T3 ।। কবিতা পার্বণ ।। বিশেষ সংখ্যায় মহুয়া পৈত

নবান্ন –

অঘ্রায়ণের নবান্নের গন্ধ গায়ে মেখে
উত্তুরে হাওয়া আনমনা হয়  ,
রাখালের মিঠে বাঁশির সুরে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে
ধানশূন্য রিক্ত জমির আলে ।
চাষী  রক্তাক্ত পায়ে হাঁড়ি বাঁধে খেঁজুর গাছে ,
রাতের আঁধারের শৈত্যতা গর্ভিনী করে খেঁজুর গাছকে
ব্রাহ্ম মুহূর্তে উত্তুরে হাওয়ার সঙ্গমে
কাঠি বেয়ে চাষীর মনের রস গড়ায় হাঁড়িতে ।
উত্তুরে হাওয়ায় ম ম করে খেঁজুর গুড়ের ঘ্রাণ
আনন্দে উদ্বেলিত হাওয়ায় লাগে শীতের কাঁপন
সাঁঝবেলায় চাষী বৌয়ের হাঁড়িতে জাবনা ফুটে ওঠে
নক্সী কাঁথায় ওম ধরা খিদের তাড়শ আঁকে কামদেব ।
তোমার ছাদে তখন গাঁদা চন্দ্রমল্লিকা ডালিয়া ডেইজি
আর গোলাপের বাহার —
উত্তুরে হাওয়ায় কামনার ছোঁয়া লাগে শেফালির ,
সুগন্ধি সাদা মোতির ফুল ছড়িয়ে দেয় ফেলে আসা স্মৃতির কবরে ।
উত্তুরে হাওয়ায় সাইবেরিয়ান পাখিগুলো চঞ্চল হয়ে ওঠে
মিলনের নেশায় মেতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে ওরা ,
পথে আসতে আসতে জোড় বাঁধে , বাঁধা পড়ে প্রেমে ,
তারপর একদিন পথের প্রেম ভুলে ফিরে যায় আপন নীড়ে ।
জানো আমি সারাবছরই অপেক্ষা করি উত্তুরে হাওয়ার
নতুন করে তো আর হিমশৈলের শৈত্যপ্রবাহে আক্রান্ত হবার ভয় নেই
মেনোপজ কি শেষকথা ? রূপ রস গন্ধ বর্ণের অপর নাম শীতলতা
নিভে গিয়ে জ্বলে ওঠার জন্যে চাই একটা দেশলাই কাঠি ।
শরীরের আগুনে মনের রসেই যে নতুন গুড় জ্বাল দেয় চাষী
নবান্নে সে গুড়ের ঘ্রাণ দুহাতে নিয়ে উত্তুরে হাওয়াকে চুম্বন করে
দক্ষ চাষীর মুখে ফুটে ওঠে বিন্দু বিন্দু ঘাম
আম্রপালিদের মেনোপজ হয় না  ।।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।