ক্যাফে গল্পে মিষ্টু বসু

অচ্ছেদ্য

-স্বেচ্ছাচারী!
-তাই নয় তো কি?ভদ্রলোকের বাড়ির কোন নিয়মটা সে মানে শুনি?রাত করে বাড়ি ফেরা,সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা,সারাদিন ফোনে বকর বকর করা,মাঝে মাঝেই ট্যুরে চলে যাওয়া।এতো স্বাধীনতা কোন মধ্যবিত্ত বাড়ির বৌ উপভোগ করে শুনি?
-একজন রিপোর্টারের কোনো নির্দিষ্ট ওয়ার্কিং আওয়ার থাকেনা,যখন ডাক পড়বে,নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দৌড়াতে হবে।ডেডলাইন রক্ষা করতে না পারলে…
-আর সংসার ফেলে যখন তখন ট্যুরের ব্যাপারটা?ওটাও কি সমান জরুরি?
-বাইরে কাজ পড়লে তো যেতেই হবে।বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অজুহাতের তেমন কোনো জায়গা নেই।সেখানে একটাই নির্দিষ্ট নিয়ম চলে,’ইটস মাই ওয়ে ওর হাইওয়ে।’ও তুমি বুঝবেনা,ছাড়ো।
-না,আমি বুঝবোনা!তোর বাবার অকাল মৃত্যুর পর কি অপরিসীম লড়াই করে তোদের দুজন ভাই-বোনকে বড়ো করেছি,এর মধ্যে কি সব ভুলে গেছিস?
-না,ভুলবো কেন?সেসব দিনের কথা,তোমার নাছোড় লড়াইয়ের স্মৃতি,এতো সহজে তো ফিকে কথা হওয়ার নয় মা।
-তাহলে,কি করে বলিস আমি বুঝবোনা।আমি কি চাকরি করিনি?ছেলে-পুলে মানুষ করিনি?বাইরের জগত দেখিনি?অতিরিক্ত কি এমন তোর বৌ আজ করছে যা আমি একদিন করিনি।
-না,তুমি সবই করেছো।কিন্তু,তাও বলছি মা আজকের দিনে জীবন অনেক বেশি গতিশীল।তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে,পিছিয়ে পড়তে হবে।আর পিছোতে পিছোতে একদিন অকালেই হারিয়ে যেতে হবে।তখন?
-তখন আবার কি?আবার নতুন করে শুরু করবি।
-এই ইঁদুর দৌড়ের যুগে ব্যাপারটা ঠিক অতটাও সহজ নয়।
-কি সহজ আর কি কঠিন বিশ্বাস কর আমার আর একদম ভাবতে ইচ্ছা করছেনা।আমার বয়স হচ্ছে,কতদিন আর এমন জ্বালা সহ্য করবো?একটু শান্তি কি আমি এই বয়সে এসে আশা করতে পারিনা?
-হ্যাঁ,আলবাত পারো।তোমার সেই কাঙ্ক্ষিত শান্তির ব্যবস্থা করার দায়িত্ব আমার,কিন্তু তার আগে,তুমি বলোতো,তোমার তিথিকে নিয়ে যা যা সমস্যা হয় বা হচ্ছে,আজ পর্যন্ত তুমি তা ওকে খোলসা করে একবারও বলেছো?
-কি বলবো?ও কি ছোট বাচ্চা নাকি?নয় নয় করে তো আজ প্রায় দশ বছর বিয়ে করে এ বাড়িতে এসেছে।এখনো বুঝতে পারেনা,শাশুড়ির কোনটা পছন্দ আর কোনটা অপছন্দ?নাকি বুঝতে চায়না?অবশ্য বুঝতে চাইবেই বা কেন?শাশুড়ি তো আর মা হয়না?একটা বেরোজগারে বুড়ি তাও আবার বিধবা তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার মর্যাদা দেওয়ার কি কোনো প্রয়োজন থাকতে পারে?বল।
-প্রথমত,শাশুড়ির মধ্যে যদি মা হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা না থাকে তাহলে,বৌমা অচিরেই মেয়ে হয়ে উঠবে এমন অবান্তর আশা করাই অন্যায়।আর দ্বিতীয়ত:এবার তুমি কথা ঘোরানোর চেষ্টা করছো?
-মানে?
-মানে,তুমি আমার প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে চাইছো।
-কি প্রশ্ন?
-এই বললাম আর এই ভুলে গেলে!আচ্ছা ঠিক আছে,আরো একবার নয় জিজ্ঞাসা করছি,তোমার তিথিকে নিয়ে যা যা সমস্যা আছে,আজ পর্যন্ত তুমি তা ওকে কখনো পরিষ্কার করে বলেছো?
-বললাম তো।
-কি বললাম তো?উত্তর ‘হ্যাঁ’ কিংবা ‘না’ তে দাও।
-না।
-আচ্ছা,তুমি যদি একটা মানুষকে না জানাও যে তাকে নিয়ে তোমার কি কি সমস্যা হচ্ছে তাহলে সে নিজে থেকে কি করে তা জানবে?সে তো আর অন্তর্যামী নয়,বরং ভীষণ পরিমাণে অন্তর্মুখী একটা মানুষ।যে নিজের জীবনে নিজের পেশাকে বিশেষ একটা সময়ের পর একটু বেশি প্রাধান্য দিয়ে এসেছে ঠিকই কিন্তু কখনোই নিজের দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত হয়নি।সদাসর্বদা নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে,সকলকে ভালো রাখার।কিন্তু,কোথাও ত্রুটি নিশ্চয়ই থেকে যাচ্ছে,না হলে কি আর…
-বাবা!তুই তো দেখছি,বৌ ছাড়া দু চোখে আর কিছু দেখতেই পারছিসনা।অথবা বলা ভালো দেখতে চাইছিস না।
-দেখেছো তো?দেখেছো তো তুমি কেমন হাওড়া যেতে যেতে হাবড়া চলে গেলে।এটাই তোমার সমস্যা।তুমি নিজেই প্রকৃতপক্ষে সমস্যা সমাধানে উৎসাহী নও।আচ্ছা,তুমি কি সন্দেহাতীত ভাবে তিথির সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করতে চাও?নাকি গোটা টাই…
-থামলি কেন ঋজু?বল।গোটাটাই ইচ্ছাকৃত।শুধু ঝগড়া করার ফন্দি।আমি বাড়ির পরিবেশটাকে নষ্ট করতে চাই।চাইনা কেউ ভালো থাকুক,সুখে থাকুক।তাই তো?যদি তোর বিচার বুদ্ধি এই সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছায়,তাহলে আমার আর কিছু বলার নেই।আমাকে এবার বাবা,নিষ্কৃতি দে।আমি আর একটা দিনও বাঁচতে চাইনা।
-ব্যাস।এবার চির পরিচিত ইমোশনাল অত্যাচারে ফিরে গেলে।আচ্ছা,এই ভাবে চললে কি কোনোদিন ও কোনো সুরাহা বেরোবে?
-কি ভাবে চললে বেরোবে,শুনি?
-বিদ্রূপ করোনা।যদি সত্যিই সমস্যা সমাধানে ইচ্ছুক হও,তাহলে বলছি,না হলে ছাড়ো।
-আচ্ছা,রাগ করিসনা বল।শুনছি।
-তেমন কঠিন কিছু করতে হবেনা,পারলে শুধু কোনো বিষয়ে ওকে বিচার করার আগে ওর পরিস্থিতিটা,ওর অকল্পনীয় ক্রাইসিসটা একটু সহানুভূতির সাথে বোঝার চেষ্টা করো ।মতান্তর হলে খোলাখুলি প্রশ্ন করো।দরকার পড়লে শাসন করো কিন্তু ভুল বুঝে নিজেদের মধ্যে দয়া করে আর দূরত্ব বাড়িয়ে নিওনা।
-ঠিক আছে,তুই যখন বলছিস বয়োজ্যেষ্ঠ হয়েও তখন আমিই নয় এগিয়ে যাবো,মিটমাট করে নিতে।
-না,আমি বলছি বলেই নয়। সময় নাও,নিজে ভাবো,তারপর যদি এই সিদ্ধান্তে আসতে পারো যে, আমি নির্ভুল;তখন নয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ কোরো।
-ওকে।সব ভেবে দেখবো।তুই যা যা বলছিস,সংসারে নিশ্ছিদ্র শান্তি বজায় রাখার জন্য নয় ঠিক তাই তাই করবো।এখন বল,ভালো আছিস তো বাবা।
-সংসারে এরকম দীর্ঘকালীন অশান্তি চললে,বাড়ির থেকে এতো দূরে কোন ছেলে ভালো থাকতে পারে মা?
-বললাম তো…

-‘কি হলো,কি বিড়বিড় করছেন একা একা দাঁড়িয়ে,’ নিঃশব্দে তিথি যে কখন পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে,বুঝতে পারেননি অপরূপা দেবী,তাই নিজেকে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গুছিয়ে নিয়ে বললেন,
-কই না তো,ওই একটা গান মনে করার চেষ্টা করছিলাম।
-প্রেশারের ওষুধটা খেয়েছেন?
-হ্যাঁ।
-কাল বিকেল চারটেয় বিভূতি ডাক্তারের কাছে আপনার নাম লিখিয়ে এসেছি।রেডি হয়ে থাকবেন,পরীর স্কুলের গার্ডিয়ান মিটিংটা সেরে, কিছু দরকারি জিনিস কিনতে একবার হাতিবাগানে যাবো।ওখান থেকে ফিরে আপনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।
-নিয়ে যাওয়ার আবার কি আছে?আমি তো একাই চলে যেতে পারতাম।
-তা পারতেন,কিন্তু কাল যখন অফিস নেই,তখন আমি একবার যাই,দেখি ডাক্তার কি বলে।
-নতুন করে কি আর বলবে?ওই আরো দুটো বেশি টেস্ট করতে দেবে।লাভ নেই,বুঝলে বৌমা কোনো লাভ নেই,আমার পিছনে আর ফালতু খরচা করে।
-লাভ-লোকসান নিয়ে নয় আমাকে একটু ভাবতে দিন।আপনি বরং দেখে নিন,মুদিখানা থেকে মাসকাবারি আর কিছু আনতে হবে কিনা?
-হ্যাঁ,একটা লিস্ট করে রেখেছি।কাল সকালে মনে করে দিয়ে দেব।এখন যাও হাত-মুখ ধুয়ে নাও,খেতে দিয়ে দিই।
-ও আপনাকে একটা কথা জানাবো বলে ফোন করছিলাম,কিন্তু আপনার ফোন তো বন্ধ ছিল।
-এই যে দেখোনা কখন থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ঘুরছি,ব্যাটারি শেষ হয়ে গেছে,একটু চার্জ দেব কিন্তু,চার্জারটা আর খুঁজে পাচ্ছিনা। কিছু জরুরি কথা ছিল?
-তেমন কিছু নয়,আসলে,ফেরার পথে আপনার জন্যে চিকেন বিরিয়ানি,আর পরীর জন্য একটু চাইনিজ কিনে এনেছি।
-আর তোমার জন্য?
-আমার পেটের একটু সমস্যা চলছে,তাই…
-এ বাবা,তাহলে ডিনারে যে চিলি চিকেন করবো ভাবছি!খেতে পারবেনা তাহলে?
-চিলি চিকেন!
-হুমম
-তাহলে,একটু দেবেন,না খেলে আবার যদি আপনার খারাপ লাগে,কথাটা বলে তিথি অপরূপা দেবীর দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসতে লাগলো।প্রত্যুত্তরে অপরূপা দেবীও একগাল হেসে,
‘তাহলে,যাও এবার ফ্রেশ হয়ে নাও,আমি মুড়ি মাখছি।’ বলে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।

ডিনার শেষ করে,পরীকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার পর কানে এয়ারফোন গুঁজে দিয়ে,এফ.এমে গান শুনতে শুনতে প্রতি রাতে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস তিথির অনেকদিনের।কিন্তু আজ যেন কিছুতেই ঘুম আসতে চাইছেনা।তাই,শুয়ে শুয়ে বেশ কিছুক্ষণ উশখুশ করার পর বিছানা থেকে নেমে মোবাইলটা হাতে নিয়ে সে পাশের লাগোয়া ছোট অন্ধকার ঘরটায় গিয়ে দাঁড়ালো।
-কি হলো,তিথি ঘুম আসছেনা?
-না।
-কেন?কোনো সমস্যা?
-না।আর হলেও বা কি ঋজু,তুমি আসবে সমাধান করতে?
-বাবা,বৌটা আমার খুব রেগে আছে দেখছি।
-কেন রাগতে যাবো কেন?রাগ,অভিমান ওসব কি আমায় মানায়?আমাকে তো শুধু সহ্য করে যেতে হবে,শুধু সহ্য।।
-আমি তো তোমাকে কবেই মুক্তির পথ বলে দিয়েছি,কিন্তু তুমি তো আর আমার কথা শুনবেনা।
-তুমি যে পথ বাতলেছ,তা নির্বাচন করতে হলে যতটা স্বার্থপর হতে হয়,তা যে আমি নই,কিংবা হতে পারবোনা,তা তুমি ভালো করেই জানো।
-তাহলে,আর কি!এভাবেই প্রতিদিন যন্ত্রণা ভোগ করো।
-হ্যাঁ,তাই করবো।
-মা কি আর কিছু বলেছে?
-কই না তো?আর বললেও বা কি?ভেবে দেখেছি,সত্যিই তো,আমি ঘরে একদম সময় দিতে পারিনা আর বুড়ি মানুষটাও একা একা সব এই বয়সে পেড়ে ওঠেননা।তাই,মাঝে মাঝে অধৈর্য হয়ে যদি আলপটকা কিছু বলে ফেলেন,অত গায়ে না লাগিয়ে চুপ করে থাকাই শ্রেয়।আর তাছাড়া আজ আমার নিজের মা থাকলে কি অল্প-বিস্তর শাসন করতোনা?
-চিলি চিকেনে কি আজ মা চিলি দিতে ভুলে গেছিলো!
-ফাজিল কোথাকার।
-অ্যাই!
-কি?

‘ঘুমাওনি বৌমা’,শাশুড়ির ডাকে সম্বিৎ ফিরতে সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে তিথি পিছনে ঘুরে আলোটা জ্বালিয়ে বললো,’না,গান শুনছি।আসলে কাল ছুটি নিয়েছি তো তাই আজ একটু দেরি করে শোবো।আপনি এখনো জেগে আছেন?শরীর খারাপ লাগছে নাকি?’
-না না তেমন কিছু নয়,আসলে একটা জরুরি কথা ছিল।
-হ্যাঁ,বলুন না।
-আসলে…মানে…ঠিক বুঝতে পারছিনা মা,কোথা থেকে শুরু করবো
– এতো ইতস্তত করার কি আছে,যেখান থেকে ইচ্ছা শুরু করুন,কথাটা বলার পরও অপরূপা দেবী চুপ করে আছেন দেখে,তিথি এগিয়ে এসে শাশুড়ি মার হাত দুটো ধরে শান্ত গলায় পুনরায় বললো,বলুন মা।
-মা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও।আমি তোমাকে,তোমার এই অসহনীয় পরিস্থিতিকে কখনো বোঝার চেষ্টা না করে,যখন যা মুখে এসেছে তাই বলেছি।কখনো ভাবিনি সেই অপয়া বিকেলের পর থেকে আজ পর্যন্ত তোমাকে কতটা লড়াই করতে হচ্ছে।কতটা যন্ত্রণা,কতটা কষ্ট বুকে নিয়ে তুমি বেঁচে আছো।আমাকে ক্ষমা করো মা,হাত জোর করে কথা গুলো বলে অপরূপা দেবী কান্নায় ভেঙে পড়লেন।অপরূপা দেবীর মতো একজন শক্তপোক্ত মানুষকে এই ভাবে হাউ হাউ করে কাঁদতে দেখে,তিথি তৎক্ষণাৎ দু হাত দিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরে নিজেকে প্রাণপণে সংযত করে বললো,’এ বাবা এসব কি বলছেন মা।আপনি আমার মায়ের মতো আপনার পুরো অধিকার আছে,আমাকে শাসন করার,ভুল করলে শুধরে দেওয়ার;আর তাছাড়া মাথার উপর আপনি অভিভাবক হয়ে আছেন বলেই তো আমরা আজও বহাল তবিয়তে আছি।প্লিজ মা ,কাঁদবেননা,চোখের জল মুছুন।’
অপরূপা দেবী শাড়ির খুঁট দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে বললো,তুমি সত্যি বলছো মা। আমার প্রতি তোমার কোনো অভিযোগ নেই।
-না,সত্যি কোনো অভিযোগ নেই।আর তাছাড়া,আমি বিশ্বাস করি,এই অনাথ মেয়ে টাকে সামলাতে,এই পরিবার টাকে বাঁচাতে আপনি যা কিছু করেছেন,তা অত্যন্ত প্রশংসার যোগ্য মা। তাই এখানে রাগ-বিদ্বেষ-অভিযোগের কোনো জায়গা নেই,থাকতে পারেনা।
অপরূপা দেবী এবার তিথির কপালে একটা স্নেহ চুম্বন এঁকে দিয়ে বললেন,’ভালো থাকো মা।ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন।’
-আচ্ছা,ঠিক আছে।হয়েছে।এবার যান গিয়ে শুয়ে পড়ুন,অনেক রাত হয়েছে।না হলে আবার শরীর খারাপ করবে।
-তোমার শরীরটাও তো ভালো নেই।আর তাছাড়া কাল অনেক ভোরে উঠতেও হবে।চলো,তুমিও শোবে চলো।
-আমার একদম ঘুম আসছেনা মা।আপনি যান।আমি একটু বাদে শুচ্ছি।
-না,এখনই চলো।আজ আমি তোমায় ঘুম পাড়িয়ে দেব।দেখি ঘুম না এসে কোথায় যায়?
-আপনি আমায় ঘুম পাড়িয়ে দেবেন!
-কেন?আমি পারবোনা?
-এ বাবা!তা কি আমি বলেছি,নাকি ?
-তাহলে?
-তাহলে কিছু না।চলুন।
-হ্যাঁ,চলো।বলে অপরূপা দেবী ঘরের আলোটা নিভিয়ে দিয়ে বৌমাকে সঙ্গে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।

পরদিন ভোরে স্কুলে যাওয়ার আগে পরী যখন বছর পঁয়ত্রিশের এক তরুণের ছবিতে একটা রজনীগন্ধার মালা পরিয়ে দেওয়ার সময় কাঁদো কাঁদো গলায় বলছিলো,’আই মিস ইউ বাপি’,দু-তিন পা দূরে তখন শাশুড়ি-বৌমা আগের দু’বছরের মতো আলাদা-আলাদা দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলার বদলে,একে ওপরের হাত দুটি শক্ত করে ধরে কোনোরকমে গলার কাছে দলা পাকিয়ে আসা কান্না গুলো আটকে রাখার চেষ্টা করছিলো শুধুমাত্র “সুদূর্স্থিত” প্রিয়তম মানুষ টাকে ভালো রাখার বাসনায়।
শুনতে পাচ্ছিলো ওরা কেউ,নাকি পাচ্ছিলোনা,প্রভাতের নতুন আলোয়,বহু দূর কোনো উৎস হতে মৃদু ভেসে আসা,রবীন্দ্র সংগীতের দুটো হৃদয়স্পর্শী কলি ‘জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে,বন্ধু হে আমার,রয়েছ দাঁড়ায়ে…’ স্বর্গীয় ঋজু ছাড়া আর কারো পক্ষেই তা কখনো জানা সম্ভব নয়!

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।