• Uncategorized
  • 0

গ এ গদ্যে জয়িতা ভট্টাচার্য

নৌকো ও বিবাদী পক্ষ

বিবাদ করে হয় না কিছু। সুমিতা বোঝে।তবুও সেই সাতসকালে চোখ খুলে থেকে মধ্যেরাত অবধি বিবাদ। প্রাণপণে পালায় বাস্তব থেকে দূরে ওই তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে,সাতসমুদ্দুর তের নদী পেরিয়ে ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমীর দেশে ঠিক ঠাকুমা যেমন বলত। কুঁচকে যাওয়া শুকনো বৃদ্ধ স্তনে হাত রেখে মসৃণ মেঠো গন্ধ।এখনো নাকে আসে।
বেকার নপুংসক স্বামী তার ঘরে বসে বসে গালাগাল করছে।
এইসব তার দৈনকতা।যেমন রোদ ওঠে আর মরে যায় রোজ।যেমন মেট্রোতে আত্মহত্যা।
এই দেশটায় বাড়িটা অনেকেরই ভদ্রলোকের মতো কিন্তু ঘরগুলো জতূগৃহ।
সুমিতা বেরিয়ে যায় রাস্তায়।রাস্তা এখন ঘর।ঘরে আগুন লেগেছে।পারদ উর্দ্ধে। সে যদিও চাকরি করে।
যদিও একা একাই মানুষ করে সংসার আর বাচ্চা তবুও জানলা দিয়ে হাওয়া আসে ,ফড়িং, প্রজাপতিও আসেই।
হঠাৎ করে আলাপ কবি ও নাট্যকার রৌরবের সাথে।সে প্রেমিক হতে পারেনি।প্রশ্নাতীত আনুগত্যের পরেও সে পাশে নেই তার বিবাদে বিপদে।
নারী আর যোনি সমার্থক। তবু স্বামী সঙ্গে থেকে গেছিল সুমিতা। তবু প্রতিদিন নরক হয়ে গেছিল।
রোদ্দুর এপার থেকে ওপার।পশ্চিমপাড়ে এখন ঢাকের বাদ্যি।
সমাজের ভয়ে ছেড়ে যাওয়া স্বামী র জন্য সিঁদুর সমাজের জন্য একদিন রৌরব ভয় পায়।
পালাতে পালাতে কবেই যেন বর্তমান আর অতীত,স্বপ্ন আর বাস্তব গুলিয়ে যায় ক্রমাগত কল্পনায় ডুবে থাকতে থাকতে।
বিবাদ করে কিছু হয় না তাই বেরিয়ে পড়ে পথে।কাঁধে ঝোলা। অটোস্ট্যান্ডে নদী।একটা নৌকো। ছাইয়ের ভেতর গুটি সুটি বেড়াল ডাকছে তাকে।
-উঠুন ,কে যেন বলে
বেড়ালটা চোখ টিপে তাকাল হেসে।
কিন্তু নদীর জল পেরিয়ে উঠবে কী করে।
ছপছপ জল ভেঙে ওঠে। ভিজে যায় কোমর পাছা,যোনি।বেড়ালটা একটা বড় বাজ। ওরা যাচ্ছে রাক্ষসপুরীতে।
-দিদি টাকাটা দিন।
সুমিতা খেই হারিয়ে ফেলে।কিসের টাকা।
মনে মনে অনেকদিন পর কড়া নাড়ে দরজায় অনির্বানের। গ্যারেজে হাতে পায়ে মুখে কালি, ঘাম ভেজা সার্ট। ওইভাবে আলিঙ্গন গভীর আশ্লেষে ডুবে যায়।
কর্কশ কন্ঠস্বর বেজে ওঠে কলিঅং বেলের মত।
-সুমি তুমি টাকা দেবে কিনা।
হাতটা মুচড়ে দেয় পতিদেবতা।
-সারাদিন সেজে চাকরি করতে যাও টাকা চাইলেই না।
পেছনে একটা লাথি।
ঘসঘস করে আলু কাটতে গিয়ে আঙ্গুল দুফালা।
রক্ত থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত জমাট বাঁধে।ওরা ছোটো ছোটো লালমুখো শিশু হয়ে যায়। সুমিতা রক্ত পড়া দেখে।শিশু দেখে। অনেক শিশু।রক্তের বলগুলো বড় হচ্ছে।মরে যাচ্ছে ফেটে।
রক্তবীজের খেলা । চাতালজুড়ে রক্ত।
বাড়ি থেকে ঠিক দশপা যাবার পর শান্তনুর লাশটা কাটা কলাগাছ।তার ভাই। অমাবস্যার রাতে।মা শোকেই মরে গেল।বাবা কোথায় যেন চলে গেছিল। সোম বিয়ে করল তার চাকরি দেখে ,স্তন আর নিতম্ব দেখে।
শান্তনুরা কি যেন বদলাতে চেয়েছিল।সে ওসব মাথা ঘামায়নি।
পরিবর্তন হবে সমাজ হয়ত, হয়ত নয়।
তবে শান্তনুকে সে এখন প্রায় দেখে।
বিবাদ কোনো সমাধান নয়।
পাশে বসে আছে শান্তনু।পাশে। ওরা দেখতে পায় না। ওরা বুঝতে পারে না এটা নৌকো। নোয়ার নাও।সুমিতা এবং শান্তনু,সুমিত আর তার সবকটা স্বপ্ন ভাসছে জলের ওপর। পিচরাস্তায় পুলিশ। এখনো অল্প রক্ত।
তার স্বামী নিরুদ্দেশ সেই এক অমাবস্যা রাতেই।
চরম বিবাদের পর ভোর বেলা আর দেখা হয়নি।
অনির্বানের কাছে যায়। একটা অমন স্বপ্ন অথবা তার বাস্তব।
অনির্বান আসলে একা থাকে।
একটা গাছের ছাওয়া হয়ে যায় অনির্বান।
অনির্বান আসলে গরিব।একা
ভালোবাসে তাকে বেসুমার ভালোবাসে।মেট্রোতে পরের স্টেশন বলে দিচ্ছে, সবুজ আলো নিভছে, জ্বলছে। দ্বিতীয় স্বপ্নের মাঝে ওয়াটস্যাপ এ ভালোবাসা চিহ্ন।
একটা মেসেজ রৌরবের কবিতার।
গলায় লালচে দাগ একটি মেয়ে। কিসের দাগ জানে সে।রৌরব চলে গেলেও তার অনেক চিহ্ন রেখে যেত।
এসকালেটরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে সুমিতা।কী যেন… ।মনে পড়ছে না এখন কী করতে হবে। কোথায় যেন যাবার কথা।
দূর গ্রামের যে দিদি থাকত তার বর নুন মরিচ চুল।একা।ছবি আঁকে।ওর বাড়ি থাকে মাঝে মাঝে। অভিজিৎ দা কাঁদলে জড়িয়ে ধরে।চুমু খায়। আদর করে। রাত নামে।এটাও আরেক সুমিতার প্রেম।
এসব অন্তর্গত সব স্বপ্ন আর ভিড়, মৃত্যুর আতংক সব গন্ধমাদন মাথায় করে দাঁড়িয়ে আছে একা গোবর্ধন।
সব কিছু গুলিয়ে যায়।
চায়ের কাপ সামনে ঠাণ্ডা হয়। কেউ বলে খেয়ে নাও।
মনে পড়ে না বেরোবার রাস্তা। কুড়ি কুড়ি বছর পর প্রৌঢ় বলা যায় তবু এখনো আয়নার বয়স বাড়ে না।
কন্যা নিয়ে যায় ডাক্তারদের কাছে।
সুমিতা জানে বিবাদ করে কোনো সমাধান নেই।
কখনো দরজা খোলা রেখে চলে যায় এখানে সেখানে।আসলে তার একটা ভাবনা ছিল। ভরদুপুরে বাইরে থেকে ডাকছে তার মৃত ভাই। অথবা সে-ই জীবন্ত, সুমিতা মৃত। রাস্তা দিয়ে অনেক লড়ি, বাস।কেউবা ধরে ঘরে ফিরিয়ে দেয়।
সোম মারা গেছে। তাকে ওরা দেখতে দিলো না।দিলে রোজ রাতে এসে নির্যাতন করত না। সোম তার আহাম্মক স্বামী। রাতে আসে।মারে।
বেশ্যা বলে।বলবেই তো। আরো কারা যেন আসে।ছোটোবেলার মানুষেরা।সকলেই ডাকে।
ওষুধের কাজ নয়। সোডিয়াম পটাশিয়াম ফল করে যখন তেমন কিছু বোঝা যায় না কোন রাস্তায় কোন স্বপ্নটা বসে আছে ঘাপটি মেরে।
রৌরব চলে গেছিল।মানসিক ভারসাম্য নেই বলে তার।
একটা জঙ্গলে অনেক বড় বড় গাছ।
এক সন্ধ্যায় সেজে নেয় সুমিতা।বড় টিপ লাল শাড়ি। কোনো ভুল হয়নি।
–খিদে পেয়েছে
মেয়ে বলে তুমি তো এখনি খেলে।এটা বাস্তব নাকি সে যে অনেক কাল অভুক্ত এটা সত্য। মনে পড়ে না।
সোম স্বপ্ন নয়।সোম তাকে ছেড়ে গেছে। মরতে পারে না।সে বিশ্বাস করেনি মেয়ে জামাই এর কথা। তার সঙ্গে শেষবার কথা বাকি
বিবাদ কোনো সমাধান নয়।
অশত্থের ডালে পেঁচিয়ে নেয় লাল শাড়ি। এখন শুধু সায়া আর সবুজ ব্লাউজ জোনাকিরা মতো তার গায়ে লেপ্টে আছে।
আসলে আজকাল স্বপ্নগুলো নেই।তার অনেক বিশেষ প্রেম,আর মনে আসে না অনির্বান বা অভিজিৎ বা অন্য তারা,ওরা …
আসলে সোম মরে যায়নি।
আসলে সুমিতা বুঝেছে তার মাথাটা একটু গোলমাল হয়ে গেছে।
বিপদে আছে তাই মেয়ে।
অন্ধকারে গাছপালারা কথা বলে।সেও সেরে নেয় কিছু কথা বাদুড় পেঁচাদের সাথে।গরিব চাঁদ মিনমিন করে আকাশে।
এমনকি ওরা যারা রাতে আসে ,শান্তনুও ডাকাডাকি করে।
নপুংসক সোম চাঁদের আলোয় তাকায়। দূরদৃষ্টি র মত।
অনেক বেলা অবধি সুমিতা ঝুলছে নিথর,শান্তিতে,বরফ ঠাণ্ডা নারী।
ধীরে ধীরে সুমিতা বাস্তবিক লাশ হয়ে যায়।
“মানসিক ভারসাম্যহীন প্রৌঢ়ার আত্মহত্যা।”
স্কিজোফ্রেনিক সুমিতা মর্গে শুয়ে থাকে।মর্গে শান্তি।
মর্গের ইঁদুরেরা গায়ে ওঠে নামে।
সুমিতা এখন শুধু একটা নম্বর।
কারন সুমিতা জানত বিবাদ কোনো সমাধান নয়।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *