• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় – চৌত্রিশ

টুকরো হাসি – চৌত্রিশ

ভুল করে এখন কেঁদো না

টিভিতে খবরটা দেখার পর থেকে সুলেখা কিছুতেই কান্না থামাতে পারছে না। মেয়ে শ্রাবন্তী পাশের ঘরে। স্থির পাথরের মতো বসে আছে।
এরকম যে হবে সুলেখা ভাবতে পারেনি। এতদিন যা হয়েছে তাই নিয়ে সমস্ত দায় বিনয়ের উপর চাপানো হত। রাগ হত বাবার উপরে। বাবা একজন নামকরা উকিল হয়েও কি দেখে যে বিনয়ের সঙ্গে তার বিয়ে দিল কে জানে। এই নিয়ে বাবাকে যখন সুলেখা বলেছিল বাবা তখন শুধু একটাই কথা বলেছিল,‘ছেলেটা ভালো। সৎ। আমার উকিলের চোখ আমি ভুল করতে পারি না। দেখবি তুই সুখী হবি।’
সুখ না কচুপোড়া। বাবা বেঁচে থাকলে দেখত একটা অপদার্থ লোকের সঙ্গে তার বিয়ে দিয়েছে। সরকারি অফিসে থেকেও উপলবাবু কত উপায়ে টাকা উপার্জন করেছে। আর বিনয় মাইনের টাকা ছাড়া কিছুই বুঝল না।
বিনয়ের সঙ্গে ওই একই অফিসে চাকরি করে উপলবাবু পেল্লায় বাড়ি করেছে। গাড়ি আছে। বাড়িতে যেমন দামি আসবাবপত্র তেমন ওনার বউ সুমিতার গয়না। দেখে তাক লেগে গিয়েছিল সুলেখার। চিন চিন করে একটা কষ্টও হয়েছিল।
সরকারি অফিসে চাকরি করে বিনয় বিভিন্ন কোম্পানির কোটি কোটি টাকার বিল ঠিক আছে কী না দেখে  পেমেন্টের জন্য সই করে দিয়েছে। আর উপলবাবু সেই পেমেন্টের আগাম খবর কোম্পানিকে দিয় প্রচুর টাকার কমিশন নিয়েছে। সবাই যে এটা ভালো চোখে দেখত তা নয়, তবু সুলেখা মনে করে টাকাটাই জীবনে সব।
অফিস কলিগদের কারও বাড়ির অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখেছে সবাই উপলবাবুকে ঘিরে হে হে করছে।
বিনয়ের কাছে আসছে মাত্র দু’চারজন। দেখে খুব খারাপ লাগত সুলেখার। এরকম সৎ মানুষ হয়ে লাভ কি? সমাজে কেউ যাকে পাত্তা দেয় না।
সুলেখাও বিনয়কে তেমন পাত্তা দিত না। বলত, ‘দেখবে আমি মেয়ের বিয়ের সময় আমার বাবার মতো ভুল করব না। যোগ্য পাত্র দেখে শ্রাবন্তীর আমি বিয়ে দেব।’
ছোট বোনের ননদের বিয়েতেই আলাপ হয়েছিল সায়নের সঙ্গে। ঝকঝকে একটি ছেলে। কথায় যেন খই ফুটছে।
সুলেখার সঙ্গে আলাপ হয়ে সায়নও খুব খুশি।
সুলেখা ঠিকানা দিয়ে বলেছিল, ‘আমাদের বাড়িতে এসো।’
সায়ন অল্প বয়সেই আইএএস  অফিসার। যখন আসে তখন ওর নীলবাতিওয়ালা গাড়িটা দেখবার জন্য সবকটা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকে সবাই। দেখে সুলেখার খুব গর্ব হয়।
বিনয় কিছু বলে না। আজকাল চুপ মেরে গেছে। সুলেখার বাবার টাকা দুই বোনের মধ্যে ভাগ হয়েছে। অনেক টাকা পেয়েছে সুলেখা। তারপর থেকে বিনয় এলেবেলে হয়ে গেছে।
সায়ন একজন বড়ো অফিসার ছাড়াও অনেক কাজের সঙ্গে যুক্ত। সে অনেক ছবি দেখিয়েছে। সবই নেতা মন্ত্রীদের সঙ্গে। বিভিন্ন সমাজসেবার অনুষ্ঠানের ছবি। যখন আরও ছবি দেখাতে চায় নিজের বিষয়ে অনেক কথা বলতে থাকে সুলেখা বলে, ‘তোমায় অত বলতে হবে না বাবা। আমি মানুষ চিনি। তোমায় দেখেই আমি বুঝতে পেরেছি।’
সায়ন তার ব্যবসার জন্য চিন্তিত ছিল। দু’লাখ টাকার দরকার। সুলেখা বলল, ‘তোমার অমন শুকনো মুখ দেখতে ভালো লাগে না বাবা। আমি যদি তোমাকে টাকাটা এখন দিই নেবে?’
সায়ন নিতেই চাইছিল না। অনেক কষ্টে সায়নকে রাজি করিয়েছিল সুলেখা।
একমাস পরে জোর করে আড়াইলাখ টাকা ফেরত দিয়েছিল সায়ন। বলেছিল, ‘আপনার জন্যই আমার অনেক লাভ হয়েছে আন্টি।’
রিয়াকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিল সায়ন।
বিনয়কে এসব জানায়নি সুলেখা।
আবার পাঁচলাখ টাকার দরকার হল সায়নের। সুলেখা দিল । এমন ছেলেকে দেওয়া যায়। সায়ন চারমাস বাদে পাঁচলাখ টাকা ফেরত দিল। সঙ্গে রিয়ার জন্য নিয়ে এল দামি গিফট। প্রায় লাখখানেক টাকার মতো দাম হবে।
রিয়াকে নিয়ে আবার বেড়াতে গেল সায়ন।
এবার অনেক টাকার দরকার হয়েছিল সায়নের। প্রায় তিরিশ লাখ টাকার মতো। টাকার চিন্তায় কিছুদিন আসছিল না। সুলেখা বারবার ফোন করে ডেকে নিল সায়নকে।
বলল,  ‘আমি থাকতে তুমি অত চিন্তা করছ কেন?’
টাকা আর গয়না মিলিয়ে তিরিশ লাখ টাকার বেশিই দিল সুলেখা। ব্যবসা নিয়ে সায়ন খুব চিন্তিত তাই এবার রিয়াকে নিয়ে বেড়াতে গেল না।
সায়নকে অনেকদিন ধরেই ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। ও আসছে না।
সেই সায়নকে দেখা গেল টিভিতে নানা প্রতারণার জাল বিছিয়ে কোটি কোটি টাকা তুলে ধরা পড়েছে নীলবাতির গাড়ি সমেত। ও জাল আইএ এস। সবটাই ভুয়ো।
অঝোরে কেঁদে চলেছে সুলেখা। বিনয়ের মুখে কোনো ভাষা নেই। আসলে সুলেখার সঙ্গে কথা বলতে গেলে কোনো পরামর্শ দিতে গেলে আজকাল ফুৎকারে উড়িয়ে দেয় সুলেখা। সে ভাবল কথা বলে লাভ নেই।
সুলেখা বলল, ‘কি অবে গো?’
বিনয় বলল, ‘শুনলে না নেতার কথা। আইন আইনের পথেই চলবে।’
ছেলে পাপানটু তার ল্যাপটপ খুলে বসেছিল। তার মনে পড়ল অনেকদিন আগে যখন স্কুলের পরীক্ষায় দু’টো অঙ্ক ভুল করে বাড়িতে এসে কাঁদছিল তখন মাকে পাশে পায়নি। তখন কারও সঙ্গে ফোনে টিভির রান্না নিয়ে লাগাতার কথা বলে যাচ্ছিল। তাকে কাঁদতে দেখে বিরক্ত হয়ে মা তখন বলেছিল,পাপানটু তোমার আগে বোঝা উচিত ছিল। ভুল করে এখন কেঁদো না।
সুলেখাকে কাঁদতে দেখে পাপানটু বলল, ‘প্লিজ মা একটু চুপ করবে? একটা কাজ করছি। সব ভুল হয়ে যাবে।’
সুলেখা বলল, ‘পাপানটুরে আমি ভাবতেই পারিনি যে ওই সায়ন এত বড়ো প্রতারক। বুঝলে কি আর এত বড়ো ভুল করতাম?’ এই বলে সুলেখা আবার কাঁদতে শুরু করল।
পাপানটু বলল, ‘মা যা হয়েছে বেশ হয়েছে। আমি শুনে কি করব? বাবার কথা তো কানেও তুলছ না আজকাল। এখন মজাটা বুঝলে তো। ভুল করে এখন কেঁদো না।’
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।