গদ্যের পোডিয়ামে মধুপর্ণা বসু

রিলেশনশিপ??

ওই যে কারা সব বেদ ব্রাহ্মণ উপনিষদের মন্ত্র উচ্চারণে বেঁধে দিয়েছে দুটো দেহ।।আমরা ভাবি সাতজন্মের বন্ধন, মন রইলো, শূন্য বালুচরে একা, আত্মা রইলো উপোষী। শুধু শরীর শরীর নামজপের বাতিক। নিয়মের বাইরে যে জীবনটা প্রাণ খুলে কথা বলে, হাসে কাঁদে, চীৎকার করে ভালোবাসার রূপ রসে অবাক হয় সেটাই আসল প্রেম সে কজন হৃদয়ের শিল্পী বোঝে??
তাই জীবন ও জীবনসাথী এক সুরে গাঁথা হয়না সবসময়। তানপুরায় কাল মুলে সুর গুলো কে বাঁধার চেষ্টা করি, জীবনেও তেমনি, এগিয়ে পিছিয়ে, মেনে মানিয়ে, দুটো আলাদা রাস্তাকে পাশাপাশি আনতে হয়। আবার প্রেমের বিয়েতেও ভালোবাসা, প্রেম, যত্ন, দায়দায়িত্ব, টান সব থাকে, থেকে যায়, খুব ভালো। তারপর, কোন এক লোডশেডিংএর সন্ধ্যায় হঠাৎই মনে হয়, দূর, বড়, একঘেয়ে, থোর বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোর, জীবন, সেই স্নানের পরে খাওয়া, আর ঘুমের আগে, নিয়ম মতো দুচারটে কথার পরেই শরীরের খেলা, অফিস, সন্তান, দেশ, ঘোরা, আবার একই বইয়ের পাতা বারবার পড়ে দেখা, যাই একটু পাড়া বেরিয়ে আসি।
তারপর, কোন এক দিন, ফেসবুক,নতুন বন্ধু বা বান্ধবীর ভার্চুয়াল মোলাকাত, সহবত বিনিময়, দুচারটে চ্যাট, সময় কাটানো থেকে, সম্পর্ক। বন্ধু,বা বান্ধবী, একটু অন্যরকম, অন্য স্বাদ, অন্য গন্ধ, নিস্তরঙ্গ জীবনে উত্তেজনা, ওই “কফি উইথ কারণ” এর মতো দু একবার এখানে ওখানে…
চাহিদা, প্রথমে ভালো লাগা, তারপর ক্রমশ শরীর, তারপর? নিয়মিত নতুন রুটিনে বেশ বুকে ধুকপুকানি। কিছুটা মানসিক, কিছুটা দায় দায়িত্বও যে এসে পড়ে না তাও নয়, কিন্তু, জীবন কে বৈচিত্র্যময় করতেই ঘরের থেকে বাইরে পদক্ষেপ। আর এখানেই গল্প থেমে থাকেনা। কেউ সংসার আর ফ্যান্টাসি কে ব্যালেন্স করে, ঘরের জীবন আর বাইরের সম্পর্ক, দু নৌকায় পা দিয়ে। আর যারা পারেনা তাদের জীবনে আসে, ঝড়, ভাঙন, সব কিছুর একটা চূড়ান্ত বিপর্যয়। তাহলে উপায়? আসলে বন্ধুত্ব আর সম্পর্ক দুটো এক জিনিস নয়, একটা কে প্রতিষ্ঠা করা যায়, আর একটা নীতি গত, আইনত ভাবে স্বিকৃতী দেওয়া হলেও মনের দিক থেকে প্রশ্নের অবকাশ থেকেই যায়। তাই এই দুটোর মধ্যে একটা পার্থক্য রেখা টেনে দেওয়াই ভালো। সম্পর্কে যাওয়ার আগে তার পরিনতি ভেবেই এগোনো উচিত। একটা বিবাহ বহির্ভূত নারী পুরুষের সম্পর্ক তে তৃতীয় ব্যক্তি, সেটা স্ত্রী, স্বামী বা তৃতীয় নারী যেই হোক যদি প্রশ্ন, নিরাপত্তা, বিচ্ছেদ, বিপর্যয়, এমনকি ইচ্ছে মৃত্যুর মতো কোন ধ্বংসের সম্মুখীন হয়, তবে সেই সম্পর্ক নিয়ে ভাবতে হবেই। দু নৌকায় পা দিয়ে চলা কি সহজ? নিশ্চয় নয়, তাই কোন নৌকাটা শক্ত পোক্ত বেশী সেটা তো ভাবতেই হবে। কোন সম্পর্কটা চিরস্থায়ী, কোন সম্পর্কে ভালোবাসা, স্নেহ, যত্ন, কমিটমেন্ট, দায়দায়িত্ব,আর সামাজিক, আর আত্মসম্মানগত মর্যাদা বেশী, কোন সম্পর্কটা নিজের মন, আর বিবেকের কাছে বেশী গ্রহনযোগ্য সেই সব সাতপাঁচ ভেবে তবেই সম্পর্ক। বন্ধুত্ব আর সম্পর্ক যে একি নয়, এই সহজ পার্থক্যটা অনেকেই গুলিয়ে ফেলে।তাই এতো জ্বালা। সব শেষে এই গানটাই মনে এলো,
” এ ব্যথা, কি যে ব্যথা, বোঝে কে আনজনে,
সজনী আমি বুঝি মরেছি মনে মনে ”
ওড়ার স্বপ্ন যখন কঠিন মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে,
মন তখন তোমার দেওয়া মহাশূন্যে দুহাত তুলে আশ্রয় চায়।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।