সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় – ছাব্বিশ

টুকরো হাসি – ছাব্বিশ

রবীন্দ্রনাথ

গৃহশিক্ষক বাড়ির ছেলেটিকে কেমন পড়াচ্ছেন তা পরীক্ষা করতে এলেন অভিভাবক।
গৃহ শিক্ষক ছাত্রর প্রশংসা করলেন।
অভিভাবক ছাত্র মধুসূদনকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘যা জিজ্ঞাসা করব উত্তর দিতে পারবে?’
মধুসূদন বলল, ‘মাস্টারমশাই যা বলে দিয়েছেন তা সব মনে আছে।’
অভিভাবক বললেন, ‘আচ্ছা উদ্ভিদ কাকে বলে বল্‌ দেখি।
ছাত্র মধুসূদন বলল, ‘যা মাটি ফুঁড়ে ওঠে।’
‘একটা উদাহরণ দে।’
ছাত্রের সঙ্গে সঙ্গে উত্তর, ‘কেঁচো।’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হাস্যকৌতুক’ বইয়ের প্রথমেই ‘ছাত্রের পরীক্ষা’-র এই অংশটি পাঠ করে বইটি শেষ না করে থাকা যায় না। ‘পেটে ও পিঠে’,‘রোগের চিকিৎসা’,‘রোগীর বন্ধু’,‘খ্যাতির বিড়ম্বনা’ বইটির এমন আরও কয়েকটি লেখা যা পাঠ করলে একেবারে মজে যেতে হয়।
তাই তো তিনিই বলতে পারেন এত বড়ো হবেন না কখনো যাতে হাসি তামাশাকে ছ্যাবলামি বলতে হয়।
তাঁর বিভিন্ন লেখায় ও নানা কর্মে তিনি রেখেছেন এমন আশ্রয়স্থল যেখানে পৌঁছলে নিজেকে নিশ্চিন্ত মনে হয়, তিনি যখন কৌ্তুক করেন ভাবতে হয় এও কি সম্ভব!
আসলে যিনি পারেন তিনি সব পারেন। একটা জীবনে কত শোক পেয়েছেন তিনি। কখনো ভেঙে পড়েননি। তাই তিনি যেন রয়েছেন বটবৃক্ষের মতো। তাঁর যাবতীয় সৃষ্টির মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে করতে প্রতিনিয়ত মনে হয় পাশে আছেন কেউ। আমি একেবারে একা নই। মনে হয় তিনি আড়াল করে আছেন। কোনো ঝড় উড়িয়ে নিতে পারবে না। তিনি সাহস যোগাবেন।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর চলার পথে খুঁজে নিয়েছেন হাসির অজস্র উপকরণ। তাই হয়তো খুব কঠিন সময়েও তিনি অনায়াসে নিজেকে স্থির রাখতে পেরেছেন। তাঁর রসিকতায় তখন ধরা পড়েনি এমন কাছের মানুষ খুব কমই ছিল। তাতে অনেকে বিভিন্ন সময়ে অপ্রস্তুত হয়েছেন। মজাও পেয়েছেন।
রবীন্দ্রনাথ নিজেকে নিয়েও কম রসিকতা করেননি।
একবার সাহিত্যিক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় (বনফুল) ভাগলপুর থেকে এসেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করতে।
তিনি দেখলেন কবি টেবিলে ঝুঁকে কিছু লিখছেন।
বনফুলকে দেখে কবি বসতে বলে জানালেন লেখাটা এখুনি শেষ হবে।
কবিকে ঝুঁকে লিখতে দেখে বনফুল জানালেন অনেক নতুন রকমের চেয়ার আছে। সেই চেয়ারে ঠেস দিয়ে বসে লিখলে কবির লখতে কষ্ট হত না।
কবি হাসলেন। জানালেন ওইরকম চেয়ার তাঁর আছে। সঙ্গে এটাও জানালেন, কুঁজোর জল তলানিতে গেলে যেমন সেটাকে উপুড় করতে হয় তেমন বয়স হওয়ার জন্য তিনি ঝুঁকে না বসলে লেখা বেরোয় না।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।