কবিতায় হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় (গুচ্ছ কবিতা)

আধিভৌতিক
আধ্যাত্মিক ও আধিভৌতিক দ্বন্দ্বে ভরা অন্যমনস্ক
তোমার দুচোখ, টুপি খুলে আমি দেখেছি
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে নগ্ন শরীরে
শালুক শ্যাওলা তাই চেনে আমাকে
মেছোবক হয়ে কতদিন বসে থেকেছি তোমার চলনে
নুপূরের ধ্বনি শোনার অছিলায়, জলে স্থলে সর্বত্র
আমাদের শত্রু ,তোমাকে যে নামেই ডাকি না কেন আর সেই নামটি ধরেই বন্ধুরা মেঘের আড়ালে থেকে
উঁচিয়ে রাখবে ভল্ল তবু সব কিছু তুচ্ছ করে আমি এসেছি তোমার কাছেই অভিপ্রায়িক মিলনের আকাঙ্খায় ,দু একটি আকাশ এখন আমার সম্বল
দু একটি তারা …
তোমার আধ্যাত্মিক ও আধিভৌতিক দ্বন্দ্বে ভরা চোখের দিকে আমি তাকাতে পারিনা
এ সামর্থ্যহীনতা কি মায়াময় ?
আর কতদিন তীরধনুকের সামনে এমনি করে অর্থহীন আমি দাঁড়িয়ে থাকব
তুমি কি বলবে ?আমার এই খাবলাখাবলি আর
ভাল্লাগেনা. ..
ক্রমশ আমি কি ভালো হয়ে যাচ্ছি তবে ?
তুমি বলো,বলো তুমি তাহলে
…এ জীবন ল ইয়া আমি কি করিব …
মুক্তসময়
ভাবভালবাসা তুচ্ছ ছিল
সম্পর্কটা মুক্ত ছিল ,অনেকটা ঠিক
জন্ম জন্মান্তরের মতন ছিল
দিনকেদিন বদলে গেছে
টিভি চ্যানেল ফ্রিজ মোবাইলতো ছিলনা তখন
ফেসবুকে আর ইনস্টাগ্রামের কম্পিউটার ও ল্যাপটপটের পাস ওয়ার্ড কোথা য় ছিল ?
তবুও অগ্নিসাক্ষী ছিল,ছিল মনের মতন
ক্ষিতি অপ তেজ মরুৎ ছিল
চু কিত কিত খেলাও ছিল ,পুজো ছিল পুজোর মতন
গাজন ছিল আ্যমেচারের যাত্রা ছিল
হাসি হুল্লোড় রাসমঞ্চর অন্যতর জয়ের পাথর
আর কি ছিল পাড়ার খেলা
তোমার আমার মধ্যে ছিল ভালবাসার একখানি ঘর
এখন অনেক বড়ো হয়েছি আমরা সবাই
যত্ন করে ভেঙে দিচ্ছি এ ঘর ও ঘর
অনেক দিন পরে আবার দেখতে এলাম
সেসব ঠিক আগের মতন আছে কি নেই
মুক্ত সময় …….
স্বরগ্রাম
সম্পর্কের মৃত্যু হলে পড়ে থাকে ছাই ও অঙ্গার
একথা লেখার পর মনে হয়, আরো কিছু আঘাত অনিবার্য ছিল যা শব্দহীন স্বরে বেজে যায় চিরকাল
শক্র মিত্র পাড়াপড়শি আপনার …
সেই অঙ্গবিহীন অঙ্গার ঘেঁটে কে ই বা কবে তুলে এনে দেখিয়েছে হৃৎপিন্ডে বান্ধবনগর
এখনো উদাসীন উদ্ভিদের মৃত্যু হলে তারো রস রক্তে ভিজে যায় জ্যোৎস্নার বিষাদ ও বেদনার শব …
প্রতিটি জীবনের পিছনে থাকে বহুবিধ চিহ্নগুলি, অর্বাচীন দাহ, যদিও এমন ই আশ্চর্য স্পৃহা বুকে নিয়ে মানুষকে সচেতন হেঁটে যেতে হয় প্রতিদিন নদীর কিনারে যেখানে বড় মাছ ছোট মাছকে গিলে ফেলে অনায়াসে নারীর প্রেম শিশুর সারল্য
প্রকৃত বন্ধুদে্য টান সে বোঝেনি কখনো
কীভাবেইবা এ অপাংক্তেয় জীবন সে যাপন করে গেল, মোহে ভুলে ছিল এতকাল এ অব্যর্থ সরগ্রাম. ..
ধুলোয় মিশে থাকা চরিত্র
মোহ শব্দটির কথা মনে এলে আমি তার ভেতর দিয়ে
অনুপুঙ্খ উৎসর্গ দেখতে পাই
অথচ উৎসর্গ কথাটির একদিকে ভালবাসা
অন্যদিকে শ্রদ্ধাভাজন স্মৃতির সাহচর্য
স্মৃতি এক অবিশ্বাস্য ইষ্টিকুটুম পাখি,যদিও পাখি বিষয়ক কবিতা লিখতে গিয়ে দেখেছি তার নিজস্ব একটা ছবি আছে ছায়া আছে মনখারাপের দেয়াল আছে ,বহুদিন অব্যবহৃত দেয়াল গুলি জল খেতে খেতে যেমন একদিন ধুলো হয়ে যায়
সেই ধুলোয় মিশে থাকা চরিত্র গুলো কে যেন কখন স্বপ্নে এসে উঁকি মেরে যায় জানি না …
শুধু আমার মনের গভীরে যে পাথরের সনদ লুকানো আছে যার নাম পূর্বপুরুষগণ দিয়েছেন শালগ্রাম শিলা তাকে নিয়ে এখনো কোনো কবিতা লেখা হল না ….