ধলেশ্বরীর অন্য ধারায় ভ্রমণ কাহিনী তে লোকমান হোসেন পলা

পাগলা মসজিদ
সকল ধর্মের মানুষের কাছে পাগলা মসজিদ এক সার্বজনীন পবিত্র ধর্মীয় কেন্দ্র

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ (Pagla Masjid) অবস্থিত। প্রচলিত আছে, পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক সাধক নরসুন্দা নদীর বুকে মাদুরে ভেসে মসজিদের স্থানে এসে অবস্থান নেন। ধীরে ধীরে তাঁকে ঘিরে ভক্তদের সমাগম হতে থাকে। আধ্যাত্মিক সাধকের মৃত্যুর পর তাঁর কবরের পাশে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। যা বর্তমানে পাগলা মসজিদ নামে অত্যন্ত সুপরিচিত।

আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই পাগলা মসজিদের বর্তমান জমির পরিমাণ ৩ একর ৮৮ শতাংশ। যদিও প্রথম দিকে হয়বতনগর দেওয়ানবাড়ির ওয়াকফকৃত ১০ শতাংশ জমিই কেবলমাত্র মসজিদের নামে অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিন তলা বিশিষ্ট পাগলা মসজিদের ছাদে তিনটি বড় গম্বুজ এবং ৫ তলা ভবনের সমান একটি মিনার রয়েছে। প্রায় সহস্রাধিক মুসল্লির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই মসজিদে নারীদের নামাজ আদায়ের জন্য পৃথক ব্যবস্থা রয়েছে।

বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে পাগলা মসজিদের রয়েছে বিশেষ আধ্যাত্মিক গুরুত্ব। এক কথায় বলা যায়, সকল ধর্মের মানুষের কাছে পাগলা মসজিদ এক সার্বজনীন পবিত্র ধর্মীয় কেন্দ্র। মানুষজন বিশ্বাস করেন, যদি যেকেউ একনিষ্ঠ নিয়তে পাগলা মসজিদে কোন কিছু দান করে তাহলে তার মনের বাসনা পূর্ণ হয়। এমন বিশ্বাসের কারণে মানুষজন পাগলা মসজিদে প্রচুর দান-খয়রত করেন। আর অধিক দান-খয়রতের কারণে পাগলা মসজিদ ইতিমধ্যেই দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এই মসজিদের আয়ের একটা অংশ অন্যান্য মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা সহ বিভিন্ন উন্নয়ন ও সেবামূলক খাতে ব্যয় করা হয়। এছাড়া ২০০২ সালে মসজিদের পাশে একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

বর্তমানে লেকসিটি প্রকল্পের আওতায় পাগলা মসজিদের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নরসুন্দা নদী খনন, দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণ, মসজিদের শোভাবর্ধন এবং রঙিন আলোকসজ্জার জন্য দিনে ও রাতে মসজিদটি দেখতে চমৎকার লাগে।

সব ধর্মের মানুষের কাছে পবিত্র হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। মানুষের বিশ্বাস যেকোনো নিয়ত করে এ মসজিদে দান করলে মনের ইচ্ছে পূরণ হয়। এ মসজিদের দানবাক্সে দানের পরিমাণ বাড়ছে বিস্ময়করভাবে। মসজিদের বড় বড় আটটি লোহার সিন্দুকে নগদ টাকা, স্বর্ণসহ মূল্যবান জিনিস জমা পড়ে।

সবশেষ শনিবার (১৯ জুন ২০২১) পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে পাওয়া গেছে নগদ ২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৯ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র।

দিনভর গণনা শেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন কিশোরগঞ্জের এনডিসি সৌরভ হাসান। গণনার সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা ইয়াসমিনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত মসজিদটি ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থাপনা হিসেবে পরিচিত। চমৎকার এর ইমারত আর নির্মাণশৈলী মন কাড়ে যে কারও। দৃষ্টিনন্দন এ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি শুধুমাত্র মুসলমানদের কাছেই নয়, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কাছেও পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত।

দেশের মানুষের কাছে অবাক বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে ধর্মীয় এ প্রতিষ্ঠানটির দানবাক্সে দানের টাকার পরিমাণ নিয়ে। মসজিদের বড় বড় লোহার সিন্দুকগুলো খোলা হয় তিন থেকে চার মাস পর পর। তাতে পাওয়া যায় কাড়ি কাড়ি টাকা, বিদেশি মুদ্রা আর স্বর্ণালঙ্কার। দেশ-বিদেশের অসংখ্য মানুষ এ মসজিদের মানত করতে আসেন। দান করেন নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার ছাড়াও, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র।

কিভাবে যাবেন ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদঃ
মসজিদটি কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া নামক এলাকায় অবস্থিত। শহরের যেকোনো স্থান থেকে রিক্সাযোগে মসজিদে যাওয়া যায়।

কিশোরগঞ্জ জেলার হোটেলঃ
মসজিদের আশেপাশে রাতে অবস্থানের জন্য আবাসিক কোন হোটেল ব্যবস্থা নাই।

তবে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের বড় বাজারে হোটেল ক্যাসেল সালাম (চাইনিজ ও আবাসিক), আওয়ামীলীগ অফিসের বিপরীতে হোটেল রিভার ভিউ (আবাসিক), রংমহল সিনেমা হলের বিপরীতে হোটেল হোটেল গাংচিল এ থাকা ও খাওয়ার সু-ব্যবস্থা রয়েছে। আরও রয়েছে হোটেল শ্রাবণী, হোটেল নরসুন্দা, হোটেল আল মোবারক, উজানভাটি সহ বেশ কিছু হোটেল।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।