মার্গে অনন্য সম্মান খুশী সরকার (সর্বোত্তম)

অনন্য সৃষ্ট সাহিত্য পরিবার

সাপ্তাহিক কবিতা প্রতিযোগিতা পর্ব – ১২৪
বিষয় – হোলি / দোলযাত্রা / বাসন্তিকা

দোলের মাহাত্ম্য

বৈষ্ণবীয় ধর্মে বড় উৎসব ওই দোলযাত্রা,
হিন্দু সভ্যতার প্রাচীনতম জনপ্রিয় উৎসব।
প্রাচীন বেদ আর পুরাণ ইতিহাসের বিশ্লেষণে,
শোনা যায় ওই বৃন্দাবনের রঙ খেলার কলরব।

দোলের কত না কাহিনী উপাখ্যানের ঘটা,
মহা ধুমধামে আড়ম্বরে আজ‌ও হয় তা পালন।
যুগে যুগে হয়েছে তার পরিবর্তন,
তবুও তার মাহাত্ম্যের হয়নি কোনো স্খালন।

সত্যযুগে বৃন্দাবনের দোলে মিশে ওই বৈষ্ণবতা,
রাধাকৃষ্ণ আর গোপীরা করেছিল আবির খেলা।
তারি অনুষঙ্গে ফাল্গুনের ওই পূর্ণিমাতে,
নর-নারী রঙ-সাগরে ভাসায় প্রেমের ভেলা।

রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহকে দোলায় ভক্তগণে,
আবির আর গুলালে ভক্তিভরে সব করায় স্নান।
প্রাণের দেবে ঢোল আর বাদ্যসহ কীর্তন গানে,
শোভাযাত্রায় পরস্পরে গুলাল আবির মাখান।

কনকনে ওই শীতের ঠাণ্ডার প্রকোপ বিদায় শেষে,
আনন্দে ওই সবাই করে বসন্তের আহ্বান।
বিচিত্র ওই রঙের খেলায় উল্লাসে সব মেতে,
নর-নারী একইসঙ্গে গায় মন-মিলনের গান।

জাতি-ধর্ম উঁচু-নিচু রঙে নেই ইকোনো ভেদাভেদ,
সকলকে দোল বেঁধে দেয় এক মিলন ঐক্যের তানে।
যুগে যুগে হেথা হোথায় বহুরূপের দোলে
আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার ওই মিলন প্রাণের টানে।

ইতিহাসের পাতায় দোল আর হোলি ভিন্ন হলেও,
সেই ভিন্নতা আজ গেছে যে মিলন স্রোতে ভেসে।
হোলি উৎসব ‘হোলিকা’ওই অশুভ বিনাশে
শুভ শক্তির আরাধনার ভক্তি এসে মেশে।

বিশ্ব ইতিহাসের পাতায় আছে রোমান উৎসব,
দোল পরিচিত সেথায় ‘রূপেরকালিয়া’ নামে।
গ্রীক দেশে সেই দোলেরই নাম ‘ব্যাকানালিয়া’
দোলের কীর্তন কোথাও আবার দেবতার‌ই ধামে।

তৃতীয় আর চতুর্থ শতকে উল্লেখ কামসূত্রে,
ষোড়শ শতাব্দীতে উল্লেখ পাই রঘুনন্দনে।
সপ্তম শতকের নজির শ্রীকৃষ্ণের রত্নাবলী,
মালতীমাধবে পাই অষ্টম শতকের ক্ষণে।

দোলযাত্রার ওই ঘটা হর্ষবর্ধনের‌ও কালে,
বিচিত্র চিত্র ভাস্কর্যে আজও তা বিদ্যমান।
কলকাতার ধনাঢ্য পরিবারে স্বকীয়তায়,
নিয়মনিষ্ঠা আচার-অনুষ্ঠানে আজও অম্লান।

ফাগুনের ওই পূর্ণিমাতে় নবদ্বীপ ধামে,
মহাপ্রভুর জন্মে দোলের নাম গৌরপূর্ণিমা।
ব্রাহ্মণ্য ধর্মের আধিপত্যের খর্বতা দানে
দোল কীর্তনে মহাপ্রভুর ওই মানবমহিমা।

শান্তিনিকেতনে কবিগুরুর দোল নিজ হাতে,
শত বছর আগে করেন ‘বসন্তোৎসব’ পালন।
সমাজ-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারায় শ্রীময় রূপে
নৃত্যনাট্য গীতে মন মুক্তির বসন্ত-বন্দনা উদযাপন।

পলাশ শিমুল কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভার লাবণ্যে
প্রাচীন সুসংস্কৃত ঐতিহ্যে দোল পায় ভিন্নমাত্রা,
প্রাণের উৎসব প্রেমের উৎসবে মুক্তির আনন্দে
রঙে রঙে রঙিন হিল্লোলে পবিত্র দোলযাত্রা।

বসন্তে সৃষ্টির উল্লাসে মাতে বনবীথি,
কচিপাতা জেগে ওঠে আনন্দে মেতে।
যৌবনের রঙ লাগে বিশ্বের প্রাণে প্রাণে,
অলি ভ্রমর তিরতির করে ওড়ে মধু খেতে।

পুণ্য দোলের মাহাত্ম্য নেই আজ আর আগের মতো,
মানসিক ওই দূষণে তার কালিমা যে গায়ে।
সুগন্ধি আবির যে আজ কেমিক্যালের রঙে,
কূটকৌশলী রঙ খেলে আজ বাজে অভিপ্রায়ে।

তবুও দোল যৌবনের‌‌ই বার্তা নিয়ে আসে,
রঙের ছোঁয়ায় নবপ্রেমের পুলক জাগে দোলে।
জাতপাতহীন রঙ খেলা যেন মন- মিলনের গানে,
আপনার সব দুঃখ ব্যথা সবাই যেন ভোলে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।