• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় – একত্রিশ

টুকরো হাসি – একত্রিশ

বৃদ্ধা মহিলা লিখেছে

‘সুলতা তুমি এত ভেঙে পড়ছ কেন? তোমার তো আরও গয়না আছে। ওই একটা গয়নার জন্য তুমি এত মন খারাপ করছ?’ নিখিলেশ কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। কিছুতেই সুলতার মন ভালো করা যাচ্ছে না।
সুলতা কোনো কথা বলছে না। তার মুখে যেন আষাঢ়ের মেঘ। দু’চোখের দিকে তাকালে মনে হচ্ছে যেন এত জল পড়বে যে তাতে মাত্র একবছর আগে তৈরি করা সেতুও ভেঙে যাবে।
সকালে খবরের কাগজ বাড়িতে চার পাঁচটা আসে। সবগুলোই ভালো করে মন দিয়ে পড়েন নিখিলেশ। অবসর নেওয়ার দশবছরপর থেকে শরীর সামান্য ঝিমিয়ে পড়তে চায়। ওই খবরের কাগজগুলি পড়লে মনটা তাড়াতাড়ি চনমনে হয়ে যায়।
একই খবর কার নির্দেশে কি জন্য নানা ভাবে পরিবেশন করা হয় এক একটা কাগজে, তা মোটামুটি বুঝলেও নিখিলেশের সেসব নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। সে যে যা খুশি করুক এতে তাঁর কিছু করার নেই।
সবকটা খবরের কাগজ পড়লে একটা অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া হয়। পরস্পরবিরোধী লেখা পড়তে পড়তে শরীরের ভেতর রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায় ফলে ইদানীং তেমন করে ওষুধ খাওয়ার দরকার হয় না।.খবরগুলি মনের ভিতরে গিয়ে নিজেরাই যেমন ঘুসোঘুসি শুরু করে তাতে শরীর তাজা হয়ে যায়।
সুলতাও সবকটা খবরের কাগজ পড়ে। আজকে কি হল! একটামাত্র খবরের কাগজ পড়তে গিয়ে কেমন থম মেরে গেল। কিছুতেই সে কথা বলছে না। বেশি কথা বলতেও সাহস পাচ্ছেন না নিখিলেশ। সামান্য যা বলছেন তা শুনে চুপ করে আছে সুলতা। বেশি বলতে গেলে একবার যদি সুলতার মুখ থেকে শব্দের বাণ ছুটতে থাকে তবে নিখিলেশ সামলাতে পারবে না। সুলতার যত বয়স বাড়ছে ততই যেন এটা বৃদ্ধি পেয়েছে। একবার কথা বলতে শুরু করলে আর থামতে চায় না।
সুলতা বলল,‘মুম্বাইতে গয়না পরে পার্টি থেকে অনেক রাত বাড়ি ফিরেছি কই সেখানে তো কোনদিন কিছু হয়নি।’
‘সেখানে হয়নি বলে এখানে যে হবে না তার তো কোনো মানে নেই। এটা মুম্বাই নয় এটা কলকাতা।’
‘কলকাতা তো কি হয়েছে? এটা কি ভারতের মধ্যে নয়?
‘এখন এই নিয়ে এত কথা বলে মন খারাপ কর না। আমি তোমাকে আবার হার তৈরি করে দেব।’
‘সে তুমি চাইলেই পার। তোমার সে ক্ষমতা আছে। তুমি তো জান যে ওটা ছিল তোমার মার। তার বউমাকে মুখ দেখে দিয়েছিল। ওটার অন্য মূল্য আছে সেটা তুমি কি বোঝ?’
সুলতার এমন শাশুড়ি ভক্তি দেখে অবাক হয়ে গেলেন নিখিলেশ। তাঁর ভালোই লাগল। মা যদি এখন বেঁচে থাকত তবে দেখত তার সংসার থেকে জেদ করে আলাদা হওয়া বউমা এখন কত সমঝদার হয়েছে।
নিখিলেশ বললেন,‘আমরা তো থানায় জানিয়েছি। দেখ নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা হবে।’
‘ওখানে তো তোমার কথা শুনতেই চাইছিল না। শেষে বিকাশবাবু ফোন করে ওনার ছেলেকে দিয়ে লালবাজার থেকে সোর্স খাটাতে তবে আমাদের বসতে বলল। আমার মনে হয় না ওতে কিছু লাভ হবে।’
ডাক্তারবাবু বলেছিলেন করোনার মধ্যে বাড়িতে একদম বসে না থেকে একটু হালকা ব্যায়াম করতে। ঘরের ভিতরে হাঁটতে। সুলতা প্রথমদিন হাঁটতে গিয়ে বেলজিয়াম গ্লাসের ফুলদানিটা ভেঙে ফেলার পর বলেছিল, ‘খুব ভোরে সামনের পার্কে গিয়েই দুজনে হাঁটব।’
নিখিলেশের আপত্তি ছিল না, কিন্তু সুলতা যে চার ভরির মায়ের দেওয়া হার পড়ে বেরুবে তা তিনি বুঝতে পারেননি।
সুলতা মনে করে তার বয়স কখনো বাড়ে না। পুরনো ছবি দিয়ে ফেসবুক খুলেছে। এক একটা ছবি পোস্ট করে আর চারিদিক থেকে কি সুন্দর, অপূর্ব এসব লেখা দেখে আনন্দ পায়। ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়ার পরে নিখিলেশ বলেছিলেন, ‘তোমার যে ছবিটা ভ্যাকসিন নেওয়ার সময় তুলেছি সেটা ফেসবুকে পোস্ট করলে না?’
‘না।এখন করব না। যখন আঠারোবছর থেকে দেওয়ার কথা বলবে তখন ফেসবুকে দেব।’
নিখিলেশ কোনো কথা বলেননি। মনে মনে ওম্‌ শান্তি বলে চুপ করে গিয়েছিলেন।
সেদিন পার্কে তখনও ঢুকতে পারেননি তার আগেই দুটো মোটর সাইকেল এসে ঝটকা মেরে চলে যাওয়ার সময় সুলতার গলা থেকে হারটা ছিনতাই করে নিল। মুখে মাস্ক নিয়ে সুলতা কি বলছিলেন তা বুঝতে সময় লেগেছিল নিখিলেশের।
সুলেখা বলল, ‘ওদের অন্য কোন কাজ নেই? লজ্জা করে না ছিনতাই করতে?’
এখানে কাজ নেই বলেই তো আমাদের একটি মাত্র ছেলে ভালো চাকরি পেয়ে আমাদের ছেড়ে গুজরাট চলে গেল।’
‘তাই বলে আমার গলার হার ছিনতাই করবে! এটা কাজ?’
নিখিলেশ বললেন, ‘এগুলো হচ্ছে ক্ষুদ্র শিল্প।’
‘ওরা মোটর সাইকেল পেল কি করে? সুলতা বলল।
‘এখন প্রায় সকলেরই দেখবে মোটর সাইকেল আছে। খবরের কাগজে দেখনি গরীব মা মোটর সাইকেল কেনার টাকা দেয়নি বলে মাকে খুন করেছে ছেলে।’
সুলতা বললেন,‘ছেলেদুটোকে ধরতে পারলেও ওরা যে ছিনতাই করেছে এর বিচার করতে করতে তো পঞ্চাশ বছর পার হয়ে যাবে। ওই হার আমি আর পাব না।’
নিখিলেশ বললেন,‘তুমি একদম মন খারাপ করবে না। আমি তোমাকে ঐরকম হার আরও চারটি বানিয়ে দেব।’
সুলেখা বললেন, ‘সে আমি জানি তুমি দেবে। আমি তার জন্য মন খারাপ করছি না। আমার খারাপ লাগছে…’
নিখিলেশ সুলতাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ওসব নিয়ে তোমার আমার ভেবে দরকার নেই। ক্ষুদ্রশিল্প, মাঝারিশিল্প ও বড়োশিল্প এসব নিয়ে ভাববার অনেক মহান মানুষেরা আছে। তুমি প্লিজ মন খারাপ করে থেকো না।’
‘ধুত্তরি। আমি বললাম তো ওইসব শিল্প নিয়ে আমি ভাবছি না।’
‘তাহলে? নিখিলেশ বললেন।
‘দেখ না কাগজে আমার হার ছিনতাইয়ের ঘটনাটা কি রকম বাজে ভাবে লিখেছে।’
‘বাজে ভাবে মানে! কি লিখেছে?
সুলেখা বললেন, ‘ছিনতাইয়ের ঘটনাটা লিখে তারপরে আমার বিষয়ে একজন বৃদ্ধা মহিলা লিখেছে।’
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।