ক্যাফে ধারাবাহিক গল্পে মনোরঞ্জন ঘোষাল (পর্ব – ১২)

টলি ট্যাব আবিষ্কার

ক‍্যালোরি মিতির নীতির মত ওর শরীরের উদ্বিগ্ন উত্তাপকে আমার ঠাণ্ডা উদ্বেগ দিয়ে সাম্য করে দিলাম।

এবার সে ধীর স্থির একাগ্র চিত্ত হয়ে গাছের বলা কথা শোনায় মন নিবেশ করল। এখন সে গাছের বলা কথা শুনতে পাচ্ছে! তার চোখে মুখে ফুটে ওঠা আনন্দের ঝলক দেখে তা বুঝতে আমার অসুবিধা হল না। এবার আমি কানে মাইক্রোফোন জুড়ে নিলাম! এখন দু জনে অবাক হয়ে শুনছি গাছেদের হতবাক্ করা কথা বার্তা!

তারা যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে বলছে-“ ও বাবা গো! মা গো! যন্ত্রণার জ্বালায় মরে গেলাম গো! শয়তানরা কেন মরে না গো?”

পাশের আর একটি গাছ অমনি বলছে- “ও কথা বলিস না রে! ওরা আর যাই হোক এই ধরণীর সন্তান। আমাদের অনুজ। ওদের মৃত্যু চাওয়া টা আমাদের শোভা পায় না।” আমিতো ভুলে গিয়ে ছিলাম যে একটি গাছের সংস্পর্শে আর যে সব গাছ থাকবে তাদের সকলের বলা কথাই আমরা শুনতে পাব। তাই প্রথমে ভেবে ছিলাম হয়তো ম‍্যাগনিফাই যন্ত্রটি স্পর্শ ছাড়াই গাছের ছাড়া কম্পাঙ্ক রিসিভ করছে। পরে বুঝলাম যে তা নয়। আসলে গাছেরাই পরস্পর স্পর্শ করে রয়েছে। একটি কথা আমাকে একটি বারের জন‍্য ভাবিয়েছিল। যেটি আধুনিক বিজ্ঞানের প্রাণের সৃষ্টি মত বাদের একটি অন‍্যতম সোপান। আমরা আজকে জানতে পারছি যে এই ধরা ধামে জলেই প্রথম প্রাণের সৃষ্টি হয়েছিল। সেখান থেকে ডাঙার গাছ পালা আর জীব জন্তুর বিবর্তন ঘটে। সেই বিবর্তনে ধাপে আমাদের থেকে বহু আগে গাছেরা এই ধরা ধামে এসেছে। সে কথা আজ ওদের মুখে শুনে একটি প্রত‍্যক্ষ দলিল পেয়ে গেলাম।

এবার শুনতে পেলাম অন‍্য আর একটি গাছ বলছে- “মৃত্যু চাইবে না তো কী করবে? আমরা ওদের কী ক্ষতি করেছি বল? ওরা আমাদের ডাল পাতা গুলো অযথা কেটে ফেললে। আমার শিকড়ের এক গোছা উপাঙ্গ কেটে নিলে। আমি যন্ত্রণায় ছটফট করছি ওদের জন‍্য। ওরাই সব সময় আমাদের সুখের সংসারে জ্বালা ধরাতে ছুটে আসে। আমরা কি কখনো ওদের সংসারে বিঘ্ন ঘটাতে ছুটে যাই বল?”

তার পাশেই একটি গাছ তখন বলে উঠল- “ওরা কখনো কখনো আমাদের ভালোও বাসে তো বল? জল দেয়। পুষ্টিকর খাবার দেয়। প্রয়োজনে সেবা করে অসুখ সারায়।”

“সে কী আর এমনি? ডাল পালা। ফল। ফুল। পাতা। ছাল। শিকড় এমনকি বছর বছর ধরে সযত্নে তৈরী করা এই দেহটাকে পর্যন্ত চিরে ফালা ফালা করতে ওদের বুকে বাধে না। ওরা এতটাই নিষ্ঠুর!” আর একটি গাছ যেন রাগে এই কথা গুলো বলে ফেলল।

এবার সেই বড় আর বুড়ো গাছটার বয়সের ভারে ভারী বুড়োটে গলা শুনতে পেলাম। মাঝে মাঝে বলতে বলতে হাঁপিয়ে পড়ছে। অবিকল বাত আর যক্ষা গ্রস্ত আমাদের বুড়ো মানুষের মত। খক্ খক্ করে যেন কাশিতে কাশিতে সে বলছে- “সাধে কী ঐ জানোয়ার গুলকে কৌশল করে মারছি রে! অনেক ভেবে চিন্তে কাজ করছি। তোদের মত ছেলে ছোকরা তো নয়। আমার যথেষ্ট বয়েস তো হল। তোমাদের তো ও সব দিকে নজর নেই। তোমরা সব কম বয়সী ছোকরা ছেলেদের মত। জীবনে দেখেছ টা কী? ও গুলো আমাদের এখানে বসবাস করলে জীবটা অশান্তিতে ভরিয়ে দেবে। ঐ ইঁদুরের দল গর্ত খোলার অজুহাতে সব শিকড় কেটে লন্ডভন্ড করে ফেলবে! গায়ে চড়ে কচি ডগা আর পাতা কেটে কুচি কুচি করবে! আর ফল ফুলের ধ্বংস তো করবেই! তাই ওদের কী এখানে থাকতে দেওয়া যায়?”

সকলেই তখন এক সুরে বলে উঠল- “না না। ওদের থাকতে দেওয়া যাবে না। আপনি ওদের মেরে ফেলে সঠিক কাজ করেছেন।”

আমরা দুটিতে সেই কথা শুনে পরস্পরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।