সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে কুণাল রায় (পর্ব – ২৭)

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা :

একাদশ অধ্যায় : বিশ্বরূপ দর্শন যোগ : তৃতীয় পর্ব : 

ভগবান অর্জুনকে যুদ্ধ করবার জন্য অনুপ্রাণিত করলেন। যুদ্ধে শত্রুদের নিহত করে অশেষ যশ ও ঐশ্বর্যের অধিকারী হবেন। ভগবানের দ্বারা সকলে পূর্বেই নিহত হয়েছেন। তাই অর্জুন ‘নিমিত্ত মাত্র’। ভগবান তাঁকে আস্বস্ত করলেন যে যুদ্ধে তিনি অবশ্যই শত্রুদের জয় করবেন।
সঞ্জয় হস্তিনাপুর নরেশকে বললেন যে অর্জুন ভগবানের এই কথা শ্রবণ করে ভয় কম্পিত হলেন এবং বললেন যে তাঁর মহিমা কীর্তনে সকলে সমবেত হয়েছেন। রাক্ষস ও অসাধু লোকেরা ছন্নছাড়া। সাধুগণ তাঁর দিব্য ভজনায় মগ্ন। অর্জুন বললেন যে ভগবান ব্রহ্মার অপেক্ষায় শ্রেষ্ঠ। তিনি আদি সৃষ্টিকর্তা। তিনিই ব্রহ্ম। তিনিই এই পঞ্চতত্ত্বের অধিস্বর। তাই অর্জুন তাঁকে বারংবার নমস্কার করলেন।
ভগবান অসীম বিক্রমশালী। তিনি এই ব্রহ্মান্ডে ব্যাপ্ত। তিনি সর্ব স্বরূপ। অর্জুন ভগবানের প্রকৃত পরিচয় না পেয়ে তাঁকে না না বিশেষণে ভূষিত করেছেন। সেই সকল কিছুর জন্য তিনি তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলেন।
অর্জুন ভগবানকে ত্রিলোকেশ্বর রূপে অভিহিত করলেন। তিনিই শ্রেষ্ঠ। তাঁর অপেক্ষায় শ্রেষ্ঠ আর কেউ নেই। ভগবানের বিশ্বরূপ দর্শন করে অর্জুন কৃতার্থ আজ। কিন্ত ভীতও বটে। তাই তিনি ভগবানকে তাঁর প্রতি কৃপা করতে অনুরোধ করলেন। পুনরায় তাঁর সাম্য রূপে দর্শন দিতে বললেন।
ভগবান বললেন যে তিনি অর্জুনের প্রতি প্রসন্ন হয়ে তাঁকে তাঁর বিশ্বরূপ দর্শন করিয়েছেন। এই রূপ পূর্বে কেউ দর্শন করেননি। তিনি আরো বললেন যে অধ্যায়ন, তপস্যা, জ্ঞান, পুণ্যকর্ম, দান, ধ্যান দ্বারা এই মৃত্যুলোকে তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তাঁর এই তেজময় রূপ দর্শন করেননি। তিনি অর্জুনকে শান্ত হতে উপদেশ দিলেন। এবং তাঁর সেই সদা প্রসন্ন চতুর্ভূজ রূপে দর্শন দিলেন।
অন্যদিকে সঞ্জয় হস্তিনাপুর নরেশকে বললেন যে ভগবান অর্জুনকে প্রথমে চতুর্ভূজ রূপে ও পরে দ্বিভূজ রূপে দর্শন দিলেন। অর্জুন অতীব প্রসন্ন ও নিশ্চিন্ত হলেন।
এই রূপ অতীব দুর্লভ। দেবতারাও এই রূপ দর্শন করতে পারেন না। ভগবান বললেন অর্জুন তাঁর দিব্যদৃষ্টির দ্বারা এই বিশ্বরূপ দর্শন করেছেন। সকল প্রকার বেদ, জ্ঞান, তপস্যা , পূজা, দান ধ্যানের দ্বারাও এই রূপ দর্শন করা সম্ভব নয়। কেবল অনাবিল ভক্তির দ্বারা তাঁকে প্রাপ্ত করা যায়।
তাই যে ব্যক্তি তাঁর নিরন্তর সেবা করেন, তাঁর প্রতি নিষ্ঠাপরায়ণ, সকল ভোগবিলাসের থেকে বিরত এবং সকল জীবের প্রতি এক সমভাব পোষণ করেন, কেবলমাত্র তিনি তাঁকে প্রাপ্ত করে থাকেন।

সমাপ্ত।