সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে মৌসুমী নন্দী (যাপন চিত্র পর্ব ২)

এবার দীপাবলী কাটুক আলোর রোশনাই এ—
কথা কোনো অস্ত্র নয়, কিন্তু কথাতেই কত মানুষকে মানসিকভাবে মেরে ফেলা যায় নিমেষে ৷ তবে কথারও ক্ষয় হয় ৷ অনেকসময় যা বলতে চাই তা বলা হয়ে ওঠে না সম্পর্ক নষ্ট হবার ভয়ে ,গুমরে গুমরে ওঠে গলার কাছে ৷ শেষে একদিন কথারাও ভুলে যায় কি বলার ছিলো ৷তবে আজ এসেছি কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ কথা নিয়ে , আর ভুলে যাবার আগেই তা জানিয়ে যেতে চাই ৷
এই বছরটা করোনা অতিমারীর কারণে আমরা জেরবার ৷ দুর্গাপূজা পার করেছি আমরা ,সামনেই দীপাবলী ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অন্তর্গত ল্যানসেট কমিশন তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে এইডস,যক্ষা ও ম্যালেরিয়ায় যত মানুষ মারা যায় ,বায়ুদূষণের কারণ তার প্রায় তিনগুণের বেশী মানুষের মৃত্যু ঘটে ৷ ভারতে প্রতিবছর এই বাযুদূষণের কারণে প্রায় ১২ লক্ষেরও বেশী মানুষ মারা যায় ৷ বায়ু দূষণের কারণে মূলতঃ ফুসফুস আক্রান্ত হয়েই বেশীরভাগ মানুষের মৃত্যু ঘটে ৷ গত দশ মাস ধরে কোভিড -১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশে ছড়িয়ে পড়ে পেনডামিকের আকার নিয়েছে ৷ করোনা ভাইরাস নাক , মুখ ও চোখের মধ্য দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে মূলতঃ ফুসফুসে গিয়ে তাদের বংশবৃদ্ধি করে নিউমোনিয়া রোগের সৃষ্টি করেছে,সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ে এই রোগটিকে চিহ্নিত করা গেলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসার দ্বারা রুগীকে সুস্থ করা সম্ভব হচ্ছে৷ কিন্তু অনেকক্ষেত্রে যে সমস্ত ব্যক্তির ফুসফুস বায়ুদূষণ বা ধূমপান জনিত কারণে ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে, অর্থাৎ সিওপিডির রোগী তাঁরা যদি করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হন তাঁদের অনেকেই সংকটজনক অবস্হায় পৌঁছে যাচ্ছেন এবং অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে ৷ সম্প্রতি কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা বলছে ভারতে কোভিড -১৯ এ যত মৃত্যু হয়েছে তার ১৭% বায়ুদূষণের সঙ্গে সম্পর্কিত , করোনা রোগীদের অল্প,মাঝারি ও অতিমাত্রায় আক্রান্ত এইভাবে চিকিৎসা করা হয় ৷ এই তিনটি ক্ষেত্রেই যারা করোনার চিকিৎসার পরে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ীতে আসেন তাদের প্রত্যেকেরই অল্প থেকে বেশী মাত্রায় ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৷ এই সমস্ত রোগীরা বায়ুদূষণের কারণে আরো বিপদে পড়ছেন ৷
সারা বছরের মধ্যে শীতকালে সাধারণত বায়ুদূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশী থাকে ৷ ইতিমধ্যে কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) উর্দ্ধগামী, খুব খারাপ অবস্হায় পৌঁছে গেছে ৷ বাতাসে ভাসমান সুক্ষ ও অতিসুক্ষ ধূলিকণা ও ক্ষতিকর গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি ঘটেছে ৷ আগামী শীতে অর্থাৎ নভেম্বর ২০২০ থেকে ফেব্রুআরি ২০২১ এই সময়কালে অবস্হার আরো অবনতি ঘটবে ৷ করোনা আক্রান্তদের জন্য আরো সমস্যার সৃষ্টি করবে ৷ করোনার চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ীতে এসেও অতিরিক্ত বায়ুদূষণের জন্য আরো অসুবিধায় পড়তে হতে পারে ৷ এমনতর পরিস্থিতিতে এইবার দীপাবলীতে যে কোন বাজি পুড়িয়ে বায়ুদূষণের মাত্রা আরো বৃদ্ধি ঘটালে ,করোনা মোকাবিলার বিষয়টি গভীর বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে ৷ তাছাড়া শব্দবাজির বিকট শব্দ কানের ক্ষতির পাশাপাশি বিভিন্ন হরমোন নিঃশরণের পরিবর্তন ঘটায় , ফলে মানুষের শারীরবৃত্তীয় কাজকর্মের পরিবর্তন ঘটে তারসাথে হৃৎপিন্ড, ফুসফুস ,কিডনি, জননতন্ত্র ইত্যাদিরও দীর্ঘস্হায়ী ক্ষতি হয় ৷ তাই সমাজের সমস্ত অংশকে ,প্রশাসন সহ বিভিন্ন ক্লাব , স্বেচ্ছাসেবী সংস্হা ইত্যাদি সবাইকে এগিয়ে এসে দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে ৷ সর্বত্র আওয়াজ উঠুক -“করোনা মোকাবিলায় এবার আলোর দীপাবলী হোক৷ বাজী পোড়ানো যাবে না ৷ ”
আসুন এবারের দীপাবলীতে একটিও বাজি না পুড়িয়ে পরিবেশ দূষণ রোধ করি এবং কোভিড -১৯ মোকাবিলার পথ সুগম করি ৷
সকলের জন রইল দীপাবলীর আগাম শুভেচ্ছা ৷ আগামীতে আসবো আবার অন্যকোনো উপস্থাপন নিয়ে , সবাই সঙ্গে থাকবেন আশা রাখি ৷

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।