সম্পাদকীয়

বরুন দেব এ বছর বেশি সদয় । আর বরুন দেবের কৃপায় পথে চলাফেরা করার সময় রক্তচাপ ঊর্ধ্বমুখী, মেজাজের পারদের থার্মোমিটার ভেঙে বেড়িয়ে যাবার জোগাড় । যাদবপুর থানার মোড় থেকে পায়ে হেঁটে রাস্তা পার হয়ে এইট বি র দিক থেকে আসতেও বেগ পেতে হচ্ছে । এই পথে যাঁরা যাতায়াত করেন তাঁরা জানেন এই স্যিগনালে জীবিকা অর্জনের জন্য কিছু মানুষ ভিক্ষা করেন । রোজ যাতায়াতের ফলে মুখ চেনা সকলের ।
সেদিন রাত নটা মত বাজে , রাস্তা গাড়ী দিয়ে ভর্তি , ছুঁচ গলারও জায়গা নেই, এদিকে ঝুম বৃষ্টি । সেদিন রাতে সেই ভিক্ষুক মানুষেরা কেউ নেই । হঠাৎ দেখি এক বৃষস্কন্দ, ছয় ফুটের উপর উচ্চতার মানুষ , পরনে কালো আলখাল্লা, কানে বিশাল দুল, ঠোঁটে চড়া লিপস্টিক দেওয়া । তিনি বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে গাড়ীগুলোর মাঝখান দিয়ে যেন প্রায় ভেসে ভেসে আসছেন। উনি যে কোথায় পা ফেলছিলেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না । আমি কোনমতে এ পাড়ে এসে দাঁড়িয়েছি । আমাদের দেশের বিপুল জনসংখ্যার কারনে পথচারীদের জন্য কোন আলাদা সিগনাল নেই । একদিকে গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে , অন্যদিকে গাড়ী আসতেই থাকে । ঝুঁকি নিয়েই পারাপার করতে হয় । তার উপরে অঝোর ধারা শ্রাবনের রাত । গাড়ীগুলো একটু একটু গড়াতে শুরু করেছে, আমি ছাতা সামলে দাঁড়াতে দাঁড়াতে দেখি সেই বৃষস্কন্দ মানুষ এক হ্যাঁচকা টানে এক বৃদ্ধকে এ পারে নিয়ে এলেন কাকভেজা হয়ে । চোখদুটোতে কি গভীর মায়া । আর তারপরই হনহন্ করে হাঁটতে থাকলেন ফুটপাথ ধরে । আমিও পিছুপিছু হাঁটতে শুরু করলাম , ব্রীজের কাছে অটোস্ট্যান্ডে এসে, সে মানুষকে আর দেখতে পেলাম না । অথচ সে মানুষ আমার এক ফুটের বেশি দূরে ছিলেন না ।
কে ছিলেন উনি? অর্ধনারীশ্বর ঈশ্বর ? শ্রাবন মাস চলছে যে । প্রশ্নটা সহজ নয়, উত্তর জানা নেই ।

ইন্দ্রাণী ঘোষ ।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *