পাক্ষিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ১৬
বিষয় – অভিনয়
তারিখ – ১৬/১০/২০২০
রঙ্গমঞ্চ
জীবন বহমান। যেন এক নিস্তব্ধ নদীর মত বয়ে চলেছে। মাঝে মাঝে কুলু কুলু শব্দে জানিয়ে দিচ্ছে তাঁর নিবিড় অস্তিত্বের কথা। কত পথ বেয়ে, পাহাড় পর্বত অতিক্রম করে আপন গন্তব্যের দিকে ছুটে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই : মহাসমুদ্রে নিজেকে সম্পর্পন করা! ঈশ্বরের অমূল্য দান যাকে আমরা জীবন বা প্রাণ বলি, এক নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে! প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছে, তবুও তার যাত্রা অব্যাহত।
এই পৃথিবী এক রঙ্গমঞ্চ। কোন একদিন পড়েছিলাম উইলিয়ামের লেখাতে যে আমরা নাকি শুধুমাত্র অভিনেতা ও অভিনেত্রী এই ধরাধামে। আপন কার্য সম্পন্ন করবার উদ্দেশ্যে ঈশ্বর আমাদের পাঠিয়েছেন। অভিনয় সমাপ্ত হলেই ফিরে যাব আবার সেই শিকড়ের টানে, সেই পূর্বধামে!কিন্তু সত্যি কি তাই! দর্শন বলবে হ্যাঁ! কিন্তু এই অভিনয় করতে করতে কত শত প্রাণ বিসর্জিত হয়েছে। কত নিষ্পাপ কুসুমকে অকালে ঝরে যেতে হয়েছে! আর সেই অভিনয়ের সব থেকে উৎকৃষ্ট উপাদান হচ্ছে “প্রেম” বা “ভালোবাসা”। ছলনার আশ্রয় নিয়ে এই সুন্দর অনুভূতিকে কতবার পদদলিত হতে হয়েছে, তা কেবল পরমেশ্বরের জ্ঞাত! হৃদয় বিদীর্ণ হয়েছে। আঁখি ভরে উঠেছে জলে। কিন্তু নিষ্কৃতি এক অচিন শব্দ তখন! আস্থা তখন পূর্বাচলে এক অস্তগামী রবির ন্যায় বর্তমান! অন্যদিকে নিছক সরলতার সুযোগ নিয়ে দিনের পর দিনের বন্ধুত্বের অভিনয় করে যাই আমরা। বন্ধনের নামে লেপন করি এক কালিমা! আপন স্বার্থ সিদ্ধির অভিপ্রায় অমানবিকতা গ্রাস করে এই চিত্তকে! রঙ্গমঞ্চে অভিনয়ের কি চরম মূল্য পরিশোধ করতে হয়, তা কেবল এই হৃদয় জানে!
ক্যামেরা, আলো ও শব্দের মাঝের অভিনয় নয়। আজ বাস্তব চিত্র। কিন্তু বিখ্যাত নাট্যকার বার্নার্ড শ বলেছেন যে অভিনয় করা এবং তা দীর্ঘ মেয়াদি করে তোলা, এক অত্যন্ত কঠিন বিষয়! এবং যেদিন সেই মুখোশের আড়ালে থাকা ভয়ংকর মুখটা সকলের সামনে প্রকাশ পায়, অনুতাপ ছাড়া আর বোধকরি কোন কিছু অবশিষ্ট থাকে না। সম্পর্কে ভাঙন, কাছের মানুষের দূরে সরে যাওয়া, নিস্তব্ধে নিজেকে আড়ালে এক আশ্রয় প্রদান করা এবং বুকভরা হাহাকার এবং কান্না যেন এক চিরন্তন আভায় নিজেকে রাঙিয়ে তোলে! এক তীব্র যন্ত্রনা, এক ব্যাখ্যাহীন অভিমান হয়ে ওঠে চিরসঙ্গী! কালচক্রের অভিলাষ এ হয়ত আপন ছন্দ ফিরে আসে, কিন্তু তাতে মহাপ্রাণের কম্পন সঞ্চারিত হয় কি! আজও এই প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তর মেলেনি, আগামীদিনেও মিলবে কিনা, আমরা কেউ জানিনা!!