সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে দেবদাস কুন্ডু (পর্ব – ২১)

লড়াইয়ের মিছিল

পর্ব – ২১

চন্দ্রা তুই আমার ঠিকানা পেলি কোথায়?
সুদর্শন চন্দ্রার দিকে তাকালো।এই কি সেই চন্দ্রা? যায় মুখ ছিল হিন্দি ছবির নায়িকাদের মতো সুন্দরী । চোখ দুটো ছিল টানা টানা। যামিনী রায়ের ছবির মতো।যার মুখে সব সময় লেগে থাকতো শরৎতের রোদ্দুর। যায় কোমর পর্যন্ত ছুঁয়ে থাকতো এক ঢাল মেঘের মতো কেশ।এ কোন চন্দ্রা? চোখের নিচে গাঢ় অন্ধকার। ঠোঁটের চামড়া কোচকানো। চুলের স্বল্পতা বয়সকে দিগুন করেছে।
কাগজে তোর একটা ইন্টারভিউ পড়লাম। চন্দ্রা বলল।
ওটা বিজ্ঞাপন। বীমার জগতে আমরা ইষটান জোনে কতটা সাকসেস পেয়েছি তার একটি খতিয়ান দিযে আলোচনা ছিল।
চেম্বার টা দারুন করেছিস।একটা ন্যাচারাল লুক রয়েছে।
কংক্রিটের সহরে থাকি তো তাই অফিস টাইমটা নেচারের মধ্যে থাকতে ভালো লাগে।আউট অফ স্টেট হওয়া যায়।
তা বেশ।
তোর খবর কি সেটা বল? সুদর্শন বলল।
আমার আবার কি খবর থাকতে পারে?
এখন লেখালেখি করছিস?
হ্যাঁ।তাই করছি।
আর কি করছিস?
এই যে বললাম লেখালেখি করছি।এটা কোন কাজ নয়?
না।মানে আমরা এখনো এটাকে কাজ হিসেবে দেখিনা।আমরা মানুষের পরিচয় চাই তাঁর কাজ দিয়ে।
হ্যাঁ। আমি তো লেখার কাজ করি। একজন লেখক।এটা কি আমার পরিচয় নয়?
না।তা হবে না কেন? তুই তো কলেজ লাইফ থেকে লিখছিস। কিন্তু
কিন্তু তোর লেখা দেখি না কোথাও।তাই তো জানতে চাইছিস?
না মানে
হেরিটেজ করছিস কেন? সত্যি তো আমার লেখা কোথাও ছাপা হয় না। চন্দ্রা বলল।
তুই কোথাও লেখা পাঠাস না?
পাঠাই তো। ছাপা হয় না কি করবো বল?একটা খবরের কাগজ রবিবার বিঞ্জাপন দেয় দের হাজার শব্দের মধ্যে গল্প পাঠান।
তাই সেখানে লেখা পাঠা।
পাঠিয়ছি পাঁচ টা গল্প। একটাও মনোনীত হয় নি।
কেন? তুই তো ভালো লিখিস।
ওদের ভালো লাগা চাই।
কিন্তু কলেজ লাইফে একটা বড় কাগজে তোর একটা গল্প ছাপা হয়েছিল না?
হ্যাঁ।হয়েছিল তো।তখন সম্পাদক ছিলেন একজন বিখ্যাত লেখক।এখন কারা সব গল্প দেখে কে জানে। গল্প দিয়ে এক বছর অপেক্ষা করতে হবে।
এক বছর! বলিস কি!
হ্যাঁ।অবশ্য ভালো লাগলে ওরা আগেই জানিয়ে দেবে।তবে এমনো হয়েছে এক বছরের মধ্যে একজন লেখকের দুটো গল্প ছাপা হয়েছে।
তাই কি করে হয়?
শুনেছি তার বাবা বড় লেখক।
লেখকের ছেলেরা এডভানটেজ নিচ্ছে বলতে চাইছিস? দেখ সব জায়গায় এটা আছে।থাকবে।এর মধ্যে তোকে লড়ে যেতে হবে। সুদর্শন বলল।
হ্যাঁ। লড়াই তো করছি।কারন আমার বাবা লেখক ছিলেন না।একজন শ্রমিক ছিলেন। শ্রমিকের মেয়ে লেখক হতে চাইলে তাকে তো লড়াই করতে হবেই।
হ্যাঁ।আমি সেটাই বলতে চাইছি।
আমিও চাইছি দুটো কেন তিনটে লেখা ছাপুক । আমার আপত্তি নেই। কিন্তু লেখা তো ভালো হতে হবে।তাই না?
অবশ্যই।আমি খুব একটা গল্প পড়ি না। আমার বৌ পড়ে।মাঝে মাঝে ও বলে কি সব গল্প যে ছাপে না, এতটুকু ভালো লাগে না।আমি বলি তাহলে পড় কেন?ও বলে অভ্যাস।কখনো কখনো ভালো গল্প বের হয়।
ভালো লেখা না পেয়ে তো পাঠক সাহিত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।এখন কোন লোক গল্প পড়ে বলতো?
কি ভি সিরিয়াল তো সর্বনাশ করে দিল। আমার মা তো সন্ধ্যা হলেই টিভির সামনে বসে পডবে। আগে বহ পড়তো।
দেখ টিভি মোবাইল এসব দোষ দিয়ে লাভ নেই। ভালো লেখার অভাব দেখা গেছে।
চিরকাল ভালো জিনিসের অভাব রয়েছে।
তোর কথা মানতে পারলাম না। চন্দ্রা বলল
ভুরি ভুরি ভালো লেখা হয়েছে বাংলা সাহিত্যে।
এখন হচ্ছে না কেন? সুদর্শন বলল।
কে বলল হচ্ছে না? সম্পাদকরা আর আগের মতো পরিশ্রম দেন না।
কথাটা তুই ভুল বলিস নি।সবাই একটা ফাঁকি দিয়ে নাম কিনতে চাইছে।
চন্দ্রা বলল, কিন্তু এরা থাকবে না।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।