।। ত্রিতাপহারিণী ২০২০।। T3 শারদ সংখ্যায় মধুসূদন দরিপা

বংশী দর্জি আর ডোমের গল্প

বংশী দর্জি সারা বছর বেগার খাটে বাবুর । বাবু দয়া পরবশ হয়ে মাঝে মাঝে খেতে দেন দুটো এঁটো কাঁটা ।

ওর বউ মন্দিরে রান্না করে বিনি পয়সায় । জগজ্জননীর ভোগ ।
—-মা ঠিক কৃপা করবেন তোকে । পূজারী ঠাকুর ভোগের রান্না খেতে খেতে আশ্বাস দেন । ও সন্তানহীনা । কুড়ি বছর হয়ে গেলো ।
— আর কি হবে ?
–হবে হবে ঠিক হবে সবুর কর । সবুরে মেয়া ফলে ।

মেয়া ফলে । বছরে দেড় মাস । দুর্গা পূজার সময় । একমাত্র ওই তিন পক্ষ কাল বংশী দর্জির খাতির বেড়ে যায় । পুজো যত এগিয়ে আসে তত ডাঁট বাড়ে তার ।
‘ আর অর্ডার নেওয়া হবে না ‘ দোকানের সামনে টাংগানো থাকে ।
তবুও অর্ডার নিতে হয় । ‘ ভি আই পি’-রা যে সমাজের আনাচে কানাচে এখন । কার কখন গোঁসা হয় !
—-হ্যাঁ রে বংশী ! ওদের গোঁসা হলে তোর কি ? হারানোর কি বাকি আছে তোর ?
বংশী ফ্যাল ফ্যাল করে আকাশের দিকে থাকিয়ে থাকে !
—-তা তো জানি না । তবুও যদি গোঁসা হয় ! যদি …
এ বছর করোনা ! অর্ডার নেই । বরাত নেই । বংশীরও খাতির নেই । ডাঁট নেই । ভি আই পি-দের ভয় নেই ! করোনার জন্য পৃথিবী বদলে গেছে । লোকেরা নতুন জামা বানাচ্ছে না । বানিয়ে কি হবে ? যে কোন মুহূর্তে মৃত্যু হতে পারে ! মৃত্যু হলে উলঙ্গ দেহ পোড়াবে ডোম । থুড়ি ! বিদ্যুৎ চুল্লি !
ডোমটির কাজ নেই । চুল্লির বাইরে নদীর ধারে কাঠের চিতাটি অভুক্ত থাকে প্রায় দিন । ডোমটি বসে থাকে শ্মশানে মা কালীর মুখ চেয়ে ।
—-চুল্লিটা বিকল করে দে মা ! মড়ার আঁচে দুটো ভাত ফুটিয়ে খাই !
চুল্লির আঁচ বেড়ে চলে রোজ । মন্দিরে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকে ডোমটি । বংশী বেগার খেটে যায় বাবুটির । ওর বৌ রান্না করে যায় ঠাকুরের ভোগ ।
কবি ছবি আঁকেন প্রজাপতি ব্রহ্মার চারটি মুখ !
করোনা
ডোম
বংশী
বংশীর বৌ ।
আদতে একটিই মুখ । শুধু লিঙ্গের তফাৎ ! কবিতা লেখা হয় ! ছাপা হয় না ! প্রেসে তালা পড়ে গেছে । সেলাইকলের মতো । কাঠের চিতার মতো ।
শুধু মন্দির খোলা থাকে ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।