সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব – ২৭)

সোনা ধানের সিঁড়ি

৫৭
ভোরে উঠতে আমার খুব ভালো লাগে। বিশেষ করে গরমকালের ভোর। ভোর মানেই একটা ঠাণ্ডার বাতাবরণ। একটা সুন্দর মিষ্টি হাওয়া। গরমকালের ভোরে ওই মিষ্টি হাওয়াটাই আরও মধুর হয়ে যায়। বেশিরভাগ মানুষই ওইসময় মাথার বা পায়ের জানলাটা খুলে দিয়ে পাশ ফিরে শোয়। আমি কিন্তু উঠে পড়ি। এর প্রধান কারণ, ওইসময় চারপাশটা খুব চুপচাপ থাকে। মনে হচ্ছে সবদিক থেকে সবাই আস্তে আস্তে ঘুম থেকে জেগে উঠছে। এটা মনে মনে ভেবে নিয়ে চারপাশটা দেখলে চোখের সামনে সবকিছুই খুব কাছের বলে মনে হয়।
ছোটবেলায় খুব ভোরে উঠেই পানপুকুরের পারে আমগাছতলায় ছুটতাম আম কুড়ানোর জন্যে। বেশিরভাগ দিনই আম পেতাম না কিন্তু তাতে বিরক্ত হতাম না। আসলে ভোরবেলা উঠে ভোরের ঠান্ডা হাওয়া গায়ে লাগিয়ে আমতলায় যাওয়াটাই আমার কাছে প্রধান ছিল। তাই আম পেলাম কি পেলাম না তাতে আমার কিছু যায় আসতো না।

৫৮

বর্ষায় বৃষ্টির দিনগুলোতে আমার মোটেই ভালো লাগত না। মনে মনে খুব একা হয়ে যেতাম। এইজীবনের ফেলে আসা সময়ের মানুষজনরা আমার ভাবনার পথ আঁকড়ে ধরে। কত কত কথা যে মনে পড়ে যায় —— অথচ আজ তারা কতদূরে। যে রোদ ছাড়া আমার একমুহূর্ত চলে না, সেই আকাশ আজ মেঘে ঢাকা। চাইতে পারি না আকাশের দিকে। মনে হয় আমি যেন তার গলা টিপে ধরেছি। সে ঠিক ঠিক ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছে না। এই অস্বস্তি তখন আমার মধ্যেও কাজ করে। কিছুই ভালো লাগে না তখন।
ছোটবেলায় বর্ষার সময় মাকে খুব জ্বালাতন করতাম। ঘুরতে ফিরতে মায়ের মুখের কাছে এসে বলতাম, ” কিচ্ছু ভালো লাগছে না।” এক একসময় মা খুব রেগে যেত। সকালবেলায় ঘুম থেকে ওঠার আগে মাকে জিজ্ঞাসা করতাম, ” মা রোদ উঠেছে ? ” মা ‘ না ‘ বললেই একরাশ মন খারাপ নিয়ে পাশ ফিরতাম।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।