• Uncategorized
  • 0

কবিতায় বলরুমে জি কে নাথ

অসুখ

অবিরল হিমশীতল বনজ সবুজ গন্ধের অন্ধকারে ফেরার পথ স্বাধীন প্রদেশের শেষভাগ
ভেদ করে এগিয়ে গেছে
নিস্তব্ধ উগাপ নদীর তটরেখায়
স্বাধীন বিংশ শতাব্দীর হাওয়ার দূরের মাঝে গর্তের ভিতর, একটু ঝুলে গড়িয়ে পড়ে প্রাচীন লতাগুল্ম
যথেষ্ট বননুড়ি তার ওপর বালির নকশা আঁকা উৎসের প্রান্তে ডুবে যায় শ্বেত হরিণের অভিযাত্রী দল
দেখা গেছে অজানা আবাহনে সন্ধে নামা বয়ে আনা অবশিষ্ট প্রস্তর রাশি
ধীরে বেস ক্যাম্পের দিকে নির্জন পাতার জঙ্গলে ক্ষুধার্ত ওপরের দিকে উঠে গেছে
ভেসে এলো সুতীব্র গর্জন, ছিন্ন সন্তান শির
নজর রেখেছে ওরা
জলের ছায়ায় গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছি
বিশাল আকারের মানবশৃঙ্খল খাঁজের ভিতর খাঁজে ছড়ানো হাড়গোড় , মাথার খুলি
বালুকাময় কিছুটা সমতল
খসখসে বয়ে চলা বাতাসের আকাশে লাল পাথরের নীচে ,দুপাশে গভীর নাম না জানা পাখির ডাকে ভাগ হয় দিকনির্ণয়
মাথার উপর ভাসে পিতল সূর্যাস্ত এর ধু ধু বহুদূরের কথা
দীর্ঘকায় কৃষ্ণাঙ্গ পুতুলরমণীর নৃত্যরত কাঠের বৃত্তের বাইরে আগুনভার নামছে ক্রমশ
উল্টে পড়ে আছে কিছু মরা কুঞ্চিত চামড়ায়
দুই হাতের কাছে মাটির ভিতর সারা শরীর লুকিয়ে শিকারে এক সোনালী রঙের মৃত্যুসৃপ
নিশ্চল অতি কৌশলের আবহাওয়ায় সারা গা ভাসিয়ে এক জায়গা থেকে গুটিয়ে ছায়া খুঁজে পেরিয়ে অন্যদিকে চলে গেছি
পথ অফুরান।
ক্রমশ নেমে এলো আগুন ঘিরে মাটির তৈরি খোলা নক্ষত্রের নীচে ক্ষুধা ও তৃষ্ণার চক্র
ভেঙে যেতে থাকে দিগন্ত অবধি বিস্তৃত রুক্ষ ঘুমে গাঢ় স্লিপিং পিলের শিশিরসিক্ত হাইকু
আরও অস্থিচর্মসার হাড়ের পাহাড় শুকনো সেটি এক পাহাড়ের সারি এবং কুয়াশা
নিরাপদ দূরত্ব রেখে পায়ের ছাপ রেখে চলে গেছে দিনের পিছনে
দূরত্ব বেড়ে প্রাচীরের মতো আধখানা মৃতদেহ পুড়িয়ে পড়ে আছে ঘাড়ভাঙা উত্তেজিত স্বরডোম
শোকের কোনো সীমান্ত থাকে না
আঁচড় কাটা অনুভূতির দেহমাটিঘাস , অশ্রুঘট ভেসে যেতে যেতে ছায়ায় এসে আঁকড়ে ধরে পথের শর্ত
সঞ্চয়ে চিত্রার্পিত নিজস্ব স্মৃতির শব্দ তুলে
কোনো পালক কিংবা বৃষ্টি আলোয় ফুরফুরে হাওয়ার মতো বিদ্যুৎ বিভ্রাট অন্ধকালো বিস্ময়ে ফুটে থাকে স্পষ্ট অভিরেখায় নির্নিত অজস্রবার বাঁক পেরোনো অনুষঙ্গে ভাবনার চাঁদ
তিলবর্ণ শুশ্রূষাহীন গায়ের রোদ নিয়ে মেঠোজোছনা অরণ্যের করতলের আকাশে উড়ন্ত সাপ নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে মানুষ দেখলে আজ ক্ষতগুলো শীর্ষ ছোঁয় ছুতোর হাতে
ম্লান হাততালির শব্দে ‘দহন’ কথাটি একসাথে দুই পাড় ভেঙে শরীর জড়িয়ে পড়ে আছে
পুরাতন খবরের কাগজের তালিকাভুক্ত শৈশব মুখে
গলিত তরল উষ্ণ বুকের বাম দিক ফুটো হয়ে দশ মাসের গর্ভকাশ স্তর ভেঙে নেমে এসেছে মধুআগুনের ভ্রমণবিলাসী শাখানদীগুচ্ছে
মাটিবনশরীর ছুঁয়ে আছে উপকথা তৈরির উজানে সিঁদুর চন্দন অশ্রুমালা
ভেসে যায় সন্ধ্যার থেকে দূরে হৃদয় নির্ভর আপাততুচ্ছ এক মোমশিখা গাছ
অজানা উপকথায় তৈরি অরব প্রানের রৌদ্রে শরীর জাগা নদীর শিলা জ্বলা
অপাপবৃত মুখে সমস্ত অধিগত হাহাকারে শেষবেলাকার মাঠ ছাড়িয়ে যাচ্ছে ডালিমদানার আয়ু
মায়াভরা বিষণ্নতায় সজল শনিচর মাঠের হিমঘাসে তিব্বতী পাহাড় কেটে আবছা স্বপ্নের মতো লুটিয়ে পড়ে শেকল খুলে ভাঙাচোরা নিঃশ্বাসে বাঁধা কুয়াশাঘর সংসার
বাষ্পীভূত অশ্রুপাড়ে সুদূরের ঘুড়ির মতো জেগে জেলেদের ট্রলারগুলো
পেট উল্টে দিকচক্রবালে
আমকাঠের অন্ধকারে, হা হা খোলা
লালন গান ছায়াগাঙে
একা গাই, নিজেকে সাজাই
অস্পট ছায়া উঠে আসে রোদতলে
মাটির দোতারায় মৃত সব মানুষের কাছে
ঘাসগাড়ি অশরীরী অপার্থিব বন
রাতের থাবায় এই পথ
জলবৎ বেজে অভ্যাস বেয়ে গড়িয়ে নিচ্ছে মাটিখেকো ডুরে মাছেদের অনন্ত ফাঁসির লতায়
দু হাতে ছানি এ বয়ে যাওয়া সময়ের মতো প্রবাহঅরণ্যের ধারা
তারপর শরীর ডোবা বিপন্নের চারিদিকে ক্ষুদ্র খন্ড রংধনু ভেসে উঠছে
টিনের বস্তিতে ছুটে গেছে ভুতলের স্বর্গ, টুকরো কান্না, অতৃপ্তি
বিষাদ স্পর্শে তুলে আনা জীবনের বিষজন্ম সমুদ্রনিবন্ধন
শোকনীল আত্মাহুতি মাটি শূন্য করে ছুটে আসা সমগ্র পোড়াই নিজেকে ,
আরও ঘন জমে ওঠে নিঝুম তারার গায়ে হলুদ অতিদীর্ঘ শূন্য অনিবার্য আদিম
সানান্য ঝুঁকে মায়ায় ভেসে যায় লুপ্ত পাখির পালক নামহীন স্বচ্ছ আলোর স্রোতে
বিষাদ বাহকের তৈজসপত্র ভেসে যায়
উড়ে এসে অনায়াস
স্থির মৃত বৃক্ষকলসের জলে
শ্মশানপোড়া নক্ষত্রের প্রেত বা অন্যজন্ম
রং চটা নাপিতের মাথা কামানো উড়ো চুল ফেলে দেওয়া ঝলসানো সারাদিন রোদকাগজের মতো বুনো শালে দীর্ঘ হতে থাকে দল বেঁধে নতমুখে কথাকলি
প্রেতকালী গর্ভে শুধু লিখে লিখে চলে গেছে হাওয়া ঢেঁকি
ভাটিয়ালি ধানের বজ্রস্তন ফেটে দুধেল সবুজ ঢালে নিভে আসে সকালের পচে ওঠা অজস্র হরিৎ পাতায় প্রখরহিম
হৃদয় পুড়ে যায় স্বপ্নের চিতায়
অনন্ত হাওয়ার দিনে ঘুরে ঘুরে হাঁড়িয়ার গন্ধে ভাসমান বোধের ভিতর থেকে একরাশ জোনাকিরা সরে যাচ্ছে আস্তে আস্তে ,
ক্রমশ এলোমেলো সংসার বলিরেখার ভেতর দেখি ঘনিয়ে আসা সন্ধ্যার ছুটির দিনগুলো কৃষ্ণ মাটিতে মিশেছে
ঘন নীল অন্ধকারে উদাসীন পাতাল ফোয়ারায় চৌকো জলের নিষাদের দিন
ত্রিভঙ্গ সেলুলার সংকেত
এসো আমার হৃদয়ে বাঁচো পৃথিবীর সব পিতৃপুরুষের শ্রাবণসমুদ্রবৃত্তান্ত
বাংলার আত্মভোজের দিন
জল রঙের সবুজ পাহাড়ি মাটির ফুলওয়ালি
এ আমার ইচ্ছেপত্র , মাটির কন্যা নিজস্ব ঘর
ঘোলাটে বাতাসের উড়ন্ত মেঘের অদূরে দেখি ঘন আবিরলাল এক ঝাপসা হিংস্র অভ্রমুখ কেবল একটু থমকে স্থির হয়ে আছে
দেশের গণবিপ্লব নামক এক জটিল চোখের অসুখের নিচু আকাশে ।।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।