ঢুলে থাকা দু’চোখের ঢাকনা খুলে দেখল। রুমার ফোন। ঝটাক্সে উঠে বসল, ‘তুমি লকডাউনে কোথায় ছিলে? রোজই তোমায় ফোন করি। সবসময় ফোন বন্ধ। করোনার ভয়ে ফোন ধর না? কোনো নেতা মন্ত্রী ডাক্তার করোনা কমিটির প্রধান কেউ তো বলেনি যে ফোন করলেও করোনা অ্যাটাক করবে। তবে কেন ফোন বন্ধ রেখে দুঃখ দিচ্ছ। ভাল্লাগে না। কত চিঠি লিখেছি। একটারও জবাব দাওনি। এখনও তোমাকে দেবার জন্য পাঁচটা চিঠি আমার কাছে আছে। ওগুলি গুগলি বলের মতো তোমকে দেবার জন্য মন আমার ছটর ফটর।’
রুমা রাগলে চুপ করে থাকে। চাউ, মটন রেজালা, আইসক্রিম এসব পেটে ঢুকলেও রাগ কমে না।খায়। বিনোদের দেদার পয়সা খসিয়ে তারপর বাড়ি যায়।
বিনোদ বলল, ‘রুমা লকডাউনে রাগ ভালো না। ভাইরাস মাথায় চড়ে বসে। এই সময়ে মনের আনন্দে থালা বাজাতে হয়। আওয়াজে করোনা বাড়িতে, মাথায় ঢুকতে পারে না।’
এক ধমকে বিনোদকে থামিয়ে রুমা রেগে বলল,‘তোমাকে টিভিতে দেখলাম।’
‘মোটেই না। আমাকে দেখনি। আমি কি নেতা না অভিনেতা? দুষ্টুটা। শুধু দুষ্টুমি করে। সিরিয়ালে অভিনয় করলে হয়ত রুটি বানিয়ে বা কাপড় কেচে দেখাতাম যে আমি এসবও পারি।’
‘না। বোন আমার সঙ্গে একদিন তোমাকে দেখে ফেলেছিল। ওই চিনিয়ে দিয়েছে। সবাই ছিঃ ছিঃ করেছে।’
‘ছিঃ ছিঃ করার কী আছে। কেমন লজ্জা পায়! বাড়ির হবু জামাইকে দেখে কেউ ছিঃ ছিঃ করে?
‘তোমাকে টিভিতে একটা গেছো বাঁদরের মতো লাগছিল।
‘কখন?’
‘লকডাউনে ফালতু বাজারে ঘুরে যখন পুলিশের তাড়ায় ছুটছিলে! তখন। সবাই আরও একদিন দেখেছে।’
‘আবার কবে!’
‘যেদিন মদের দোকান খুলল। বোতলের জন্য লোকের ঘাড়ে যখন হামলে পড়েছিলে তখন। পুলিশ ঘাড়ধাক্কা দিয়েও তোমাকে সরাতে পারছিল না। শুনে রাখ আমাদের সম্পর্ক এখানেই শেষ।’
‘ফোন ছেড়ো না। একটা কথা শোন। যে প্রেমপত্রগুলি তোমাকে দিয়েছি সেগুলি আগে আমাকে ফেরত দাও।’
‘ওসব আমি আগুনে ফেলব।’
‘না ফেলো না প্লিজ। চিঠিগুলি আমার একজন ক্যাবলা কবিবন্ধুর লেখা। যে নেতা মন্ত্রীর পিছনে পুরস্কারের জন্য ঘুরত্ ঘুটাং করত না।’
‘চিঠিগুলি ক্যাবলা কবি বন্ধুকে ফেরত দেবে?’
‘সে বোধহয় নেই। হাঁচি,কাশি নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিল। তারপর থেকে নিখোঁজ।’
‘তবে আর চিঠি নেবে কেন?’
‘যদি তোমার মতো আবার একজন জোটে, তখন ঐ প্রেমপত্রগুলিই তো কাজে লাগবে।’