সাপ্তাহিক রম্য সাহিত্যে মন্দিরা হাজরা (বসু) (পর্ব – ৮)

আমি আবার দু দুজন সার্জেনের “একটুকু ছোঁয়া “ লাভ করেছিলাম । প্রথমবার প্রায় সমস্তদিন নির্জলা উপবাসের পর আমার অপারেশন বাতিল হয়ে যায় । কোনো এক অজ্ঞাত কারন বশতঃ সবচেয়ে জুনিয়ার ডাক্তারটি এলেন ক্ষমা প্রার্থনা করতে । সারাদিন উপবাসক্ষিন্ন আমার যাবতীয় রাগ, অভিমান , প্রশ্নের উদারা-মুদারা-তারা’ র বিপরীতে তিনি নিষ্পলক ভাবে নীরব হয়ে রইলেন । এইরকম প্রস্তরবত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ক্ষুধিত , আশাহত , অর্ধোন্মাদ পেশেন্টদের বাক্যবান হজম করা এন. এইচ. এস. এর শিশু ডাক্তারদের বেসিক ট্রেনিং এর পর্যায়ভুক্ত । এই অগ্নিপরীক্ষায় বারকতক উত্তীর্ণ হলে তবেই এঁরা ছুরিকাঁচিতে হাত দেবার সুযোগ পান । এঁদের দুটি ক্যাচ ফ্রেজ হল ” আই ডোন্ট ন্যো” এবং ” আই এম স্যরি “। ভেবে দেখলে এও এক ধরনের নীরবতাই । আর কেনা জানে বোবার শত্রু নেই । এই স্পর্শকাতর মুহূর্তগুলিতে এইসব “শাবক” ডাক্তারদের পাশে পক্ষীমাতার মতো দাঁড়িয়ে থাকেন ওয়ার্ডের সবচেয়ে সিনিয়র সিস্টাররা । গোলাগুলি যখন নো ম্যানস্ ল্যান্ড ছাড়িয়ে যায় যায় করছে তখন এই বড়দিদিমনি প্রায় ভোজবাজির মতো একবাক্স স্যান্ডুইচ হাজির করলেন । “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী——- ইত্যাদি । ফলতঃ অবিলম্বে আমার চোখা চোখা যুক্তি গুলি মাঠে মারা গেল । ছোকরা ডাক্তারটিও সুযোগ বুঝে সটকে পড়লেন ।
পরদিন সকালে অবশ্য ধড়াচূড়ো পরিয়ে আমাকে শল্যগৃহে নিয়ে যাওয়া হয় । ভারি দুষ্টুমিষ্টি চেহারার একজন নেহাতই বালিকা ডাক্তারনি আমার বেডের পাশে এসে মধুর হেসে আমায় বললেন ” আমি তব মালঞ্চের হব মালাকার ! ” বাপ-পিতেমোর আমল থেকে বই- বায়োষ্কোপ – বৃন্দগান মারফত আমাদের মাথায় গজাল মেরে ঢোকানো হয়েছে যে বুড়ো ডাক্তারই বড়ো ডাক্তার ! দুই যুগ আগে এ অধমও নিয়মিত শুনতো ” এই বাচ্চা মেয়েটা অপারেশন করবে ? এ পারবে তো ? ” । বেজায় অপমানিত হয়ে প্রতিবারই পেরে দেখিয়ে দেবার রোখ চেপে যেত । তবু কেন জানিনা কোনো এক অজ্ঞাত ভয়ে সেদিন আমিও সেই পলিটিক্যালি ইনকারেক্ট প্রশ্নটি করে বসলাম ” ইয়ে—- মামনি
তুমি এর আগে কয়টি কেস খাবলিয়েছ ? ” । মামনি পূর্বাধিক মিষ্টি হেসে জবাব দিলেন ” ভেবোনা , গুরু — চ্যালা —- নূরজাহান — অজ্ঞান রুগীর সব সমান ! “