গদ্যের পোডিয়ামে জয়ীতা দাস

রোজকথা

নাহ্, তার সাথে রোজ দেখা হয়না।
রোজ আমি ঐদিকে যাইও না।
ওই যে ক’দিন গানের ক্লাস থাকে ওই দিনগুলোই….ব্যস।
বাস থেকে নেমেই চোখ চলে যায় তার দিকে।জলে ভেজা কালো দুটো চোখের অপলক দৃষ্টিতে সে চেয়ে থাকে রাস্তার পথিক থেকে দোকানদারের দিকে।
সামনে গেলেই তার কাঁপা কাঁপা হাত এগিয়ে আসে আমার দিকে। বহুবার দেখেছি কেউ পয়সা দিলেও তিনি হাসেন আবার না দিলেও…!
পরনের কাপড়খানি বেশ পরিষ্কার।
একজন বছর ষাটেকের বৃদ্ধা মহিলা।
আপাতদৃষ্টিতে তাকে ভিক্ষারী বলে সম্বোধন করে এ সমাজ। কিন্তু খোঁজ নিলে হয়ত জানতে পারা যায়, তারও একসময় এক সাম্রাজ্য ছিল।কোনো এক প্রস্তরখন্ডে তার ইতিহাস ধুলো চাপা পড়েছে।
অদম্য ভুমিকম্পে প্রসাদ ভেঙে পড়েছে বলেই এমন রূপ নিয়ে তিনি আজ পথকের নিজের গালিচা বানিয়ে নিয়েছেন।
একদিন অনেকখানি সময় ধরে তার কাছে দাঁড়িয়ে থাকলাম, দেখলাম- পথচলতি মানুষজনেরা ওনাকে তেমন টাকাপয়সা দিচ্ছেন না।
কেউ এসে এক প্যাকেট মিষ্টি জাতীয় কিছু দিচ্ছেন আবার কেউ মুঠো মুঠো চকলেট দিচ্ছেন। যারা দিচ্ছে তারা বেশিরভাগই খুদে পঞ্চমী।
তারা আসছে তাদের মায়েদের হাত ধরে। আমি বেশ অবাক হলাম এই দৃশ্য দেখে! মনে মনে ভাবলাম, আজ তো কোনো so called “স্পেশাল ডে” নয়, তবে কিসের এত আড়ম্বর? কিসের এত খুশি ওই খুদে হাতগুলোর?
হঠাৎ পেছন ফিরে ভাবলাম- উৎসব তো মনের হয়; সেখানে রোজ যদি এমন সামান্য উপহারে অশ্রুসিক্ত চোখে খুশির হাসি ফুটে ওঠে, তাহলে সেই সামান্য চকলেটটাও বহুমূল্য হীরেতে পরিণত হয়।
তখন আর আলাদা করে সোশ্যালে “ফাদার্স ডে”…”মাদার্স ডে”, “চকলেট ডে”, “ভালোবাসা দিবস” পালন করতে হবে না। রংবেরঙের ভারচুয়াল ইমোজি দিয়ে ট্যাগাতে হবেনা with 179 others লোক দেখিয়ে।
দেখা যায় প্রতিদিনের আড়ম্বরে সাধারণত ভীড় পড়ে না,তাই নিরিবিলিতে উদযাপনের স্নিগ্ধতা কপাল ছুঁয়ে যায়।
তখন প্রতিদিনই আমরা উৎসব আনন্দে মেতে উঠবো নিজ নিজ পৃথিবীতে…
মেতে উঠবো নিজের চোখে রঙিন চশমাটা সরিয়ে, মেতে উঠবো বৃষ্টির মাথায় ছাতাটা এগিয়ে দিয়ে, মেতে উঠবো বাসের দরজা থেকে ছিটকে পড়তে থাকা বৃদ্ধির হাতটা শক্ত ক’রে ধরে, মেতে উঠবো ভিড় বাসে মায়ের বয়সী মানুষটিকে নিজের জায়গা ছেড়ে দিয়ে, মেতে উঠবো রাস্তা পার হতে না পারা মানুষটির হাত ধরে,
মেতে উঠবো ভুল ভাইরালে আত্মহত্যা করতে যাওয়া মানুষটিকে নতুন জীবন দান করে।
মেতে উঠবো এক মত্ত উন্মাদনায় “প্রকৃত মানুষ” হওয়ার আশা নিয়ে…
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।