সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে ইন্দ্রাণী ঘোষ (পর্ব – ৩৪)

আরশি কথা

প্রায় শেষ রাতের দিকে ঝোরার ঘুম ভেঙে যায়. ঘুমটা তেমন আর দানা বাঁধে না. আকাশ আবছা লাল হতেই বিছানা ছাড়ে ঝোরা. প্রচন্ড ঠান্ডাকে জয় করে ,ফ্লাস্কের খানিকটা গরম জল দিয়ে মুখ ধুঁয়ে আসে. বাকি জলটা কাপে ঢেলে, তাতে টি ব্যাগ ফেলে জানলায় এসে দাঁড়ায়. আকাশে নরম নীল রং ধরছে. আবছা লালের আর নীলের সে এক অদ্ভুত যুগলবন্দী. ঝোরা জানলার পাশে টুলে বসে রঙের খেলা দেখতে থাকে. হঠাৎ চোখ পড়ে বাথরুমের সামনের ড্রেসিং স্পেসটাতে বিশাল বেলজিয়ান গ্লাসের আয়নার কাঁচে. পাহাড়ের ছায়া ওই আয়নাতেও পড়েছে. আয়নার সামনে গিয়ে বসে ঝোরা. আগের অভ্যেস বসত আয়নার কাঁচে আঙুল ছোঁয়ায়. অমনি হুড়মূড় করে ঝোরা ভিতরে ঢুকে পড়ে আয়নার. এও তার মানে মায়া আরশী.
আয়নার ভিতরের জগতে পাহাড়ের চূড়া থেকে চূড়াতে তখন আবীর মাখাচ্ছে কোন অদৃশ্য জাদুকর. গাছের পাতায় পাতায় শিশির আটকে রয়েছে. শিশিরের কণার ভিতর হাল্কা লাল,নীল,হলুদ বর্নালী । ঝোরা হাটতে থকে । চুলের কাঁটার বাঁকের রাস্তা ।রাস্তার পাশে খাঁড়া রাস্তা তার পাশে খাঁদ ।সন্তর্পণে পা ফেলে ঝোরা । প্রকৃতির সবুটুকু সৌন্দর্য শুষে নিতে নিতে হাঁটে ঝোরা । পাহাড়ী ফুলে ছেয়ে আছে উপত্যাকা , যেন রঙের মাতন ।হাটতে হাটতে এক ঝর্ণার সামনে এসে পড়ে ঝোরা। কুলকুল করে ঘুরে বেড়াচ্ছে রঙিন মাছেরা । এমন ঝর্না রিং চেং পং এ এসেও ঝোরা দেখেছে । ঝোরা বুঝতে পারছিল মায়া আরশীর ভিতরে যাবার পথের হদিশ ঝোরার সাথে সাথেই ঘোরে । এমন মায়ারাজ্যে ঝোরা যে হেঁটে চলে বেড়াতে পারে ,এ এক আশীর্বাদ । ঝোরা বিশেষ কাটাছেড়া করতে চায় না,এই অনুভুতিকে । আয়নার
জগত বারবার ঝোরাকে কিসের যেন ইঙ্গিত পাঠায় ।ঝর্নার খানিকটা পেছনে একটা খাঁড়া সিঁড়ি উঠে গেছে । ঝোরা কিছু না বুঝেই সিঁড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করে । সিঁড়ির দুপাশে ফুটে আছে থোকা থোকা হলদে প্রিমরোজ । সিঁড়ি বেয়ে উঠে ঝোরা দেখল এক বাড়ী । অনেক পুরোন বাড়ী । পাঁচিলে শ্যাওলা ধরেছে । অনেকদিনের পুরোন মরচে ধরা লোহার গেট । ঠেলতেই ক্যাঁচ শব্দ করে খুলে গেল। ভাঙা পাঁচিলে খোঁদাই করা আছে “উইস্পারিং উইন্ডস”। সামনে অযত্নের বাগান । বাগানের মাঝে এক পরীর মূর্তি । পরীর পিঠ থেকে এককালে ফোয়ারা বেড়োত বোঝাই যাচ্ছে । বাগানে হরেক রকম ফলের গাছ । পায়ে পায়ে বাড়ীর বিতরে ঢোকে ঝোরা । কাঠের মেঝে , পা ফেললে কাঠের মেঝে থেকে ক্যাঁচকোঁচ আওয়াজ ওঠে । বাড়ীর দেয়াল কাঠের । ।অসমান, করোগেটের ছাদ । লম্বালম্বি তিনটে ঘর পেড়িয়ে পেছনের বাগান । বাগানের মার্লবারির জঙ্গল । তাতে উড়ে বেড়চ্ছে রঙ বেরঙের প্রজাপতি ।

ক্রমশ…

Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!