• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক বড় গল্পে গৌতম বাড়ই (পর্ব – ১৯)

স্মৃতিকথার ঝিকিমিকিরা

(সব ফটো সৌজন্য: গৌতম বাড়ই)

হাতি মেরে সাথী কিংবা গব্বর সিং

বিনোদনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম সিনেমা। আবার সিনেমা বা চলচ্চিত্র হল পৃথিবীর সাহিত্য শিল্পকলা সৃজনশীল মাধ্যমের নবীনতম সদস্য আর মাধ্যম। পৃথিবীতে এসেই এই নবীনতম মাধ্যমের জয়জয়কার। অল্প কিছু সময়ের জন্য নির্বাক থেকেই তার সবাক যুগের শুরু। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সিনেমা মাধ্যমের যেমন অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে আর তেমনি জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। তোমরা ভয় পেয়োনা; আমি তোমাদের সিনেমা নিয়ে কোন রচনা কিংবা কিছু শেখাতে আসিনি। এখানে এসে হাল্কাচালে ছোটোবেলা সময়কার দু- চারটি স্মৃতির ঝাঁপি থেকে বের করে আনা গল্প বলি শুধু। সে আমার সবুজ কিশোরবেলাই মেখে থাকে বেশি।
এই বয়সটাই তোমাদেরও সারাজীবন বহন করে চলতে হবে। আমায় যদি কেউ বলে- টাইম মেশিনে চেপে এক লহমায় কোন সময়টায় ফিরে যেতে চাও? আমার ঝটপটতি উত্তর হবে — আমার সেই কিশোরবেলায়। তবে সেই বেলার সাথে সিনেমার যোগ কী? আছে, আছে, তারও অনেক কারণ আছে। সেই কিশোর বয়সে দেখা দু- চারটি সিনেমা এখনও মনে গেঁথে আছে।

এখনও মনে আছে একটি বেশ প্রচলিত ও জনপ্রিয় কথা ঐ সময়ের ছিল– কোথায় চললি? ও বই দেখতে? কী বই?
হ্যাঁ, চলচ্চিত্র বা ফিল্ম বা সিনেমা দেখতে যাওয়াকে তখন বই দেখতে যাওয়া বলা হত। পরে এর পেছনে কারণ খুঁজতে গিয়ে পেয়েছি– খুব নামকরা সাহিত্যিকদের লেখা গল্প বা উপন্যাস থেকে তখন চলচ্চিত্র বানানো হত, এই হল একমাত্র যুক্তিযুক্ত কারণ। অবাঙালিরা কিন্তু ফিল্ম বলত এটা খেয়াল করতাম। বিনোদনের তখন একমাত্র মাধ্যম ছিল এই সিনেমা। তো সেদিনের প্রথম স্মৃতিতে পাকাপাকি ভাবে লিখে রাখা একটি ফিল্ম ছিল ” হাতি মেরে সাথী”। কতই বা বয়স ঐ পাঁচ কিংবা ছয়। কী ভীষণ আনন্দ যে পেলাম। সেই রাজেশ খান্না বলে হিরো বেঁচে নেই আর ঝংকার বলে সিনেমা হলের  অস্তিত্ব নেই, তবে ঝংকার মোড় এখনও আছে শিলিগুড়িতে। একটু একটু বড় হচ্ছি আর জানতে পারছি এই মাধ্যমেও বাঙালি সারা বিশ্বে পরিচিত। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক প্রমুখেরা সেই বিখ্যাত সব চলচ্চিত্রকার। তারপর বড় হয়ে উঠেই একের পর এক দেখে গিয়েছিলাম এদের সব অবিস্মরণীয় মহান সৃষ্টিগুলো। ” পথের পাঁচালী” জলসাঘর, গুপী গাইন বাঘা বাইন, মেঘে ঢাকা তারা, একদিন প্রতিদিন ইত্যাদি ইত্যাদি।

তারপর একদিন আরও একটু বড় হয়ে উঠে ” শোলে” বলে সেই চিরকালের ভারতীয় সিনেমার এক অনন্য ইতিহাস সিনেমাটি দেখে চমকে উঠলাম। গব্বর সিং কে পর্দায় দেখে সত্যি যারপরনাই ভয় পেয়ে গেলাম। তাহলে একেই বলে সিনেমা! বয়স তখন এগারো হবে। এরও পরে ধরমবীর, হিন্দুস্তান কী কসম, আফ্রিকান সাফারি , চার্লি চ্যাপলিনের বিখ্যাত ছবিগুলি দেখছি। বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসব হচ্ছে। সেই যে ভালোবাসা তা এখনও অটুট এ বয়সেও, এখনও সময়  সুযোগ পেলে সেই ফিল্ম দেখতে বসি।

খুব খারাপ লাগে আর মনের ভেতর কষ্ট হয় যখন দেখি অনেক অনেক ফিল্ম দেখা সেইসব সিনেমা হাউসগুলি আস্তে আস্তে শহর থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। সেখানে মাল্টি- স্টোরিড, শপিংমলের বিস্তার ঘটছে। যেটুকু ছিল এই কোভিড প্যান্ডেমিকে সেটুকুও যে আর থাকবে না বুঝতে পারছি। তবে সিনেমা থাকবে এবং বহাল তবিয়তে সে অন্যধারায় বেঁচে। আজ তো হাতের মুঠোয় ধরে সিনেমা দেখি। তবে এর পেছনে যে করুণ রসটি বিসমিল্লাহ্ খানের সেনহাই- র সুরে সিনেমার আবহ সংগীতের মতন বেজে চলে তা হল, এই মুঠোতেই অনেক রোজগেরে লোকের আয় বন্ধ করেই। তবুও বেঁচে থাকুক সিনেমা, বেঁচে থাকুক সত্যজিৎ, গোদার, কুরোসাওয়া, মৃণাল কিংবা বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সিনেমা। জুরাসিক পার্ক কিংবা সাউন্ড অফ মিউজিক- এর আনন্দ না পেলে তো হারিয়ে যাবে বিনোদনের হাজার মজা!
কানে- কানে চুপিচুপি বলি– আমি কিন্তু অমিতাভ বচ্চনের বিরাট ফ্যান বা ভক্ত। মাত্র আর এগারোটি ফিল্ম দেখা ওনার বাকি আছে। আমাদের গুরুজনরা ফিল্মের নাম শুনলেই যে রে! রে! করে তেড়ে আসত। আর এখন আমরা ছোট- ছোট বাচ্চাদেরও কী অবলীলায় দেখতে দেই টিভির ফিল্ম! সময়ের চোখও কত পাল্টে যায়, তাই ভাবি।

আর নয় আবার
সামনের শনিবার —

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।