গদ্যের পোডিয়ামে মালা মিত্র

বিরহের কণাটুকুর রেশ নিয়ে….

‘এ রি মোহে পিয়া নাহি আওয়ে, উন বিনা মোরা জিয়া ঘাবড়ায়ে, যা যা রে কাগতু যা সদারঙ্গ, পিয়া কো লায়ে বুলায়ে’,
দেশ রাগে কেঁদে চলে প্রেমিক মন,পিয়া ছাড়া চোখে মহা শূণ্য। দমকে দমকে দামিনী গুমরায়, ঋতু চলে যায়,’পিয়া তোরা ক্যায়সা অভিমান’নিয়ে।
একাকিত্বের যন্ত্রণায় কালিদাস মেঘকে দূত করে লিপি পাঠান পিয়ার উদ্দেশে।
যুগ যুগ ধরে বিরহী কান্না বৃষ্টির ধারায় বয়ে যায়। বুভূক্ষু কবি বলে চলেন বেহাগে ,’যারে যারে কাগতু যারে কঁহিও, মোরা কঁহিও ইতনী সন্দেশ বা, সগরী রৈন মোহে তরপত বীতি, সদারঙ্গ পিয়া ছায়ে বিদেশবা’।
বিচ্ছেদে ভারাক্রান্ত মন তৃণে তৃণে খোঁজে প্রিয়ের বার্তা।
লালন সাঁই গেয়ে ওঠেন,’মিলন হবে কত দিনে আমার মনের মানুষেরি সনে’।
বিরহী আত্মা আনমনে গেয়ে ওঠেন,’ফিরিয়া এস, এস এস হে ফিরে ,বঁধু এ ঘোর বাদলে নারি থাকিতে একা,’ ঝমঝম বাদল কবির সাথে একাত্ম হয়।স্মৃতি বিদ্যূৎ হয়ে মনে ঝাপটায়।
পিয়ার খবর নেই কবির মনের ভেতর ঘরে ওঠে তুমূল ঝড় সে শুভদৃষ্টির কথা মনে পড়ে, ‘সেদিন ছিল কি গোধূলি লগন শুভ দৃষ্টির ক্ষণ, চেয়েছিল মোর নয়নের পানে যেদিন তব নয়ন’।ওই ক্ষণ টুকু ভেতরঘরে আজন্ম লালন পোষণ করে চলেন কবি, বুকের ব্যথায় লেখেন,’কাছে ছিলে, দূরে গেলে ,দূর হতে এস কাছে’, না সে সময় আর ফেরে না, যা যাবার তা চলে যায়,করাঘাত সম্বল কবির, ‘হাত খানি ওই বাড়িয়ে আনো, দাওগো আমার হাতে, ধরব তারে ভারব তারে রাখব তারে সাথে, একলা পথে চলা আমার করব রমনীয়’, আজন্ম কামনার হাত জিয়ন কাঠি হয়ে কবিকে সান্ত্বনা দেয়, একই সাথে আনন্দ আর বিরহ দহনে জ্বালায়।
যুগে যুগে প্রেম শাশ্বত অমর হয়ে প্রেমিক প্রেমিকাকে যুগপদ হাসায় কাঁদায়।
রাত্রি ছাড়া দিন দূর অস্ত,পদকর্তা রাধার মনের বেদনা নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ কে অন্য গমনের জন্য অভিমান ভ’রে বলেন, ‘ছুঁয়োনা ছুঁয়োনা বঁধু ওই খানে থাক, মুকুর লইয়া চাঁদ মুখ খানি দেখ’তবু বিরহীনি রাধা পাগলপারা অভীষ্টের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
যন্ত্রণা কাতর কবি বলেন,’পিয়ার লাগি মোর হৃদয় কাঁদে ,চন্দন লাগে বিস্বাদ।
ব্যথিত কবি ফুঁপিয়ে ওঠেন আত্মবিলাপে, ‘না মিটিতে সাধ মোর নিশি পোহায়, গভীর আঁধার ছেয়ে আছে হিয়ায়’,কল্পনায় অতীতে ফিরে যান,’আমার নয়ন ঘোরে এখনো শিশির ঝরে, এখনো বাহূর প’রে বঁধু ঘুমায়’।
মুহূর্তের ছবি শাশ্বত ভাস্বর হয় কবির লাভ্ ডুবে্।স্মৃতি রয়ে যায় বাঁচার রশদ হয়ে।
তাই তো জন্ম জন্মান্তর কবি চোখের জলের কালি আর মন কলমে লেখেন, ‘বঁধু তোমার আমার এই যে বিরহ এক জনমের নহে, তাই যত কাছে পাই তত এ হিয়ায় কি যেন অভাব রহে’।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।