সম্পর্কের রকমফের তো থাকেই।সম্পর্ক যদি কোনোমতে একবার ঘটে যায়,সে সম্পর্ক কখনও যাবার নয়।
সৌর পরিবারের কথাই ধরা যাক,প্রতিটি গ্রহ উপগ্রহ এমন এক ছন্দে বাঁধা, যা কোনো ভাবেই, কাউকে তার নিজের জায়গা থেকে নড়ানো যায় না,যদি কেও স্থানচ্যুত হয়, তবে সৌর পরিবারের ধ্বংস অনিবার্যই।
হ্যাঁ রাগারাগি মন কষাকষি, মুখঘুরিয়ে থাকা স্বাভাবিক, শেষে মধুরেণু সমাপয়েত,ভালবাসায়।
ঠোকাঠুকি, ঝনঝন, সে তো ঘটি বাটির ধর্ম,নিত্যকর্ম,
সূতোর টানটি কিন্তু অক্ষুণ্ণ থাকে।
বৃদ্ধ বাবা মা কে নানা চাপে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাবার পরেও কি কখনো কখনো কষ্টে গলার কাছে মাছের কাঁটার মত খচখচ বেঁধেনা জন্মটান?ছিঁড়ব বললেই কি সব সম্পর্ক ছেঁড়া যায়?
অনেক সময় চরম আগ্রহ শ্রম ভালবাসায় একটা বিয়ে করা গেল, কিন্তু নিত্য ব্যবহারের টানাপোড়েনে সে সম্পর্ক টেকানো গেল না,ছাড়াছাড়ি অবধারিত, আর হোলো ও,
ছাড়াছাড়ি তো হল,তবু কোনো একলা সকাল,বর্ষাদিনে,শীতের রাতে কি মন হু হু করে ওঠেনা, সে পুরোনো ঘা,যা সেরে গেছে বলে মনে করা গেছিল।
ভিকি বড় বাজে ছেলে, চা খেয়ে ভাঁড় ফেলার মত, ঘনঘন প্রেমিকা বদলায়,বদল তো জীবনের ধর্ম, চলতে থাকে, মানুষের মন বদল, প্রকৃতি বদল ক্রমাগত ঘটে চলে,তবু মালার মত করে যে যে সম্পর্ক গেঁথে রাখা গেছিল,সেগুলো বুকে কি সাজানো থাকে না?যা যখন তখন মনকে আমূল নাড়িয়ে দেয়।
যদিও লুকিয়ে রাখা সে সব ছোট বড় সম্পর্ক কোনোটাই ফেলার নয়,ওপর মন ভাবে ভুলে যাওয়া গেল,অথচ ভেতর কুঠুরিতে সে সব সম্পর্ক অক্ষয় অমর হয়ে রইল,সমস্ত খুঁটিনাটি নিয়ে ।বেকার প্রেমিক কে ছেড়ে ধনীর দুলালকে বিয়ে করা গেল,কিন্তু ফুলসজ্জা থেকে প্রতি রাতে, বাসরসজ্জায় কি, স্বামীকে পুরনো প্রেমিক কল্পনায় মিলন সম্পন্ন করতে হয় না?
যাপনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কি পুরোনো ছোটবড় ক্ষণ তা এফোঁড় ওফোঁড় করে না হৃদয়?
সূর্যের কাছে দূরে যত সম্পর্কই থাক, প্রতিটি কিরণ ই সব সম্পর্কে আলো ফেলে কমবেশি।
যার অনেক আছে, তাকে তো অনেক ব্যাঙ্কে টাকা গচ্ছিত রাখতেই হয়, তাই বলে কি কোনো অর্থই কি সে ফেলে দেয়?সবকিছুই তার মগজে স্থির মাপা থাকে।
যখন প্রেমিক নতুন কাউকে নিয়ে সুখে থাকে, প্রাক্তন প্রেমিকা কি ফেরত চাইতে পারে না,তার জীবন থেকে নেওয়া সেই দুর্মূল্য সময়,বৈশাখের সেই ঝড়জলের রাত,ফুলবাগে বসন্ত সময়, চিলেকোঠায় ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা,পাখায় পাখায় বাঁধা নিস্তব্ধ দুপুর, ছোটছোট মান অভিমান,রাগ অনুরাগ,খুনসুটি।
ইচ্ছে করলেই সম্পর্কে পড়া যায় না,সম্পর্ক আপনি হয়,কে কখন কোন সম্পর্কে জড়ায়,সে নিজেও বুঝে উঠতে পারে না,আর একবার সম্পর্কের সুত্রপাত হলে, সে মরণ ইস্তক জড়িয়ে থাকে অস্থিমজ্জায়।
তাই ভেবেচিন্তে সুস্থ স্বাভাবিক সম্পর্কে থাকা ভাল, যদিও এটা কারো নিজের হাতে থাকে না, বলাই বাহুল্য।
বহু যুগ যে জীবন থেকে নেই হয়ে গেছে, হটাৎ জানলা গলে চাঁদের আলো গায়ে ধাক্কা দিলে মনেকি পড়ে না তার বুকের বন্দরে রাখা আপনচাঁদকে, যে তার বুকে ছাপা হয়ে আছে অনেক হাসি কান্না নিয়ে।
সে অমূল্য ক্ষণ, স্মৃতি যেমন বেদনার, আবার যুগপৎ স্মৃতি সতত সুখের অনুভূতি আনে।
কিছু কিছু সম্পর্ক একদম বেনামি রয়ে যায়।
হটাৎ ভীড় বাসে চরম অসভ্যতার মধ্যে, কোনো প্রকৃত পুরুষ বুক দিয়ে আগলে রাখে যতক্ষণ না মহিলাটি নিজ গন্তব্যে পৌঁছায়।
হাসপাতালে রক্তের প্রয়োজন, এক এক করে পঁচিশ যুবক রক্ত দিয়ে যাকে বাঁচায়,সে জানতেও পারেনা এরা কারা, অথচ তাদের রক্তে সে বেঁচে ঘরে ফেরে।
অনাথ আশ্রমের সমাজ ছিন্ন পরিবারহীন বাচ্চাটির কোনো মন ভাল করা সম্পর্ক গড়ে ওঠে অজান্তেই, ওখানকারই সুপার বা কোনো কর্মচারীর সঙ্গে, যে তাকে একটু বড় পিসের মাছটা মাংসটা দেয়,নতুন পোশাক এলে একটু বেশি উজ্জ্বল পোশাকটা তাকে বেছে দেয়,আপত্য ভালবাসার এই ছোট বড় সম্পর্ক গুলো কোনো ইরেজার মোছে না।
এই রকম অজস্র সম্পর্ক ঘটে মানুষের জীবনে,সম্পর্কের এই মাকড়জাল ছো’ট্টা থেকে ব’ট্টা কেউই মুক্ত নয়।