• Uncategorized
  • 0

গদ্যের পোডিয়ামে মধুপর্ণা বসু

মাৎসর্য

সবার মনে গোলাপের বদলে কাঁটা বিঁধে আছে।
তোমার আমার তাদের…
কি যেন খুঁজছে, গোলাপি সকাল, দুধে আলতার বিকেল, আর রোমাঞ্চকর নীলচে রাত্রি,
অথচ মনের মতো পাচ্ছিনা আমরা , তাই সবসময় বুকের মধ্যে একটা রাগী ডোভারম্যান দাঁত বের করে পায়ের নখ দিয়ে বুকের চার ইঞ্চি নীচের মাটি আঁচড়ে রক্তাক্ত করছে।
এই প্রকাণ্ড অতৃপ্তি উত্তপ্ত হাওয়া ভরা বেলুনে নিজের ক্ষমতার থেকে উঁচুতে উড়তে উড়তে একেবারে মাটির আকর্ষণের বাইরে অপ্রয়োজনীয় রেষারেষি আওয়ায় গুমরে ওঠে।
সেই ছায়া যুদ্ধে সবসময় মনখারাপী জ্বরে ভুগছি। একটা হিংসে ছিঁড়ে নিচ্ছে আমাদের পাশের ঘর। কিছু একটা পথ্য পেয়ে মন ছোঁয়ার আগেই দেখা হয়ে যায় পাশের বাড়ির উৎসবের আলোর সজ্জায়, আনন্দের সেলিব্রেশনে কেমন শীত নেমে আসে মাথার স্নায়ুতে…
গম্ভীর অসন্তোষে প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
নদীর ওপার এপারে দীর্ঘশ্বাসের কোরাস। অতএব মনের মধ্যে মাৎসর্যের অসুর কাণ্ডজ্ঞান শুন্য হয়ে চোরাপথে নিজেরই শত্রু।
এই অতৃপ্ত তালকানা চাহিদার পাহাড় রাগে ফুঁসতে থাকা যুদ্ধে মিত্র পক্ষের কাছেও ধরাশায়ী হলেন।
দিক বিদিক তালজ্ঞান শূন্য হৃদয় ভুল রাস্তায় দূর্ঘটনায় পড়ে। জাগতিক নিয়মে পাওয়া চোদ্দ আনা একটাই তো জীবন!
গলিপথে অন্ধ ইচ্ছেগাড়ি বৃথা ঘুরে মরে।
চোখের সামনে নিজের হাতের মুঠোয় পাওয়া শান্তির ম্যাজিক উইন্ড ফেলে মরীচিকা খুঁজে কি বা জয়? কিসে জুড়োয় মন?
একটা সহজ স্বতঃস্ফূর্ত রাঙামাটির রাস্তা ছেড়ে, ভালোবাসার একটা সবুজ বাগিচায় দুদণ্ড না বসে শুধু রাতের ছায়াপথে মায়াবী চাঁদ ধরা খেলায় কিসের নাগাল পাওয়া যায়?
আর তো, বেশী কি দুদিন বই তো নয়…
অসূয়ার খেলা ভুলে যদি প্রেমের আর শান্তি স্বস্তির একটা নিটোল গল্প হয়, সেই ছোট্ট অনুকূল গল্পে যদি একটু আরামের, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কাছের প্রিয় মানুষের সাথে এই দুদিনের ভ্রমণ ডায়েরিটা সবচেয়ে বেশি মধু মাখা করে রাখা  যায়, সেটাই সেরা পাওয়া নয়কি ?
এভারেস্ট জয় একটা ইতিহাস, যেটা সবার কাহিনী নয়, ফুলডুংরি টিলায় ওঠার সেই স্মৃতিই আমার ছাপোষা মনের ভীষণ নিজস্ব।
আমার সেই নিজের শক্তিতে অর্জিত মাটির গন্ধ মাখা ঘাসের বিছানায় আরামের ঘুম আসে।
দূরে পাহাড়ের পিঠে অচেনা গাছের কোটরে যতই নাগমণির সন্ধান থাকে, এমন তো সারা দুনিয়ায় কতো লোভনীয় আচারই সাজানো,  তাতে চমকে উঠে স্বপ্নের ঘুমকে ব্রাত্য করে কি হবে.. তাই হিংসা আসলে যা মাৎসর্য বলে চিরকাল মানুষ তা নিয়ে প্রাণঘাতী খেলায় মেতেছে প্রকৃতপক্ষে তা হেরে যাওয়ারই নামান্তর। এই নির্মম খেলার ছলে মানুষ শুধু নিজেকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে আর একে অন্যের থেকে সরে গেছে বহুদূর। দুদিনের জীবনে আশ্রয় হোক ভালোবাসা, স্নেহ, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আর সহযোগিতার বন্ধুভাব।
মাৎসর্যকে বলো, ‘ বিষফল, তুমি মনের ঘর ছাড়ো।’
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।