৃত্যুর পর কী হয়!
… আর যদি মনে হয়, এগুলোকে মেটিরিয়াল এভিডেন্স বলে মনে করা যায় না, তাহলে কার্ল ফ্রিডরিশ গাউস এর কথা বলি। ওঁকে বলা হয় প্রিনসেপস ম‍্যাথেমেটিকোরাম, মানে গণিতের রাজপুত্র। এই গেল ঊনিশ শো পঞ্চান্ন সালে তাঁর মৃত‍্যুশতবর্ষ গেল। তো গাউস গরিব বাড়ির ছেলে। খেটে খাওয়া পরিবারের থেকে উঠে এসেছেন‍।
গাউসের যখন মোটে তিন বছর বয়স, তখন বাবার হিসেবের গোলযোগ ধরে দিয়েছিলেন। ওর বাবা একটা কারখানার হিসেব কিতেব রাখতেন। ওইটুকু পুঁচকে ছেলের কাণ্ড দেখে বাবা অবাক। পাঁচ বছর বয়সে সে বাবার হিসেবের খাতা নিয়মিত ভাবে দেখে শুনে দিত। সাত বছর বয়স যখন, তখন এক থেকে একশো অবধি সংখ্যার যোগফল মুহূর্তে বলে দিয়ে শিক্ষকদের অবাক করে দিয়েছিলেন। বারো বছর বয়সে ইউক্লিডের জ‍্যামিতির নানা উপপাদ‍্যের সমালোচনা করতেন।
পনেরো বছর বয়সে গাউস মৌলিক সংখ‍্যা খুঁজে বের করার একটা ফরমূলা খাড়া করছিলেন। গাউসের এই ব‍্যাপারটা কিভাবে ব‍্যাখ‍্যা করবে? এদেশের বাচ্চাও বাবার হাত ধরে পথ হাঁটতে হাঁটতে ইংরেজি সংখ‍্যাচিহ্ন শিখে নিয়েছেন এমন নজির আছে।
এদের অস্বাভাবিক বলতে পারো এই অর্থে যে এরা বাঁধা গতে পড়া মুখস্থ করে নি।
বাবা বললেন, আমার মনে হয়, খোকা মিসগাইডেড হচ্ছে। আমি দেখি কি করা যায়।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।